recruitment scam

সাবজেক্টই নেই, শিক্ষক নিয়োগ করছে রাজ্য

জেলা

কলেজে যে বিষয়টিই নেই সেই বিষয়ে শিক্ষক নিয়োগ হয়েছে এবং তারা বিগত কয়েকবছর ধরে বেতনও পাচ্ছেন।

এই ঘটনায় চর্চায় পূর্ব মেদিনীপুর জেলার মহিষাদল রাজ কলেজ। অনেকে এটাকে প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতি বলছেন। সূত্রের খবর, মহিষাদল রাজ কলেজে ২০২১ সালে স্যাক্ট-২ হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট বিষয়ে ৩ জনকে শিক্ষক হিসাবে নিয়োগ করা হয়। ২০২১ সালের ২২ জানুয়ারি পশ্চিমবঙ্গ সরকারের উচ্চশিক্ষা দপ্তরের একটি নির্দেশিকা ছিল। সেই নির্দেশিকা অনুযায়ী ২০১৯ সালের ১৩ জুলাই অথবা তারও আগে থেকে যে সমস্ত অতিথি অধ্যাপক কলেজে পড়াচ্ছেন তাদেরকে যোগ্যতা এবং পড়ানোর অভিজ্ঞতা অনুযায়ী স্যাক্ট ১. এবং ২তে অন্তর্ভুক্ত করতে সবে। সেই নির্দেশিকা অনুযায়ী মহিযাদল রাজ কলেজ কর্তৃপক্ষ নিয়োগ দেয়। সেই সময়েই হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট বিষয়ে স্যাক্ট ২ শিক্ষক হিসাবে অর্ণব পাত্র, ড. সৌরভ পট্টনায়েক, শুভেন্দু করকে নিয়োগপত্র দেয়। এখন প্রশ্ন কলেজে যদি হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট বিষটাই না থাকে তাহলে ওই বিষয়ে নিয়োগ দেওয়া যায় কি? ছাত্র ছাত্রী সহ শিক্ষকমহলের মতে শাসক দলের মদতে সবই সম্ভব।

স্যাটের নিয়ম অনুযায়ী প্রতি সপ্তাহেও দিন কলেজে পড়াতে হবে। তাহলে এই তিনজন কোন বিভাগে পড়ান? খোঁজ নেওয়া হলো কলেজের ভোকেশনাল ডিগ্রি কোর্স বিভাগে। এখানকার ডিরেক্টর ড. সঞ্জয় সেনকে ফোন করা হয়। তিনি বলেন "অর্ণব পাত্র, সৌরভ পট্টনায়েক এবং শুভেন্দু কর তিনজনই কলেজের স্যাক্ট শিক্ষক বলে জানি। তবে এনারা আমার বিভাগেই পড়ান।" প্রসঙ্গত ভোকেশনাল বিভাগের শিক্ষকদের বেতন স্যাক্ট শিক্ষকদের থেকে অনেকটাই কম।

আদতে এই কলেজে হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট বিষয়টি পড়ানো হয়না তেমনটা জানিয়েছেন কলেজের অধ্যক্ষ গৌতম মাইতি। তাহলে এই বিষয়ে তিনজন শিক্ষক নিয়োগ হয়েছে কেন? প্রশ্নের জবাবে অধ্যক্ষ বলেন আমি 'বছর দুয়েক হলো কাজে যোগ দিয়েছি। আমার সময়ে এ নিয়োগ হয়নি। আগের অধ্যক্ষ কিভাবে নিয়োগ করেছেন বা উচ্চশিক্ষা দপ্তর কিভাবে অনুমোদন দিয়েছেন তা বলতে পারবো না। তবে এই বিষয়টি আমাদের কলেজে পড়ানো হয়না সেটা বলতে পারি।" তাহলে ওই তিনজন শিক্ষক কোন বিষয় পড়ান? অধ্যক্ষ জানান "ওনারা কলেজের ভোকেশনাল ডিগ্রি কোর্স বিভাগে পড়ান।"

