Karamandal rail accident

তিন ট্রেনের দুর্ঘটনায় মৃত শতাধিক

জাতীয়

ওডিশার বালেশ্বরের কাছে এক ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনায় শতাধিক জনের মৃত্যু হয়েছ। জখম হয়েছেন ৩৫০ জনেরও বেশি। বহু যাত্রী শুক্রবার রাত পর্যন্ত বগির মধ্যে আটকে আছেন। ফলে হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলেই ধারণা করা হচ্ছে। রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ দুর্ঘটনাটি ঘটে বাহানাগা বাজারের কাছে। প্রথমে চেন্নাইগামী করমণ্ডল এক্সপ্রসের ১০-১২টি বগি লাইনচ্যুত হয়ে পড়ে। তখনই উলটোদিক থেকে আসা হাওড়াগামী যশবন্তপুর এক্সপ্রেস সোজা এসে ধাক্কা মারে লাইনে পড়ে থাকা করমণ্ডল এক্সপ্রেসের বগিগুলিতে। প্রবল ধাক্কায় যশবন্তপুর এক্সপ্রেসেরও ৫-৬টি বগি বেলাইন হয়ে পড়ে। এর ফলে দুর্ঘটনার মাত্রা ভয়ানক আকার নেয়। রেলের উদ্ধারকারী দল ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে। রয়েছে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী। উদ্ধারে হাত লাগিয়েছেন আশপাশের গ্রামবাসীরাও।
জানা গিয়েছে, শালিমার থেকে এদিন দুপুর দুটো নাগাদ করমণ্ডল এক্সপ্রেস ছেড়ে বালেশ্বর পৌঁছায় সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা নাগাদ। এরপরেই বাহানাগাবাজার স্টেশনের কাছে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে ট্রেনটি। রেলের একটি সূত্রে বলা হয়, একটি মালগাড়িতে ধাক্কা মেরে লাইনচ্যুত হয় করমণ্ডল এক্সপ্রেস। পরে আরেকটি ভাষ্যও উঠে আসে। বলা হয়, করমণ্ডল এক্সপ্রেসের ১০-১২টি বগি বেলাইন হয়ে পাশের ডাউন লাইনে পড়ে যায়। তখনই যশবন্তপুর এক্সপ্রেস ধাক্কা মারে পড়ে থাকা বগিগুলিতে। ঘটনাস্থলে ৬০টির বেশি অ্যাম্বুলেন্স হতাহতদের নিয়ে কাছের সোরো, খন্তাপাড়া এবং বালেশ্বর হাসপাতালে নিয়ে যায়। রেলের তরফে মৃতের সংখ্যা প্রাথমিকভাবে ৫০ জানানো হলেও বেসরকারি সূত্রে অন্ততপক্ষে ১৩০ জন প্রাণ হারিয়েছেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ঘটনাস্থলে ওডিশা বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর পাশাপাশি এনডিআরএফ-ও উদ্ধারের কাজে হাত লাগায়। বগিগুলি দুমড়ে মুচড়ে এমন আকার নেয় যে ভেতর থেকে নিহত, আহতদের বের করে আনাই কষ্টকর হয়ে পড়ে। অন্ধকার নেমে আসায় উদ্ধারের কাজ আরো কঠিন হয়ে পড়েছে। রয়েছে রেলের উদ্ধারকারী দল। দক্ষিণ-পূর্ব রেলের খড়গপুর ডিভিসনের অধীনে বলে ওখানকার আধিকারিকরা দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধারের কাজে তদারকি শুরু করেন বলে জানা গিয়েছে। আহতদের হাসপাতালে নিয়ে আসার জন্য অ্যাম্বুলেন্সের পাশাপাশি বাসও ব্যবহার করা হচ্ছে। রয়েছে বায়ুসেনা বাহিনীও। স্থানীয়রাও উদ্ধারের কাজে অপরিসীম সাহায্য করছেন বলে জানা গিয়েছে। তবে হাসপাতালে চিকিৎসক এবং নার্সের অভাব রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এই বিপুল পরিমাণ আহতদের চিকিৎসার মতো পরিকাঠামো সোরো কিংবা খন্তাপাড়া উপ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নেই বলে জানা গিয়েছে। ফলে সমস্ত চাপ এসে পড়েছে বালেশ্বর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে।
