Heatwaves Death

তীব্র গরমে রাজ্যে মৃত্যু দুই জনের

রাজ্য জেলা

প্রবল দাবদাহে দুটি মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটানা ঘটেছে উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গে। এই গরমে রিলস বানাতে গিয়ে মৃত্যু হল এক কিশোরীর। দক্ষিণ ২৪ পরগনার সোনারপুরের রাধাগোবিন্দ পল্লির এলাকার ঘটনা। মৃত কিশোরীর নাম আলপনা মণ্ডল (১৩)।  জানা গিয়েছে,  রোদের মধ্যে রিলস বানানোর সময় আচমকা মাথা ঘুরে পড়ে যায়।  তাকে উদ্ধার করে সোনারপুর গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
ঘটনার খবর পেয়ে সোনারপুর থানার পুলিশ হাসাপাতালে পৌছে দেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠিয়ে দেয়। অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করেছে পুলিশ।
উত্তরবঙ্গে গরমে প্রাণ হারালেন এক যুবক। মৃতের নাম তাপস হাজরা(৩৬)। লাটাগুড়ি গোলাবাড়ীর বাসিন্দা। পেশায় গাড়ি চালক। বুধবার প্রচন্ড দাবাদহের মধ্যে  বাজার করতে গিয়ে আচমকা মাথা ঘুরে পড়ে যান। দ্রুত তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় মালবাজার সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, সান ষ্ট্রোকে তাপস হাজরার মৃত্যু হয়েছে। মৃত তাপস হাজরার স্ত্রী রাখী হাজরাও দাবি করেছেন তাঁর স্বামীর সান ষ্ট্রোকেই মৃত্যু হয়েছে। যদিও চিকিৎসকরা জানিয়েছেন সান ষ্ট্রোকে না অন্য কারণে মৃত্যু সেই বিষয়ে জানা যাবে ময়নাতদন্তের পরেই।  
এপ্রিলের শেষে তাপমাত্রা ছাড়িয়েছে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা স্বাভাবিকের থেকে অনেকটাই বেশি। দিনের রোদের সঙ্গে পাল্লা দিতে গিয়ে জীবন বেরিয়ে যাচ্ছে। রাতের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা সে অর্থে নামছে না। সব মিলিয়ে বিষম পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছেন রাজ্যবাসী। সপ্তাহ ধরে এমন তাপপ্রবাহ চলতে থাকার ঘটনা আগে এরাজ্য দেখে নি। এই অবস্থা থেকে কবে মুক্তি মিলবে সেটাও বলা যাচ্ছে না। 
এই গরম থেকে খুব দ্রত মুক্তি মিলবে না বলে জানাচ্ছেন আবহাওয়াবিদরা। তাঁরা বলছেন,  জলবায়ুর পরিবর্তন ঘটে গিয়েছে। বিশ্ব জুড়ে আগেই জলবায়ুর ক্ষেত্রেই এই পরিবর্তন হয়েছে। সব মিলিয়ে তাই এখন ভূতাপের বৃদ্ধি একেবারে স্বাভাবিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে। গ্রীষ্মে যেমন গরম,  তেমনই একইভাবে শীতে ভীষণ ঠান্ডা পড়তে থাকবে।
এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড ওয়াইল্ডলাইফ সোসাইটি জানাচ্ছে, পরিবেশের ভারসাম্য নষ্টের জেরে এখন তাপপ্রবাহ দেখা গেলেও এখানেই কিন্তু শেষ নয়। অসহনীয় গরমের সঙ্গেই ঘূর্ণিঝড়, ভূমিকম্প, জলোচ্ছ্বাস, এমনকী বৃষ্টি সবই অতিরিক্ত হতে থাকবে। গরম সামলাতে যেমন এখন ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা, তেমনই একের পর এক পরিবেশের অনেক অঘটনের সাক্ষীও হতে থাকবে বাংলা।
বৃহস্পতিবার আলিপুর হাওয়া অফিস পূর্বাভাস দিয়েছে,  সোমবার পর্যন্ত এমনই অস্বস্তিকর আবহাওয়া বজায় থাকবে। ১১ জেলায় তাপপ্রবাহের সতর্কতা জারি করা হয়েছে। কয়েকটি জেলায় লাল সতর্কতা জারি করা হয়েছে। হাওয়া অফিসের বার্তা অনুয়ায়ী, আপাতত দক্ষিণবঙ্গে বৃষ্টির তেমন সম্ভাবনা নেই। উত্তরবঙ্গের দুই জেলাতেও তীব্র তাপপ্রবাহ হতে পারে। বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে দার্জিলিঙে। হাওয়া অফিস জানিয়েছে,  সোমবার পর্যন্ত কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলিতে তাপপ্রবাহের পরিস্থিতি বজায় থাকবে। তাপপ্রবাহ চলবে দুই মেদিনীপুর, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, ঝাড়গ্রাম,  বাঁকুড়া , হাওড়া, হুগলি, দুই বর্ধমানে। দুই মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম,  বাঁকুড়া , পশ্চিম বর্ধমানে লাল সতর্কতা জারি করা হয়েছে। কলকাতা-সহ বাকি জেলায় লু বইবে। মালদা, উত্তর দিনাজপুরেও তীব্র তাপপ্রবাহ বইতে পারে। ওই দুই জেলাতেও লাল সতর্কতা জারি করা হয়েছে।   অস্বস্তিকর আবহাওয়া থাকবে কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়িতে।
আগামী ৩ দিনে দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলিতে তাপমাত্রা ১-৩ ডিগ্রি করে বাড়বে। উত্তরবঙ্গের জেলাগুলিতেও তাপমাত্রা বাড়বে। 
আগামী ৩ দিনে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ১-৩ ডিগ্রি করে বাড়বে। শুষ্ক আবহাওয়া বজায় থাকবে। হাওয়া অফিস জানিয়েছে, বুধবার কলকাতার  সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছুঁয়েছিল ৪০.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। যা স্বাভাবিকের থেকে ৫ ডিগ্রি বেশি। বৃহস্পতিবার শহরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা থাকতে পারে ৪১ ডিগ্রির কাছে। 
রবিবার দার্জিলিঙের কোথাও কোথাও বজ্রবিদ্যুৎ-সহ বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। বাকি জেলায় আপাতত বৃষ্টির কোনও সম্ভাবনা নেই।  
শনিবার থেকে সোমবার পর্যন্ত দক্ষিণবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পূর্ব মেদিনীপুর, হাওড়া, কলকাতা,  হুগলি, ঝাড়গ্রাম, পশ্চিম মেদিনীপুর, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, পশ্চিম বর্ধমান, পূর্ব বর্ধমান, বীরভূম, মুর্শিদাবাদ এবং নদিয়ায় কমলা সতর্কতা জারি করা হয়েছে। শুধুমাত্র শুক্রবার পূর্ব মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, পশ্চিম মেদিনীপুর, বাঁকুড়া এবং পশ্চিম বর্ধমানে লাল সতর্কতা জারি করা ঝবএছে। বাকি ৯টি জেলায় কমলা সতর্কতা জারি করা হয়েছে।

Comments :0

Login to leave a comment