Christmas

উৎসবেও নিদারুণ বৈষম্য! জোটেনি সান্তার উপহারও

রাজ্য

আসেনি সান্তা। অনেক করে ডাকার পরেও আর সে আসেনি। লাল মোজাটা গুটিয়ে তুলে রেখে রাস্তায় পা বাড়ায় একরত্তি শিশু থেকে কিশোর হয়ে ওঠার মাঝামাঝি অবয়বটি। বড়দিনের ভিড়ে আলো ঝলমলে রাস্তা দিয়ে হাঁটতে থাকে। মুখের আদল দেখে বয়স অনুমান করলে ১০-১২ ছাড়ানো যাবে না। এক কাঁড়ি বেলুন নিয়ে দৌড়াচ্ছে সে। কিনেছে নাকি? না না, বিক্রি করার লোক খুঁজছে। মা-বাবাকে কখনও দেখেনি সে। ছোটো থেকেই ফুটের বাসিন্দা। খাওয়া-শোওয়া সব সেখানেই। কোনও একদিন রাস্তার ধারের এক রেস্তোরাঁর মালিকের স্নেহ হয় তার উপর। 


তিনি খাওয়া-পড়ার একটা বন্দোবস্ত করে দেয় তার জন্য। এই একবারই সান্তাক্লজের দেখা পেয়েছিল সে। ডায়মন্ডহারবারের একটি স্কুলে তাকে ভর্তি করে দেন সেই সান্তা। দুপুরের খাবার নিখরচায় পাওয়ার ব্যবস্থাও তিনিই করেছেন। কিন্তু রাতের খাবার তো জোগাড় করতেই হবে। একবেলা খেয়ে তো পেট চলে না। এখন ছুটি, তাই নেমে পড়েছে ব্যবসায়, দাদার হাত ধরে চলে এসেছে কলকাতায়। সেও শিখে গেছে উৎসবের দিনে মাঠে নামলে বাজার সব চাইতে বেশি। তার কাছে উৎসব মানে ওইটুকুই। কোনোভাবে একটু বেশি সংখ্যায় বেলুন বিক্রি করে রাতের খাবারের পরিমাণ বাড়ানোই উদ্দেশ্য।    


বড়দিনের উৎসবেও পেট চালানোর রুজি-রুটি জোগাড়েই ব্যস্ত সমাজের প্রান্তিক অংশ। বড়দিনের আলোয় রাঙিয়ে উঠেছে পার্ক স্ট্রিট। এ উৎসবের আঙিনায় উপস্থিত হাজারো লোকজন। একই রাস্তায় ধারে বসে আছেন অসংখ্য হকাররা। কিন্তু এই দিনগুলিকে আর পাঁচটা দিনের থেকে আলাদা করে দেখার মতো কোনও রসদ পাচ্ছেন না তাঁরা। 
ভিড়ের মধ্যেই দেখা গেল এক মহিলা দোকানীকে। ঘরে তাঁর তিনটি সন্তান। এদের কাউকেই এই উৎসবের কোলাহলে নিয়ে আসতে পারেননি তিনি। কারণ এই রঙিন দুনিয়ায় এলেই শিশুরা বিবিধ বায়না করে বসবে যার একটিও পূরণের সামর্থ্য নেই তাঁর। স্বামী অন্যদিনের মতোই আজও সকাল সকাল কাজে বেরিয়ে গেছেন। ফলে তাঁদের কাছে উৎসব মানে আর কিছুই না, নিজের ভিটে ছেড়ে অন্য এলাকায় চাদর বিছিয়ে বসা মাত্র। 


এর পাশাপাশি রয়েছে পুলিশের তাড়া। অন্য দিনের মতো দৈনিক রোজগারের চেয়ে দু-চার পয়সা বেশি পাওয়ার আশায় যাওবা এই এলাকায় আসা, তাতেও জুটছে তাড়না। ফুটপাথের হকারদের দাবি, তাঁদের দোকান ঘিরে মানুষের ভিড় বেড়ে গেলে পুলিশ উঠিয়ে দেবে তাঁদেরই। তাই বড়দিনের রঙিন আলোর দিকে তাকিয়েও হাসি ফুটছে না তাঁদের মনে। 
উৎসবে উপস্থিত সবাই, কিন্তু অংশগ্রহণের ভঙ্গিমা আলাদা রকমের— নিজেদের সামাজিক-অর্থনৈতিক অবস্থা অনুযায়ী। কারোর ভরপুর রেস্ত, কারোর কিঞ্চিৎ, কারোর আবার একেবারেই কিছু নেই টাকা খরচ করার মতো। তাই বড়দিন সবার কাছে বড়দিন নয়। অন্যান্য উৎসবের মতো বড়দিনেরও মানে বিভিন্ন মানুষের কাছে বিভিন্ন রকম।

 

Comments :0

Login to leave a comment