General elections 2024

মোদী এনডিএ’র বৈঠকে নেতা নির্বাচিত হলেন, শপথ কাল

জাতীয় লোকসভা ২০২৪

 রাষ্ট্রপতির আমন্ত্রণ পেয়ে এনডিএ সরকারের গঠনের দাবি জানিয়ে এলেন নরেন্দ্র মোদী। শপথ রবিবার সন্ধ্যায়। শুক্রবার এর আগে এনডিএ’র সংসদীয় বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী হিসাবে মোদীকে বেছে নেন সাংসদরা। রাষ্ট্রপতি ভবন থেকে বেরিয়ে এক দশকের মধ্যে এই প্রথমবার সাংবাদিকদের সামনে এসে নিজের সংক্ষিপ্ত বক্তব্য জানিয়ে চলে যান মোদী। তবে কোনও ধরনের প্রশ্নোত্তর পর্বের মুখোমুখি হননি তিনি।
সংসদীয় গণতন্ত্রের রীতি ভেঙে এদিন বিজেপি সংসদীয় দলের বৈঠক না হয়ে বৈঠকে বসে এনডিএ। সংসদীয় রীতি অনুসারে সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের সাংসদরা বৈঠকে বসে দলের নেতা নির্বাচিত করার পর জোট শরিকদের নিয়ে আলোচনায় বসে থাকে। সেই বৈঠক শরিকরা আবার তাঁকে নির্বাচিত করলেই রাষ্ট্রপতির কাছে সরকার গঠনের দাবি জানানো হয়। কিন্তু এবার বিজেপি সংসদীয় দলের বৈঠকই হলো না। উলটে সংসদের সেন্ট্রাল হলে এনডিএ বৈঠক করে মোদীকে নেতা নির্বাচিত করে ফেলে। তারপর বিজেপি সভাপতি জেপি নাড্ডা এনডিএ বৈঠকের মোদীর নেতা নির্বাচিত সংক্রান্ত চিঠি তুলে দেন রাষ্ট্রপতির হাতে। আবার এনডিএ’র শরিকরা রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করে তাদের সমর্থন সংক্রান্ত চিঠিও তুলে দেন। এর ভিত্তিতেই রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু এদিনই মোদীকে তৃতীয় বারের জন্য দেশের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আমন্ত্রণ জানান। আবার মোদী পুষ্পস্তবক নিয়ে দেখা করতে এলে তাঁকে দই-চিনি খাইয়ে আমন্ত্রণ জানান রাষ্ট্রপতি। তারপর প্রধানমন্ত্রী হিসাবে নিয়োগের চিঠি রাষ্ট্রপতি তুলে দেন মোদীর হাতে। রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করে বেরিয়ে মোদী সাংবাদিকদের জানান, ‘‘রাষ্ট্রপতি আমাকে ডেকেছিলেন। সরকার গড়ার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। আমি তাঁকে জানিয়েছি ৯ তারিখ বিকালে শপথ গ্রহণ হলে ভালো হয়। এর মধ্যেই মন্ত্রীদের তালিকা আমি পাঠিয়ে দেবো।’’ তিনি দাবি করেন, ‘‘এইটুকু আশ্বাস দিতে পারি গত দু’দফায় উন্নয়নের যে গতি বজায় ছিল, তৃতীয় দফার পাঁচ বছরেও সেই গতি বজায় থাকবে।’’ আবার বাগাড়ম্বরও করেছেন তিনি। মোদী বলেন, ‘‘২০৪৭ সালে স্বাধীনতার ১০০ বছর উদ্‌যাপনের লক্ষ্যে ভারতবাসীর যাবতীয় স্বপ্নপূরণের একটা মাইলফলক হতে চলেছে অষ্টাদশ লোকসভা।’’ এইটুকু বলেই প্রশ্নের জবাব দিতে অভ্যস্ত নন মোদী চলে যান। ১০ বছর পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হলেও স্বভাবসিদ্ধ ঔদ্ধত্যেই প্রশ্ন এড়িয়ে গেলেন। অথচ ভোটের প্রচার চলাকালীন নিজেকে জাহির করতে অনুগত মিডিয়ার কাছে তৈরি করে দেওয়া প্রশ্নের ভিত্তিতে অকাতরে সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন মোদী!
