‘এ রাজ্যের কোনও যুবক, যুবতীকে কাজের জন্য আর বাইরে যেতে হবে না।’ ২০১৭ সালের ১২ ডিসেম্বর মমতা ব্যানার্জি আরও বলেছিলেন, তৃণমূল সরকার পরিযায়ী শ্রমিকদের ৫০ হাজার করে টাকা দেবে। সেই টাকায় ব্যবসা করবেন তাঁরা।
বাঁকুড়ার ইন্দাসের রোল গ্রামের যুবক হেমন্ত রায় কেরালায় কাজ করতে গিয়ে মারা গিয়েছিলেন। তার ঠিক পরেই এমন ঘোষণা।
শুক্রবার, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ সেই মুখ্যমন্ত্রীই উলটো বললেন। বাঁকুড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে একটি বেসরকারি স্কুলের মাঠে সরকারি সভায় তিনিই বললেন যে এ রাজ্যের যুবক, যুবতীরা যদি বাইরে কাজ করতে যেতে চান, তাহলে যেতে পারেন।
বস্তুত কাজ দিতে না পারার স্বীকারোক্তি হিসাবেই জেলার মানুষ দেখছেন এমন বক্তব্যকে। আবার ১৫ ফেব্রুয়ারি বিধানসভায় মমতা ব্যানার্জিই দাবি করেছিলেন যে তাঁর সরকারের বাজেট কর্মসংস্থানমুখী।
সভার পর প্রশ্ন উঠল কোন মমতা ব্যানার্জি ঠিক। যে সভায় প্রায় চারশো বাসে লোক আনা হয়েছে বিপুল খরচে।
২০২০’র ৩১ মার্চ বেলিয়াতোড়ের ছান্দার গ্রাম থেকে চেন্নাই এর কাজ করতে গিয়ে বেঘরোরে প্রাণ হারান বাপী কালিন্দী। তখনও কথা রাখা হয়নি। লকডাউনে নিদারুণ যন্ত্রণা নিয়ে ফিরে আসা পরিযায়ী শ্রমিকদের উদ্দেশ্যে তিনি জানিয়েছিলেন তাঁদের একলক্ষ করে টাকা দেওয়া হচ্ছে।
কোথাও কিছু হয়নি, না পেয়েছেন ৫০ হাজার না পেয়েছেন ১লক্ষ টাকা।
কয়েক বছর ধরেই তিনি বাঁকুড়ায় সভা করতে এসে বলে যাচ্ছেন রঘুনাথপুর থেকে ডানকুনী ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের কথা। শুক্রবারও বলেছেন। কিন্তু কাজ কোথায়?
মুখ্যমন্ত্রীর সভার দু’দিন আগে থেকেই ২২টি ব্লকেরই বিডিও বিভিন্ন গ্রাম পঞ্চায়েতের সরকারি আধিকারিককে চিঠি দিয়ে জানান, প্রতিটি অঞ্চল থেকে কম করে ২টি করে গাড়ি বোঝাই লোক আনতে হবে। তাদের খাওয়া দাওয়া সব দেখতে হবে পঞ্চায়েতের নির্দিষ্ট দু’জন আধিকারিককেই। ওই আধিকারিকদের বিডিও’রা সাদা কাগজে স্থানীয় তৃণমূলের নেতাদের নামের তালিকাও দিয়েছেন যোগাযোগের জন্য।
জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এরকম ৩৮৯টি বাস এসেছিল বাঁকুড়ার সভায়। এর সব অর্থ বহন করেছে রাজ্য কোষাগার। যা অতীতে কোনদিন হয়নি। এদিন মুখ্যমন্ত্রী বেশ কিছু উপভোক্তাকে স্বাস্থ্যসাথী, স্টুডেন্ড ক্রেডিট কার্ড, সাইকেল সহ বেশি কিছু জিনিস তুলে দিয়ে জানান, আমরা ছাত্রছাত্রীদের উচ্চশিক্ষার জন্য সরকারের গ্যারান্টিতে ১০ লক্ষ টাকা ক্রেডিট কার্ডে ঋণ দিচ্ছি।
কিন্তু ঘটনা হল ছাত্রছাত্রীরা টাকা চাইতে যাচ্ছে ব্যাঙ্ক মোটা অঙ্কের অর্থ জমা করার জন্য বলছে। জমির দলিল রাখতে হবে, আর সরকারি কর্মচারীকে গ্যারেন্টার থাকতে হবে।
বিপুল টাকা খরচে এমনই চলল মুখ্যমন্ত্রীর সভায়।
Comments :0