২০১৯ সালের ৩ মে কলেজের তৎকালীন অধ্যক্ষ অসীম কুমার বেরা অর্ণব পাত্রকে রিটেল মার্কেটিং এবং অপারেশন বিভাগের গেস্ট টিচার হিসাবে একটি নিয়োগপত্র দিয়েছিলেন। নিয়োগ পত্রে ভোকেশনাল ডিগ্রি বিভাগের বিষয়ের উল্লেখ থাকলেও ওই বিভাগের প্রধানকে সেই নিয়োগপত্রের কপি দেওয়া হয়নি। অর্ণব পাত্রের নিয়োগপত্র অনুযায়ী তার বেতন নির্ধারণ করা হয় ৪৫০০ টাকা। আরও একটি বিষয় সামনে এসেছে। ভোকেশনাল বিভাগ থেকেও বেতন নিয়মিত নিয়েছেন অর্ণব পাত্র।

এখানে জোরালো প্রশ্ন অর্ণব পাত্র কলেজ এবং ভোকেশনালের শিক্ষক সরবরাহকারী সংস্থা অর্থাৎ ট্রেনিং পার্টনার উভয়ের থেকেই বেতন গ্রহন করতো কি? এই অর্ণব পাত্রর বাবা সমীর পাত্র কলেজের ইতিহাস বিভাগের প্রধান। সেই সঙ্গেই তিনি কলেজের বার্সার ও কলেজ পরিচালন সমিতিরও সদস্য।

এ প্রসঙ্গে অর্ণব পাত্র বলেন "আমি ভোকেশনালে রিটেল ম্যানেজমেন্ট এবা অপারেশন বিষয়টি পড়াই। কলেজের বাণিজ্য বিভাগের স্নাতকেও রিটেল ম্যানেজমেন্ট পড়াই। কিন্তু অর্ণব পাত্রর কথার সঙ্গে বাণিজ্য বিভাগের কথার কোনও মিল নেই। বাণিজ্য বিভাগের দাবি অর্ণব পাত্র বাণিজ্য বিভাগের কোনও বিষয় পড়ায় না। সে কেবল ভোকেশনালে পড়ায়। অন্য দু'জন ড, সৌরভপট্টনায়েক ভোকেশনাল বিভাগে হেলথ কেয়ার বিষয় ও শুভেন্দু কর ভোকেশনাল বিভাগের হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিষয়ে পড়ান। এই ঘটনায় কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ অসীম কুমার বেরা বলেন "যা হয়েছে আলোচনার মাধ্যমেই। উচ্চশিক্ষা দপ্তর মৌখিকভাবে বলেছিল। তবে এ বিষয়ে লিখিত কোনও মতামত জানায়নি উচ্চ শিক্ষা দপ্তর। আসলে হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট বিভাগের মধ্যেই অনেকগুলি বিষয় আছে। তাই এই বিষয়ে নিয়োগ করা হয়েছিল।" প্রসঙ্গত ভোকেশনাল ডিগ্রি কোর্স বিভাগ ও কলেজের মূল বিভাগগুলির নিয়োগ একই সংস্থা থেকে হয় না। তাদের বেতন কাঠামোও আলাদা। একজন স্যাক্ট শিক্ষক অন্য অনুরূপ বিভাগে পড়াতেই পারেন কিন্তু তিনি যে বিষয়ে নিয়োগপত্র পেয়েছেন সে বিষয়টিতো কলেজে থাকতে হবে। এই তিনজনের নিয়োগপত্রের কোনও বৈধতা আছে কি সেই প্রশ্ন উঠছে।

সূত্রের খবর, প্রাক্তন অধ্যক্ষ অসীম কুমার বেরা ও ইতিহাস বিভাগের প্রধান সমীর পাত্র দু'জনেরই সঙ্গে অত্যন্ত সুসম্পর্ক মহিষাদলের বিধায়ক তথ্য কলেজ পরিচালন সমিতির সভাপতি তিলক চক্রবর্তী সঙ্গে। তাই কি নিয়ম বহির্ভূত এমন কাজ করা সম্ভব হয়েছে? মহিষাদল এলাকার বাসিন্দাদের অভিমত মহিষাদল রাজ কলেজ দুর্নীতির গর্ভগৃহে পরিণত হয়েছে। শাসক দল কলেজকে দলীয় ভাবে পরিচালনা করছে। এঘটনা সামনে আসার পর কলেজের ছাত্র-ছাত্রী সহ একাংশ শিক্ষকরা ক্ষোভপ্রকাশ করেছে।

Comments :0

Login to leave a comment