সিগন্যালে ত্রুটি না কি চালকের ভুল— কীসের জেরে এত যাত্রী নিয়ে দুর্ঘটনার কবলে পড়ল করমণ্ডল এক্সপ্রেস, তা জানার চেষ্টা চলছে। করমণ্ডল এক্সপ্রেসের ইঞ্জিনের পর থেকে স্লিপার ক্লাস, প্যান্ট্রি কার সহ একাধিক বগি বেলাইন হয়ে গিয়েছে।
করমণ্ডল এক্সপ্রেসে করে মূলত ভেলোরে চিকিৎসা করাতে যান পশ্চিমবঙ্গ সহ ওডিশার বহু মানুষ। ট্রেনটি হাওড়ার শালিমার স্টেশন থেকে ছাড়ে। দুর্ঘটনাটি যেহেতু বালেশ্বরের পরেই হয়েছে ফলে মনে করা হচ্ছে হতাহতদের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের মানুষই বেশি আছেন। এই ট্রেনে রাজ্যেরও বহু মানুষ থাকেন। এদিনও তার ব্যতিক্রম ছিল না। এই করমণ্ডল এক্সপ্রেসে করে রাজ্যের বহু মানুষ ভেলোরে চিকিৎসার জন্য যাচ্ছিলেন। শিশু সহ প্রচুর বয়স্ক মানুষ ট্রেনে ছিলেন বলে জানা গিয়েছে। ইতিমধ্যে ট্রেনের নিচে থেকে বহু বয়স্ক রোগীকে উদ্ধার করা হয়েছে এবং এখনও বহু মানুষ বগির নিচে চাপা পড়ে রয়েছেন বলে জানা যাচ্ছে। তবে শুধু রোগীই নন, পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর, হাওড়া থেকে বহু পরিযায়ী শ্রমিকও করমণ্ডল এক্সপ্রেস চড়ে ভিন রাজ্যে কাজে যান। এদিনও বহু শ্রমিক ছিলেন ট্রেনে বলে জানা গিয়েছে। পশ্চিম মেদিনীপুর থেকেও দুর্ঘটনাস্থলে অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে চলে এসেছেন বহু মানুষ তাঁর নিকটজনকে নিয়ে যাওয়ার জন্য। গিয়েছে শববাহী গাড়িও।
ঘটনাস্থলেও সারি বেঁধে পড়ে রয়েছেন মৃতরা। একজনের ওপর আরেকজন। ভয়াবহ সেই দৃশ্য। এমন দৃশ্যও দেখা গিয়েছে যে, মৃত পরিজনের সামনে বসে কাঁদছেন দুর্ঘটনায় কোনোক্রমে বেঁচে যাওয়া নিকট কেউ। কিংবা বন্ধুর জন্য হন্যে হয়ে খুঁজছেন আরেক বন্ধু। যদি জীবিত অবস্থায় পাওয়া যায় সন্ধান! দুর্ঘটনাগ্রস্ত কয়েকটি কামরা ভেঙে দু’-তিন টুকরো হয়ে গিয়েছে। আবার উলটে রয়েছে বেশ কয়েকটি কামরা। হতাহতদের অধিকাংশই করমণ্ডল এক্সপ্রেসের বলেই প্রাথমিকভাবে জানা গিয়েছে।
দুর্ঘটনার পরেই ওডিশা এবং পশ্চিমবঙ্গ সরকার হতাহত এবং জীবিত যাত্রীদের খোঁজখবর দেওয়ার জন্য হেল্পলাইন চালু করেছে। এমনিতে দক্ষিণ-পূর্ব রেলের হেল্পলাইন থেকেও খবর দেওয়া হচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির নির্দেশে একটি দল ঘটনাস্থলের দিকে রওনা দিয়েছে। অন্যদিকে, ওডিশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়েক শনিবার সকালে ঘটনাস্থলে যাবেন বলে জানিয়েছেন। তিনি স্পেশাল রিলিফ কমিশনের কন্ট্রোল রুমে বসে তদারকি করছেন। রয়েছে ওডিশার সরকারের দমকল সহ বিভিন্ন বাহিনীর লোকজন। এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত জানা গিয়েছে, দুর্ঘটনাস্থলের দিকে দিল্লি থেকে রওনা দিয়েছেন রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব।তিনি নিজেই ওডিশার লোক। তিনি অবশ্য আগেই দুর্ঘটনায় নিহতদের পরিবারের জন্য ১০ লক্ষ এবং গুরুতর জখমদের জন্য ২ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন। টুইট করে গোটা ঘটনায় গভীর দুঃখপ্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু।
এই দুর্ঘটনার কারণে হাওড়া থেকে দক্ষিণ ভারতমুখী বহু ট্রেন বাতিল করা হয়েছে।

 

Comments :0

Login to leave a comment