আবার জানা গিয়েছে এনডিএ বৈঠকে না কি মোদী নিজের নাম না করে বার বার শরিকদের কথা, জোটের বিষয় বেশি উচ্চারণ করেছেন। অথচ এতদিন নিজের নাম জাহির করে বক্তব্য রাখাই রেওয়াজ করে ফেলেছিলেন মোদী। এদিন বক্তাদের তালিকায় শরিকদের মধ্যে এইচডি কুমারস্বামী, একনাথ শিণ্ডে, অজিত পাওয়ার, জিতেন রাম মাঝি, চিরাগ পাশোয়ান, পবন কল্যাণ, অনুপ্রিয়া প্যাটেল সহ নীতীশ কুমার এবং চন্দ্রবাবু নাইডু সবাই মিলে অবশ্য ‘মোদী মাহাত্ম্য’ প্রচারেই ব্যস্ত ছিলেন। চিরাগ আবার মোদীকে বার বার ‘স্যার’ বলে সম্বোধন করেন। তিনি ‘মোদী স্তুতি’র পর পায়ে হাত দিয়ে প্রণামও করেন। গত পাঁচ বছরে একবার মাত্র বৈঠকে বসেছিল এনডিএ। এবার শরিক ছাড়া গতি নেই বলে মোদীর মুখে শুধুই জোটের কথা। তবে আরও কিছু ‘চমক’ লক্ষ্য করা গিয়েছে এদিনের বৈঠকে। বৈঠকের শুরুতে নাড্ডা বিজেপি’র সংসদীয় নেতা হিসাবে মোদীর নাম প্রস্তাব করেন। বিজেপি’র সংসদীয় দলের বৈঠক না হওয়া সত্ত্বেও নাড্ডা কীভাবে মোদীর নাম নির্বাচিত হয়েছে বলে অক্লেশে জানালেন, তা নিয়েও প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে। এরপর রাজনাথ সিং এনডিএ’র সংসদীয় নেতা হিসাবে মোদীর নাম প্রস্তাব করেন। এটাও চমকে দেওয়ার মতো ঘটনা। এতদিন বিজেপি’র সংসদীয় দলে দু’নম্বর হিসাবে দাপিয়ে বেড়ানো, কলকাঠি নাড়া— সবই করতেন অমিত শাহ। সেই জায়গায় রাজনাথকে এদিন সেই ভূমিকা পালন করতে দেখে এনডিএ শরিক নেতাদের অনেকেই চমকে যান। প্রতিরক্ষা মন্ত্রী থাকলেও এতদিন রাজনাথকে তেমন গুরুত্বই দিতেন না মোদী-শাহ। যাবতীয় সিদ্ধান্ত নিজেরাই নিতেন। এবার সম্ভবত ‘বিপদ’ বুঝে রাজনাথকে এগিয়ে দেওয়া হলো বলে মনে করা হচ্ছে। রাজনাথের পরের বক্তা ছিলেন অমিত শাহ। তৃতীয় বক্তা ছিলেন নীতিন গড়কড়ি। এটা সবচেয়ে বড় ‘চমক’। মোদী-শাহ জুটির সঙ্গে সঙ্ঘের ‘কাছের মানুষ’ গড়কড়ির কোনওদিন সুসম্পর্ক ছিল না। মন্ত্রিসভাতেও সেভাবে ‘সক্রিয়’ ভূমিকায় এক দশকে দেখা যায়নি গড়কড়িকে। এদিন তাঁকেও বলতে দেওয়া হয় দেখে রাজনৈতিক মহলের অভিমত, এককভাবে বিজেপি গরিষ্ঠতা হারানোয় মোদী-শাহ জুটি বেশ চাপে আছে বোঝা যাচ্ছে।
এদিকে, বিজেপি সংসদীয় বৈঠক কেন হলো না, সেই নিয়েও প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে দলের অন্দরে। দলেরই কেউ কেউ বলছেন, সংসদীয় বৈঠক হলে প্রবল প্রশ্নের মুখে পড়তে হতো মোদী এবং শাহকে। এতদিন ধরে চাপের মুখে নীরব থাকা বহু বিজেপি সাংসদ ‘সুযোগ বুঝে কোপ মারার’ চেষ্টা করতেন মোদী-শাহকে। যাবতীয় ক্ষোভ উগরেও দিতে পারতেন তাঁরা। এমনকি মোদীকে ফের প্রধানমন্ত্রী হিসাবে দলের সিংহভাগ সাংসদ মেনে নিতেন কী না, তা নিয়েও সন্দেহ ছিল বলে জানা যাচ্ছে। সেই আশঙ্কা থেকেই নাকি এদিন বিজেপি সংসদীয় দলের বৈঠক না করে সরাসরি এনডিএ সংসদীয় দলের বৈঠক ডাকা হয় বলে জানা গিয়েছে।

 

Comments :0

Login to leave a comment