মুক্তধারা
গল্প
প্রতারক
অমল কর
'এই যে , পেয়েছি এতদিন পরে।
ঘাপটি মেরে চুপটি করে লালটু-মুখে কোন্ ফিকিরে? আবার কার পাকা ধানে মই দেবেন ? কার আবার
মাথায় কাঁঠাল ভেঙে খাবেন? কাকে আবার চোট দেবেন চাঁদু?'
'তার মানে?কী সব বলছেন ?কে আপনি?'
'ওসব ছল্লিবল্লি চাতুরী ছাড়ুন তো!বহু তন্ন খুঁজে যখন পাকড়েছি,আর
নো ছাড়ন-ছোড়ন। অনেক উড়েছ, বহু মেঘ খেলেছ,মেলা বাজিয়েছ রবাব।শেষ তোমার পাতকখেলা,শেষ আজ জারিজুরি ।'
'কী বলতে চান!আপনাকে তো চিনি না।'
'ভালোয় ভালোয় মিটিয়ে দেবেন,নাকি লোক জমাব! বেশি টিরিং টিরিং করলে এমন হল্লা লাগাব যে কোমরে দড়ি দিয়ে হ্যাঁচকাটানে শ্রীঘরে ঢোকাবে।মানে
মানে পথে আসুন,
নইলে বাঘে ছুঁলে
আঠারো ঘা,আর পুলিশে ধরলে ...।'
'কী ব্যাপার বলুন তো! তখন থেকে হেঁয়ালি রেখে ব্যাজর ব্যাজর করে চলেছেন ।নেশা-ফেশা করেছেন ?
ধোপ-দুরস্ত পোশাক দেখে আর কথার মারপ্যাঁচ শুনে তো ভদ্রলোকই মনে হচ্ছে। কী বলতে চান বলুন?'
'উঁহু,গলা চড়াবেন না ।আমি চ্যাঁচালে ভিড় জমে যাবে। আপনার ইজ্জত তখন পাপোশ। কথায় বলে, চোরের মা-র বড়ো গলা!সোজা-সাপটা নুয়ে পড়ার আদমি যে আপনি নন, এতদিনে বেমালুম বুঝে গেছি।কথায় বলে, কাঁচায়
না -নোয়ালে পাকা বাঁশ করে ট্যাঁশট্যাঁশ।ধেড়ে শালিক সহজে পোষ মানে না ।বেশি কথার কী দরকার !মালটা ছাড়ুন ।সুদে-আসলে
এ ক-বছরে তো কম হল না !'
'মাল!মাল মানে?'
'বাঃ! চিত হাতের বেলায় কত আলাইবালাই , আর উপুড় করার
সময় দশবাই চণ্ডী! মাল না-পেলে আজ ছাড়ব না। এই রঘু, মদনাকে ডাক তো।'
চড়া গলা শুনে কাজ না -থাকা কৌতূহলী মজা দেখনেওয়ালা মুহূর্তে দু-চারজন জুটে গেল। পটলা রঘু মদনা ঘোঁৎনারা ধারেকাছে ওঁত পেতেই ছিল।হম্বিতম্বি করে একজন খিঁচিয়ে ওঠে_'টাকাটা
ছাড়ুন, নইলে উত্তম-মধ্যম হাটের লাথি পথের কিল আর শ্রীঘর করে ছাড়ব।
পাশ থেকে সানাই-এর পোঁ আর-একজন বলে ওঠে ' চেহারাটা দেখে তো রাজপুত্তুরের মতো লাগছে। কিন্তু এমন চিটিংবাজ! কই, ভদ্দরলোকের মতো টাকাটা দিন। '
'কীসের টাকা!ওকে আমি চিনিই না। আপনারা কারা?'
'বাব্বা! যেন ভাজামাছটা উলটে খেতেই শেখেননি !টাকাটা দিয়েই দিন না!টাকাটা চোট করে আপনি নাকি বহুদিন চম্পট!গা-ঢাকা দিয়ে কতদিন পারবেন ! ধম্মের কল বাতাসে নড়ে।এখন ধরা যখন পড়েছেন ,পার পাবেন?'
জল বেশ অন্যদিকে গড়াচ্ছে টের পাচ্ছি। নানা ধরনের ছিনতাই ঠগবাজি জোচ্চুরি কেপমারির বহু নালিশ লালবাজার আর ময়দান থানায় জমা পড়েছে ।মাত্র কয়েকদিন আগে ডিএসপি(টাউন)-এর
দায়িত্বে এসেছি। সাদাপোশাকে তক্কে তক্কে ছিলাম দুষ্কৃতীদের কবজা করার।অভিনব কায়দায় আমাকেই শিকার হতে হচ্ছে!ভিড় দেখে ভিড় বাড়ছে।কথা ওড়ছে ভিড়ের মধ্যে ।নানা টীকাটিপ্পনীতে এলাকা মশগুল।আর চুপ থাকা যায় না ।
সাদাপোশাকের পুলিশরা ঘিরে ফেলেছে চতুর ঠগবাজ আর সাকরেদদের।ইশারা করতেই পুলিশ তৎপর হয়ে ওঠে।
আস্তে আস্তে ভিড় সরে যায় পথের দিকে।
Comments :0