Mamata Banerjee

গোরু তৃণমূল! কয়লা তৃণমূল! ময়লা তৃণমূল!

রাজ্য

 প্রায় এক দশক আগে ভরা ইন্ডোর স্টেডিয়ামে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর মুখে দলের একাধিক নেতাদের নাম উল্লেখ করে বলেছিলেন,‘‘ কুণাল চোর? টুম্পাই চোর? মুকুল চোর? মদন চোর? আমি চোর?’’ যাঁদের নাম মুখ্যমন্ত্রীর মুখ থেকে উচ্চারিত হয়েছিল শেষ পর্যন্ত চুরির দায়ে তাঁদের অনেকেরই সংশোধনাগারে ঠাঁই হয়েছিল। 
দশক পরে ফের মমতা ব্যানার্জির মুখে উঠে এল এরাজ্যে বহু চর্চিত একাধিক দুর্নীতির অভিযোগের কথা। তবে এ দফায় দলের কোনও নেতা মন্ত্রীর নাম মমতা ব্যানার্জি করেননি। তার পরবর্তে জড়িয়ে নিয়েছেন গোটা দলকেই। মঙ্গলবার দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার জয়নগরে জেলা প্রশাসনের এক সরকারি সভায় বক্তব্য রেখেছেন মমতা ব্যানার্জি। ওই সভাতেই আকস্মিকভাবে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘সব ব্যাপারে তৃণমূল। গোরুও তৃণমূল, কয়লাও তৃণমূল, ময়লাও তৃণমূল। হোয়াট ইস দিস!’’ এখানেই থামেননি মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেছেন, ‘‘আমি ভেবে পাই না, কারো কাপড়ে যদি কালি পড়ে, সেটাও তৃণমূল। কারো কাপড়ে যদি হলুদ রঙ পড়ে যায় সেটাও তৃণমূল। কারো দাড়ি পেকে গেলে সেটাও বলবে তৃণমূল।’’ 
২০২১ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে এরাজ্যে এমন কোনওদিন যায়নি যেখানে শাসকদলের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ সামনে আসেনি। এদিন মুখ্যমন্ত্রী গোরু, কয়লার মতো বিষয়গুলির সঙ্গে যেভাবে তৃণমূলকে জড়িয়ে দিয়েছেন তাতে রাজ্য প্রশাসন থেকে রাজনৈতিক মহলের কাছে অতীতের দলের সভায় নেতামন্ত্রীদের চোর সম্বোধনের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে।
এদিন মমতা ব্যানার্জির আরও একটি তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য করেছেন জয়নগরের সভায়। রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীকে প্রধান অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিলের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তৃণমূলের নেতা মন্ত্রীদের ‘সাজিয়ে’ গ্রেপ্তার করার তাৎপর্যপূর্ণ অভিযোগ এল মমতা ব্যানার্জির কাছ থেকে। মঙ্গলবার দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার জয়নগরে সরকারি সভা থেকে মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘‘সাজিয়ে, নাটক করে তৃণমূল নেতাদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। আসলে তৃণমূলকে দেখলেই ভয় পায়। তৃণমূলকে দেখলেই পা কাঁপে।’’
দিন কয়েক আগে সন্দেশখালিতে তৃণমূল নেতার বাড়িতে তল্লাশি অভিযানে গিয়ে আক্রান্ত হতে হয়েছিল ইডি’র আধিকারিকদের। সংবাদ মাধ্যমও সেদিন আক্রমণের হাত থেকে রেহাই পায়নি। অভিযুক্ত তৃণমূল নেতা শেখ সাজাহান ঘটনার পর থেকে ফেরার। কিন্তু তারপর থেকে সন্দেশখালির ঘটনা নিয়ে সরাসরি মুখ্যমন্ত্রী কোনও মন্তব্য না করলেও এরাজ্যের আইনশৃঙ্খলার প্রশংসা করেছেন। কিন্তু এদিন যেভাবে তদন্তকারী সংস্থার বিরুদ্ধে সাজিয়ে নাটক করে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করলেন তাতে সন্দেশখালির ঘটনাকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করতে চাইছে রাজ্য সরকার ও শাসকদল। সেইজন্য সাজিয়ে নাটক করে কেন তৃণমূল নেতাদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে তার ব্যাখ্যাও মমতা ব্যানার্জি দিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন,‘‘ ভাবছে ভোটের আগে সবাইকে গ্রেপ্তার করে নেব। তখন পুরো এলাকা খালি হয়ে যাবে। বিজেপি ডুগডুগি বাজাবে। অত সোজা নয়। বিনা যুদ্ধে এক ইঞ্চি জমি আমরা দেব না।’’ মুখ্যমন্ত্রীর এহেন হুমকির পর আগামীদিনে আদালতে নির্দেশে এরাজ্যে দুর্নীতির তদন্তে করতে যাওয়া কেন্দ্রীয় সংস্থার প্রতিনিধিদের ফের যে আক্রমণের মুখে পড়লে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।
গত রবিবার নিজের সংসদীয় কেন্দ্র ডায়মন্ডহারবার থেকে এলাকার বাসিন্দা যাঁরা বিধবা ভাতা পাননি তাঁদের ভাতা তুলে দেওয়ার কর্মসূচি নিয়েছিলেন দলের সাংসদ ও সাধারণ সম্পাদক অভিষেক ব্যানার্জি। দুদিন পরে জয়নগর থেকেই  দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার সরকারি অনুদান প্রকল্পের বিভিন্ন উপভোক্তাদের কাছে পরিষেবা তুলে দেন মমতা ব্যানার্জি। আর সেই সভা থেকেই ফের ১০০ দিনের কাজ ও বাংলা আবাস যোজনা নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারকে আক্রমণ করেন মুখ্যমন্ত্রী। মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন,‘‘ ১০০ দিনের টাকা দেয় না। ঘর তৈরির টাকা দেয় না। লজ্জা করে না। শুধু গৃহ নির্মাণ প্রকল্পেই আমরা কেন্দ্রের কাছ থেকে ২৯ হাজার কোটি টাকা পাই।’’ 
অথচ গত ২০ ডিসেম্বর দেশের নতুন সংসদে একদল সাংসদকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে দেখা করেছিলেন মমতা ব্যানার্জি। প্রধানমন্ত্রী তাঁর কথা মনোযোগ দিয়ে শুনেছেন বলে সংবাদ মাধ্যমের কাছে জানিয়েছিলেন। এমনকি রাজ্য ও কেন্দ্রের তরফ থেকে আধিকারিকরা মিলে বিষয়টি সামাধান করবে বলেও প্রধানমন্ত্রী তাঁকে আশ্বাস দেওয়ার পরও ২০ দিন পার হয়ে গেছে। কিন্তু কেন্দ্র ও রাজ্য দুই সরকারের তরফ থেকে কোনও উদ্যোগ নেই।
 

Comments :0

Login to leave a comment