BOOK — ASITAVA DAS — SAMARTHAK SHABDHAKOSH — MUKTADHARA — 18 NOVEMBER 2025, 3rd YEAR

বই — অসিতাভ দাশ — বাংলা শব্দচিন্তার কারিগর — মুক্তধারা — ১৮ নভেম্বর ২০২৫, বর্ষ ৩

সাহিত্যের পাতা

BOOK  ASITAVA DAS  SAMARTHAK SHABDHAKOSH  MUKTADHARA  18 NOVEMBER 2025 3rd YEAR

বইমুক্তধারা 

 

বাংলা শব্দচিন্তার কারিগর 

অসিতাভ দাশ

১৮ নভেম্বর ২০২৫, বর্ষ ৩ 
 

 

বাংলা ভাষার প্রথম পূর্ণাঙ্গ ‘থিসারাস’—সমার্থ শব্দকোষ রচনা করে আপামর বাংলা ভাষাভাষির  হৃদয় জয় করে নিয়েছেন অশোক মুখোপাধ্যায়। তাঁর জীবনকথা ও সমার্থ শব্দকোষের  পরিকল্পনা নিয়ে বহু মানুষের বিদগ্ধ  ভাবনা একত্রিত  করেছেন সম্পাদক বিবেক গুহ তাঁর সম্পাদিত ‘অশোক মুখোপাধ্যায় ও তাঁর বহুমুখী কর্মজীবন’ গ্রন্থে। লেখকসূচীর মধ্যে আছেন শঙ্খ ঘোষ, অমিয় দেব, পি সি সরকার জুনিয়র, পবিত্র  সরকার, আনন্দদেব মুখোপাধ্যায়, পলাশবরণ পাল, দেবজ্যোতি দত্ত, হিমেন্দু বিশ্বাস, আশীষ লাহিড়ীর  মত প্রমুখ গুণমুগ্ধ গুণীজন মানুষেরা, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের  অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করলেও পরে ঐ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রিন্টিং ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের কর্ণধার এবং তারপর বিশ্বভারতী গ্রন্থন বিভাগের  অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদান করেছিলেন। কিন্তু তাঁর সব কীর্তি ছাপিয়ে গিয়েছে ‘সমার্থ শব্দকোষ’ রচনায়। সমার্থ শব্দকোষ অভিধান হলেও প্রথাগত অভিধান নয়। এটি একটি ভিন্ন ধরণের অভিধান। সাধারণ ভাষা-অভিধানের মূল কাজ অজানা শব্দের অর্থ জানানো  কিন্তু এই ধরনের আকর গ্রন্থ এর বিপরীত। অর্থ, ভাব ও বিষয়টা জানা আছে অথচ সঠিক শব্দটি জানা নেই, কিংবা মনে আসছে না তখনই এই জাতীয় অভিধানের  সাহায্য দরকার। বাংলা ভাষায় প্রথম থিসারাস ছাপা হয় ১৩৬২ বঙ্গাব্দে, ২৪৮পৃষ্ঠার এই গ্রন্থটির  সংকলক ছিলেন প্রাণতোষ ঘটক। ‘বিষয়ভিত্তিক শব্দ বিন্যাসের’  সূচনা প্রাচীন ভারতের সুবিখ্যাত ‘অমরকোষ’ গ্রন্থে। এর প্রণেতা অমরসিংহ। পৃথিবীর  প্রাচীনতম থিসারাস বলতে এটিকেই বোঝানো হয়। আধুনিক কালের প্রথম থিসারাস ইংরেজি ভাষায় প্রণীত, নাম ‘ থিসারাস অব ইংলিশ ওয়ার্ডস অ্যান্ড ফ্রেজেস’। ১৮৫২ সালে পিটার মার্ক রোজে (১৭৭৯—১৮৬৯) এর সংকলক ছিলেন। রোজে তাঁর থিসারাসকে শব্দের বর্গীকরণ  হিসেবে গণ্য  করেছিলেন। আধুনিক থিসারাসের প্রাণপুরুষ পিটার মার্ক রোজের  পদাঙ্ক বাংলায় প্রথম অনুসৃত হয় প্রতিবেশী রাষ্ট্র বাংলাদেশে। মুহাম্মদ হবিবুর রহমানের ‘যথাশব্দ’ ও অশোক মুখোপাধ্যায়-এর ‘সমার্থ শব্দকোষ’ রোজের অনুসারে পরিকল্পতি ও সংকলিত। রোজে পেশায় ছিলেন একজন চিকিৎসক। ১৮০৫ সালে এই গ্রন্থটির কাজ শুরু করে অভিধানটির সংকলন কাজ যখন সমাপ্ত হয় রোজের বয়স তখন ৭৩। অর্ধশতাব্দী ধরে এই সংকলনর কাজে নিয়োজিত থাকলেও বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় তাঁর আগ্রহ ও বিচরণ ছিল অবাধ। ‘সমার্থ শব্দকোষ’ প্রণেতা অশোক মুখোপাধ্যায়ের সাথে রোজের কর্মজীবনের প্রবল সাদৃশ্য দেখা যায়। অশোক মুখোপাধ্যায় একজন  ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন। যাদবপুর বিশ্বববিদ্যালয়ের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে অধ্যাপনা করার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার ল্যাবের সূচনা তাঁর হাতেই হয়। