Editorial

বিস্ফোরণের ধাঁধা

সম্পাদকীয় বিভাগ

দিল্লির লাল কেল্লার কাছে হাই সিকিউরিটি জোনে ভয়াবহ বিস্ফোরণের পর বেজায় চাপে পড়ে মোদী সরকার বুঝেই উঠতে পারছিল না এই ঘটনাকে ঠিক কীভাবে ব্যাখ্যা করবে। একে সন্ত্রাসবাদীদের কাজ বলে বিবৃতি দেবে নাকি সাধারণ দুষ্কৃতীর কাজ বা দুর্ঘটনা বলে চালিয়ে দেবে। সন্ত্রাসবাদীদের কাজ বললে চারদিক থেকে আক্রমণ ধেয়ে আসবে সরকারের গোয়েন্দা ও নিরাপত্তা ব্যর্থতা নিয়ে। আবার নিছক দুর্ঘটনা বললেও প্রশ্ন উঠবে দিনের বেলায় লালকেল্লার মতো জায়গায় এত বিস্ফোরক নিয়ে একটা গাড়ি এল কীভাবে। অমিত শাহ-র দিল্লির পুলিশ কি এতটাই অপদার্থ কোনও টেরই পেল না। তার উপর গাড়িটা নাকি সকাল বেলায় ফরিদাবাদ থেকে বিস্ফোরক বোঝাই করে দিল্লিতে ঢোকে। সারাদিন দিল্লির পথে ঘোরাফেরার পর লালকেল্লার কাছে এক পার্কে প্রায় তিন ঘণ্টা দাঁড়িয়েছিল। তাতেও সন্দেহ হয়নি মোদীর পুলি‍‌শের। অতএব বিস্ফোরণের কারণ বলতে ভায়ানক সঙ্কটে পড়ে যায় সরকার। শেষমেশ ২৪ ঘণ্টা পর প্রধানমন্ত্রী বিদেশ সফর সেরে দেশে ফেরার পর মন্ত্রীসভার বৈঠকের পর সরকারের তরফে একে সন্ত্রাসবাদীদের কাজ বলেই উল্লেখ করা হয়। অথচ গোদী মিডিয়া প্রথম থেকেই একে সন্ত্রাসবাদী হামলা বলে প্রচারের ঝড় তোলে। এমনকি তার পেছনে পাক মদত থাকতে পারে বলেও ইঙ্গিত করতে থাকে। আসলে মোদীভক্ত গোদী মিডিয়াকে দোষ দেওয়া যায় না। তারা মোদী জমানায় দেখে এসেছে বিস্ফোরণ মানেই সন্ত্রাসবাদীদের কাজ এবং তার মদতে এসেছে পাকিস্তান। এই অন্ধভক্ত গোদী মিডিয়ার মাথায় গেঁথে গেছে। তাই তারা বিস্ফোরণ শুনলেই সন্ত্রাসবাদের হাত দেখে।
অবশ্য এই বিস্ফোরণের অন্তত এক সপ্তাহ আগে থেকে কাশ্মীর পুলিশের উদ্যোগে সন্ত্রাসবাদীদের ফরিদাবাদ মডিউল নিয়ে তল্লাশি চলছিল। কাশ্মীর, ফরিদাবাদ, লক্ষ্ণৌ থেকে কয়েকজনকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছিল। স্বাভাবিকভাবেই দিল্লি পুলিশের সতর্ক থাকার কথা। আবার লালকেল্লার বিস্ফোরণের দিন সকালেই কাশ্মীর ও ফরিদাবাদের পুলিশ ফরিদাবাদ থেকে তিন হাজার কেজি বিস্ফোরক ও বিস্ফোরণ ঘটানোর আনুসাঙ্গিক জিনিসপত্র উদ্ধার করে। তার আগেই ফরিদাবাদ থেকে একটি গাড়ি বিস্ফোরক নিয়ে দিল্লিতে সারাদিন কাটিয়ে বিকেলে লালকেল্লার কাছে যায়। সেখানেই বিস্ফোরণ ঘটে। এরপত বলতে হবে দিল্লির পুলিশ শাহ-র নেতৃত্বে দক্ষতার সঙ্গে কাজ করছে। এই ঘটনা পরম্পরা সহজে বিরশ্বাসযোগ্য হবে না। বরং সন্দেহ দানা বাঁধার সুযোগ থাকে।
ফরিদাবাদ থেকে তিন হাজার কেজি বিস্ফোরক উদ্ধার করে নিয়েযাওয়া হয় শ্রীনগরের নওগাম থানায়। কয়েকদিন পর সেই বিস্ফোরকই বিস্ফোরণ ঘটিয়ে থানা উড়িয়ে দেয়। মারা যায় ৯জন। থানায় বিস্ফোরক রাখার পদ্ধতি আছে। সর্বোচ্চ সতর্কতা ও নিরাপত্তা বিধি মেনেই সেগুলিকে সুরক্ষিত রাখতে হয়। সম্ভবত সেটা হয়নি। তাই বিস্ফোরণ। অথবা তার পেছনে কোনও রহস্য লুকিয়ে আছে। দিল্লিতে বিস্ফোরণের ঘটনাকে একদিন পর সরকার সন্ত্রাসবাদীদের কাজ বলে ঘোষণা করেছিল। কিন্তু শ্রীনগরে সঙ্গে সঙ্গেই জানিয়ে দেওয়া হয় এটা দুর্ঘটনা, কোনও সন্ত্রাসবাদী এর পেছনে নেই। অথচ একটি সন্ত্রাসবাদী সংস্থা এটা তাদের কাজ বলে দাবি করেছে। দিল্লির ক্ষেত্রে কেউ তেমন দাবি করেনি। যে বিস্ফোরণ সন্ত্রাসবাদীরা তাদের কাজ বলে দাবি করেনি সেটাকে মোদীরা সন্ত্রাসবাদী বলছে। যেটা সন্ত্রাসবাদীরা দাবি করছে সেটা মোদীরা দুর্ঘটনা বলছে।

Comments :0

Login to leave a comment