গল্প / মুক্তধারা , বর্ষ ৩
বিচ্ছিন্ন এক সময়ে
----------------------------
রাহুল চট্টোপাধ্যায়
অদ্ভূত কিছু সময় আসে যখন আপনি কিছুই খুঁজে পাবেন না সামনে। কেবল একটা অন্ধকার রাস্তা, একটা নিরবচ্ছিন্ন উদ্দেশ্যহীনতা গ্ৰাস করে নেয় সত্তাকে-
কথাগুলো ভাবতে ভাবতে বইতে চোখ রাখে অনুপম। উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা সামনে। পড়তে হবে। কিন্তু মন বসছে কি? কেবল চোখের সামনে ভেসে উঠছে উজ্জয়িনীর মুখটা। এলোমেলো চুল, মুখে একটা চনমনে ভাব,সবসময় আনন্দে আর আবেগে ভরপুর সে। ক্লাস ইলেভেনে যখন সে ভর্তি হল তখনই অনুপমের ভালো লেগেছিল তাকে। এই ভালোলাগাটা ঠিক কেমন অনুপম বুঝতে পারে নি। কেমন একটা অকারণ অনুভব, একটা বুক ধড়ফড় করা অস্থিরতা। এভাবেই কেটেছে দু বছর।
তারপর একদিন উজ্জয়িনী হারিয়ে গেল। একদিন ভোরে সে যেন কোথাও চলে গেল। জীবন না মৃত্যু বুঝতে পারল না অনুপম।কেবল অস্তিত্বহীন অস্তিত্বে চেতনাকে নিয়ন্ত্রণ করছে সে।স্কুলের লাইব্রেরী ঘরে শেষ দেখা হয়েছিল।তারপর-,তারপর আর ভাবতে পারে না অনুপম। উজ্জয়িনীর বাবা মা আজও পাগলের মতো খুঁজে চলেছেন তাকে,সর্বত্র ঘুরছেন যেখানে যেখানে যাওয়ার, কিন্তু তাকে কেউ খুঁজে এনে দিতে পারে নি।বরং ব্যাখ্যা এসেছে বিভিন্ন,সূত্র আসে নি। হাহাকার আছে ,বিদ্রোহ আছে, প্রাপ্তি নেই।
জানলার বাইরে তাকিয়ে এসবই ভাবছিল অনুপম। সামনে ভূগোল বই-এর পাতা ফ্যানের হাওয়ায় পত্ পত্ করে উড়ছিল। ভূগোল থেকে জ্যামিতি সব একাকার হয়ে হয়ে কি এক শব্দ যেন মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিল।
বাইরে বৃষ্টি পড়ছে। জানলার বাইরে জাম গাছটার পাতা থেকে অনবরত জল টুপিয়ে পড়ছে মাটিতে। জলের এক একটা ফোঁটা কখনো কখনো একটু চুঁইয়ে নেমে আসছে।
অনুপমের মধ্যে ওই চুঁইয়ে পড়া জলবিন্দুর মতো নানা প্রশ্ন,নানা অসহায়তা কাজ করে যায়। মনে হয় উজ্জয়িনীর জন্য কিছু করা দরকার যা হয়তো টেবিলে বসে সম্ভব নয়,সম্ভব নয় চুপচাপ বসে থেকে। আসলে ভূগোল, ইতিহাস, জ্যামিতি, পরিমিতি সব বদলে গিয়েছে।তাই হয়তো পথে নেমে খুঁজতে হবে সৃত্রগুলোকে।
অনুপম মোবাইলটা হাতে নিয়ে কল করে অনিন্দ্যকে। অনিন্দ্যর সাহায্য লাগবে। অনেকর সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে পথে নামার আগে।
Comments :0