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রিন্টিং ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের কর্ণধার এবং বিশ্বভারতী  গ্রন্থন বিভাগের অধ্যক্ষ ছিলেন। এখানেই শেষ নয়। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিখ্যাত ফোটোগ্রাফিক ক্লাবের ছিলেন তিনি প্রাণপুরুষ। অজস্র ছাত্রকে তিনি হাতে কলমে ফটোগ্রাফিক চর্চার সুযোগ করে দিয়েছিলেন।  সমার্থ শব্দকোষ’ রচনা করে তিনি থেমে থাকেন নি। তিনি রচনা করেছে ‘ব্যকরণ অভিধান’ আর ‘বানান অভিধান’। এছাড়া সরস ভঙ্গিতে রচনা করেছেন ‘কম্পিউটারের কতকথা’ আর ‘কথার কি ছিরি’। ১৯৮৭ সালে সমার্থ শব্দকোষে র প্রথম প্রকাশের মোটামুটি  এক দশক পরে প্রকাশিত হয় ‘সংসদ বানান অভিধান’।
যে কোনও অভিধানই বানানের অভিধান। তাহলে স্বাভাবিক ভাবে মনে প্রশ্ন আসতে পারে  ‘‘বানানের অভিধান’’-এর অর্থ কি তার? এর অর্থ সম্বন্ধে আলোচনা করতে গেলে বলা যায় বাংলা ভাষায় যেসব শব্দ আছে, তার অনেকগুলো ভিন্ন ভিন্ন  বানানে লেখা যায় এবং লেখা হয়। এইযে একই শব্দ ভিন্ন ভিন্ন  বানানে লেখা হয় এবং সেগুলোর কোনটারই বানান যাকে বলে অশুদ্ধ, তা বলা যায় না, প্রত্যেকটির পশ্চাতে থাকে নিজস্ব যুক্তি বা নিয়ম। ঐ সব শব্দের  সর্বসম্মত ও সর্বমান্য  একটি বানানে  পৌছানোর  উদ্দেশ্যেই রচিত  হয়েছে বাংলা বানানের অভিধান। ১৯৯৮ সালে  সঙ্কলিত ‘সংসদ বানান অভিধানে’ প্রায় চৌষট্টি হাজার  শব্দ আছে। বিন্যাস বর্ণানুক্রমিক। অনেক জায়গায়, যেখানে একই অর্থে একাধিক বানানের শব্দ ব্যবহার করা হয় লেখার জন্য সেখানে অশোক মুখোপাধ্যায় সেই সব রূপভেদগুলিকে তালিকাভুক্ত করেছেন, এবং তাদের মধ্যে কোনও কোনওটি গ্রহণীয় আর কোনগুলি বর্জনীয় সে সম্পর্কেও মতামত দিয়েছেন। বিংশ শতাব্দীর  শেষার্ধে বানান অভিধানের বাহুল্য ঘটলেও বাংলা বানান অভিধানের  আবির্ভাব  উনবিংশ শতাব্দীতে। বাংলা বানান অভিধানের পথিকৃত হিসাবে চিহ্নিত করা যায় হলধর ন্যায়রত্নকে। ১২৪৬ বঙ্গাব্দে প্রকাশিত  তাঁর এই অভিধানের নাম ছিল বঙ্গাভিধান : অর্থাৎ বঙ্গদেশ প্রচলিত সংস্কৃতানুযায়ী সাধু শব্দ সমূহ।  এই অভিধানটিতে  কোন শব্দরে অর্থ ছিলনা, শুধু অ-কারাদি বর্ণানুক্রমে শব্দ সজ্হিত হয়েছিল। সুগ্রন্থিত সম্পাদনার মাধ্যমে  অশোক মুখোপাধ্যায়ের বহুমুখী  প্রতিভা ও কর্মজীবনের কথা এই গ্রন্থ তুলে ধরেছেন তাঁর একলব্য ছাত্র বিবেক গুহ। অশোকবাবূ সরকারি বেসরকারি কোনও প্রতি্ঠান থেকে  তাঁর কাজের কোনও স্বীকৃতি  পাননি কিন্তু তাতে তাঁর এই অনলস সাধনার বিন্দূমাত্র  গুরুত্ব হানি হয়নি। পৃথিবীর  নানা দিকে বহুবিধ কর্মক্ষেত্রে ছড়িয়ে থাকা তাঁর ছাত্ররা এবং গুণমুগ্ধরা তাঁদের প্রিয় ‘অশোকদা’র বহুমুখী প্রতিভার কথা জানতে পেরে ধন্য ও ঋদ্ধ হবেন।
 

অশোক মুখোপাধ্যায় ও তাঁর বহুমুখী কর্মজীবন
সম্পাদনা : বিবেক গুহ। প্রাপ্তিস্থান : বঙ্গীয়  জাতীয় শিক্ষা পরিষদ, যাদবপুর, কলকাতা—৩২।  ২২৫টাকা।

 

Comments :0

Login to leave a comment