গ্রেট ব্রিটেনের সাধারণ নির্বাচনে মার্গারেট থ্যাচারের উত্তরাধিকারীদের কাছ থেকে ক্ষমতা ছিনিয়ে নিয়ে ফের সরকারে এসেছে লেবার পার্টি। ব্রিটেনের রাজনীতিতে বরাবরের দুই প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী দল টোরিদের কনজর্ভেটিভ পার্টি এবং লেবার পার্টি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বেশি সময় রক্ষণশীলরা ক্ষমতায় থাকলেও লেবার পার্টিও অনেকবার সরকার চালিয়েছে। আগের দিকে ব্রিটিশ রাজনীতিতে ব্রিটিশ কমিউনিস্ট পার্টির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকলেও এখন একেবারেই দুর্বল। তবে লেবার পার্টি হিসাবে যে ধারণা জনমানসে ছিল সেটা এখন অনেক বদলে গেছে। বিশেষ করে কিয়ের স্টার্মারের নেতৃত্বে আজকে লেবার পার্টিকে আর পুরোপুরি মধ্য বাম হিসাবে চিহ্নিত করা যায় না। দলের বর্তমান নীতিগত ও দৃষ্টিভঙ্গিগত অবস্থানে বাম-প্রগতিশীলতার অংশের বিস্তর ক্ষয় হয়ে গেছে। বদলে দক্ষিণপন্থার উপাদান অনেক বেড়ে গেছে। অনেকে বর্তমান লেবার পার্টিকে নব্য লেবার পার্টি হিসাবে চিহ্নিত করছেন। এই পরিবর্তন হচ্ছে মূলত স্টার্মারের হাত ধরে। তিনি পার্টির নেতৃত্ব দখল করেই জেরেসি করবিনদের বামঘেঁষা জনপ্রিয় নেতাদের কোণঠাসা অথবা বহিষ্কার করে দলে তার নিরঙ্কুশ ক্ষমতা কায়েম করেছেন। ফলে রক্ষণশীলদের গোহারা হারিয়ে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে লেবার পার্টি ক্ষমতায় এলেও এই সরকারের কাছে বড় কিছু আশা করা অর্থহীন।
অবশ্য গোটা ইউরোপ জুড়ে যখন অতি দক্ষিণপন্থী রাজনীতির দ্রুত উত্থান ঘটছে, ঘোরতর অভিবাসন বিরোধী রাজনতিকে আশ্রয় করে নব্য ফ্যাসিবাদীদের শক্তি বাড়ছে, এমনকি কয়েকটি দেশে তারা রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করেছে বা করতে চলেছে তখন ব্রিটেনের বুকে লেবার পার্টির বিপুল জয় নিঃসন্দেহে তাৎপর্যপূর্ণ। তবে একটু তলিয়ে দেখলে এখানেও অতি দক্ষিণপন্থীরা রীতিমতো বড়সড় থাবা বসাতে সক্ষম হয়েছে। কট্টর অভিবাসন বিরোধী রিফর্ম ইউকে চারটি আসনে জিতলেও ভোটের হার অনেকটা বেড়ে ১৪ শতাংশ হয়েছে। রক্ষণশীলদের সরকার পরিচালনায় ব্যর্থতা, অর্থনীতির সঙ্কট, মানুষের রুজি রোজগারের সঙ্কট, পণ্য-পরিষেবার অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির জেরে মানুষের জীবন যাত্রার দুর্বিষহ অবস্থা সুনক সরকারের বিরুদ্ধে গেছে। বিরক্ত, ক্ষুব্ধ মানুষ এই সরকারকে সরাতে লেবার পার্টিকে বেছে নিয়েছেন। লেবার পার্টি জাতীয় পুনর্বিন্যাস ও দেশ পুনর্নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়ে টোরিদের বিরুদ্ধে জোরালো প্রচার চালিয়েছিল।
স্টার্মারের প্রধান মন্ত্রিত্বে নতুন সরকার দেশের অভ্যন্তরে নীতিগত কিছু পরিবর্তন এনে জনগণকে কিছুটা সুরাহা দিতে পারবে কিনা সেটা আগামী দিনে বোঝা যাবে। তবে বিদেশনীতিতে যে বিশেষ কোনও পরিবর্তন হবে না সেটা জোর দিয়েই বলা যায়। আমেরিকার সবচেয়ে ঘনিষ্ট সাম্রাজ্যবাদী মিত্র দেশ হিসাবে রক্ষণশীল ও লেবারদের মধ্যে নীতিগত বা চরিত্রগত বিশেষ কোনও পার্থক্য নেই। আমেরিকাতেই ডেমোক্রেটিক ও রিপাবলিকানদেরও অনেকটা একই অবস্থা। ইউক্রেন যুদ্ধ, অভিবাসন, ইজরায়েল-প্যালেস্তাইন ইত্যাদি প্রশ্নে টোরি-লেবাররা একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। তাই নতুন সরকার লোক দেখানো কিছু পরিবর্তন করলেও শ্রেণিগত প্রশ্নে শ্রমজীবীদের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেবে না।
Comments :0