Isro

ভোর হয়েছে চাঁদে, ঘুম ভাঙবে কি বিক্রম-প্রজ্ঞানের?

জাতীয়

চোদ্দ দিনের রাত্রি-পর্ব শেষে আলোর উদয় চাঁদে। বুধবারই ভোরের আলোর ফুটতে শুরু করেছে চাঁদের বুকে। আর ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গেই আশার আলো দেখছেন ইসরোর বিজ্ঞানীরা। নতুন করে যোগাযোগ স্থাপনের চেষ্টা করছেন বিক্রম-প্রজ্ঞানের সঙ্গে। এখন প্রশ্ন একটাই, এবার কি তবে ঘুম ভেঙে জেগে উঠবে তারা? আবার চালিয়ে যেতে বৈজ্ঞানিক গবেষণার কাজ? 
যদি যোগাযোগ স্থাপনে সফল হয় ইসরো, তাহলে চন্দ্রপৃষ্ঠে আরও কয়েকদিন পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাতে পারবে ল্যান্ডার ও রোভার। আর সেই পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে যে তথ্য পাওয়া যাবে, সেটাকে বোনাস হিসাবেই দেখছেন বিজ্ঞানীরা।
চাঁদে বুধবারই সূর্যোদয় হয়েছে। তবে সঙ্গে সঙ্গে বিক্রম বা প্রজ্ঞানকে জাগানো সম্ভব নয়। গত ১৫ দিন ধরে যে চরম শীতল আবহাওয়ায় যন্ত্রগুলি অকেজো হয়ে পড়েছিল, তা কাটিয়ে ওঠার জন্য তাপের প্রয়োজন। ইসরো আগেই জানিয়েছে, স্লিপ মোড থেকে এবার ওদের ঘুম ভাঙানোর সময় এসেছে। সূর্যের আলো পেলে ফের সক্রিয় হবে বিক্রম-প্রজ্ঞানের সোলার প্যানেল। আবারও হয়তো তাদের প্রাণের সঞ্চার হবে। পৃথিবী থেকে ইসরোর ডাকে সাড়াও দেবে তারা। এব্যাপারে যথেষ্টই  আশাবাদী ইসরোর বিজ্ঞানীরা।
ইসরোর স্পেস অ্যাপ্লিকেশনস সেন্টারের অধিকর্তা নীলেশ দেশাই জানিয়েছেন, আমরা ল্যান্ডার ও রোভারকে ঘুম পাড়িয়ে দিয়েছিলাম, কারণ চাঁদে রাতের বেলায় তাপমাত্রা হিমাঙ্কের ১২০ ডিগ্রি থেকে ২০০ ডিগ্রি নিচে নেমে যেতে পারে। ২০ সেপ্টেম্বর থেকে চাঁদে সূর্যোদয়ের প্রক্রিয়া চলছে। আমরা আশা করছি যে ২২ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সোলার প্যানেল এবং অন্যান্য জিনিসপত্রের সম্পূর্ণ চার্জ হয়ে যাবে। সেইমতো আমরা বিক্রম আর প্রজ্ঞানকে জাগিয়ে তোলার চেষ্টা করব।
দেশাই আরও জানান, ‘যদি আমাদের ভাগ্য ভালো থাকে, তাহলে ল্যান্ডার আর রোভারকে জাগিয়ে তুলতে পারব আমরা। তাহলে আমরা আরও তথ্য পাব। যা চন্দ্রপৃষ্ঠ নিয়ে গবেষণা চালানোর ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হবে। ২২ সেপ্টেম্বর থেকে কী কী হয়, তার জন্য আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি।’’ অনিশ্চয়তার কাছে ‘অসহায়’ এই বিজ্ঞানীর কথায়, আমরা আশা করছি যে ল্যান্ডার-রোভারকে জাগিয়ে তোলার ক্ষেত্রে আবার যথেষ্টই ভাগ্যবান হব।’
এমনিতে চন্দ্রযান ৩-র উৎক্ষেপণের সময় ইসরোর তরফে জানানো হয়েছিল যে চাঁদে ১৪ দিন (চাঁদের একদিন) ‘প্রাণ’ থাকবে ল্যান্ডার ও রোভারের। সেকারণে গত ২৩ আগস্ট চাঁদে অবতরণের পরপর পরীক্ষা চালানো হয়েছে। চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অন্ধকার নামা এবং প্রবল ঠান্ডা পড়ার আগেই পরিকল্পনা মতো যাবতীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা সেরে ফেলা হয়। তারপর ‘ঘুম’ পাড়িয়ে দেওয়া হয় বিক্রম ও প্রজ্ঞানকে। গত ২ সেপ্টেম্বর রোভার প্রজ্ঞানকে ‘ঘুম’ পাড়িয়ে দেয় ভারতীয় মহাকাশ সংস্থা ইসরো। দু’দিন পরে ল্যান্ডার বিক্রমকে ‘ঘুম’ পাড়ানো হয়। সেইসময় ইসরোর তরফে জানানো হয়েছিল, যদি চাঁদে পরবর্তী সূর্যোদয়ের পরে ল্যান্ডার-রোভারের ঘুম না ভাঙে, তাহলে তা চিরকালের মতো চন্দ্রপৃষ্ঠে ভারতের দূত হয়ে থেকে যাবে।
চন্দ্রযান-৩ প্রত্যাশার থেকে বেশি কাজ করেছে চাঁদের বুকে। মূল পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাজ শেষ হয়ে যাওয়ার পর ইসরো সিদ্ধান্ত নেয় ল্যান্ডার ও রোভারের আয়ু হয়তো বাড়ানো যেতে পারে। তাই চাঁদের বুকে সমস্ত যন্ত্রের ক্রিয়াকলাপ বন্ধ করে দেয় এবং সেগুলিকে স্লিপ মোডে রেখে দেওয়া হয়। স্লিপ মোডের আগে ব্যাটারিগুলি ফুল চার্জ অবস্থায় ছিল। যেহেতু চার্জড আপ অবস্থাতেই স্লিপ মোডে পাঠানো হয়েছে চন্দ্রযান-৩-কে, তাই রাতের কঠিন ঠান্ডাতেও নিজেদের কিছুটা হলেও গরম রাখতে পারবে যন্ত্রগুলি, এমনটাই আশা করছেন বিজ্ঞানীরা।
ল্যান্ডার মডিউলটিকে ঘুম পাড়ানোর ঠিক আগে একটি ‘হপ এক্সপেরিমেন্ট’ করা হয়েছিল। তার মাধমে ল্যান্ডারটি চাঁদের বুকে দ্বিতীয়বার অবতরণ করে। চন্দ্রপৃষ্ঠ থেকে লাফ দিয়ে প্রায় ৪০ সেমি উঠে এটি নিরাপদে ৩০ থেকে ৪০ সেমি দূরে অবতরণ করেছিল। এই পরীক্ষায় সাফল্যের সুদূরপ্রসারী তাৎপর্য রয়েছে বলে জানিয়েছিল ইসরো। সেই হপ টেস্টের সাফল্যেই লুকিয়ে রয়েছে চাঁদের বুকে বিক্রম-প্রজ্ঞানের ঘুম থেকে গা ঝাড়া দিয়ে ওঠার সম্ভাবনা। সেই আশাতেই এখন বুক বেঁধে রয়েছেন ইসরোর বিজ্ঞানীরা— যদি ওদের ঘুম ভাঙে!
 

Comments :0

Login to leave a comment