Mukul Roy

‘জাতীয় দল’ তকমা পেতেই কি শাহের দ্বারে ‘প্রতিষ্ঠাতা’ মুকুল!

জাতীয় রাজ্য

 ‘তৃণমূল কংগ্রেস’ নামের দলের গঠনের আবেদন নির্বাচন কমিশনে জমা দিয়েছিলেন মুকুল রায়ই। ১৯৯৭-র ১৭ ডিসেম্বর। তৃণমূল জাতীয় দলের তালিকা থেকে ছিটকে যাওয়ার পর সেই মুকুল রায় দিল্লিতে হাজির হয়েছেন গত সোমবার।
কাকতালীয় বলে কিছুই হয় না। তাঁর এখন দিল্লি যাত্রার পিছনে নির্দিষ্ট কারণ আছে, বিজেপি নিশ্চিত। তৃণমূলও নিশ্চিত।
‘জাতীয় দলের তকমা’ হারানো নিয়ে ইতিমধ্যেই মমতা ব্যানার্জি এবং শুভেন্দু অধিকারীর ‘ঝগড়া’ টিভিতে, কাগজে দেখানো শুরু হয়ে গিয়েছে। শুভেন্দু দাবি করেছেন যে, জাতীয় দলের তকমা যাতে কাড়া না হয় তার আবেদন জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী চারবার ল্যান্ডলাইনে ফোন করেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে। মমতা ব্যানার্জি তার জবাবে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়েছেন যে, অমিত শাহকে ফোন করেছেন প্রমাণ করতে পারলে তিনি মুখ্যমন্ত্রিত্ব থেকেই ইস্তফা দেবেন।
আর এরই মাঝে সেই অমিত শাহর সঙ্গে দেখা করতে দিল্লিতে হাজির হয়েছেন মমতা ব্যানার্জির জীবনে সবচেয়ে বিশ্বস্ত, ‘সফল’ হিসাবে নিজেকে বারবার প্রমাণ করা মুকুল রায়। গিয়েছেন স্পষ্টই ‘রাজনীতির কাজ’ নিয়ে।
কেন মুকুল রায় হঠাৎ দিল্লি ছুটলেন? এই বিষয়ে বুধবার নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি বলেন, ‘‘কে দিল্লি যাবে, মুম্বাই যাবে, পাঞ্জাব যাবে তাঁর ব্যাপার।’’ ঠিকই তো। কিন্তু যা গত ৪৮ ঘণ্টায় প্রকাশিত হয়নি যে, কে ফোন করার পর ‘অসুস্থ’ মুকুল রায় দুই সঙ্গী নিয়ে দিল্লির দিকে ছুটলেন। কে সেই প্রভাবশালী, যাঁর কথা মুকুল রায় ফেলতে পারেন না। 
মুখ্যমন্ত্রী এদিন আরও বলেছেন, ‘‘উনি তো বিজেপি’র এমএলএ আছেন। ওঁর ছেলে একটা মিসিং ডায়েরিও করেছেন। বাবা মিসিং। এজেন্সি ধরে নিয়ে গেছে। আমি এটা নিয়ে কিছু বলব না। যা বলার ওঁর ছেলে বলবে। স্মল ম্যাটার। বাট মিসিং ইজ ভাইটাল।’’
২০২১-এ বিধানসভা নির্বাচনের কয়েকমাস পরে বিজেপি ছেড়ে বাবার হাত ধরে তৃণমূলে ফিরে যাওয়া শুভ্রাংশু দাবি করেছিলেন, ‘‘বাবা অসুস্থ। দিনে ১৮টি ওষুধ খান। ওর কিছু হয়ে গেলে কে দায়িত্ব নেবে? আমি পুলিশকে জানিয়েছি।’’ অন্যদিকে তৃণমূলের একমাত্র নেত্রী মমতা ব্যানার্জি একবারও বলেননি যে, মুকুল রায় অসুস্থ। বলেছেন, মুকুল রায়ের দিল্লি যাওয়া তাঁর কাছে ‘স্মল ম্যাটার। বাট মিসিং ইজ ভাইটাল।’ সেই ‘ভাইটাল’ কাজের তদন্তে তাঁর পুলিশ বিশেষ কিছুই করেনি ৪৮ ঘণ্টায়। যারা শিবপুরের বাসিন্দা, তৃণমূল-বিজেপি’র যৌথ কর্মীকে মুঙ্গেরে সহজেই খুঁজে পান, সেই পুলিশ দিল্লি গিয়ে মুকুল রায়কে ‘উদ্ধার’ করতে পারছে না কেন?
এদিন মমতা ব্যানার্জির মন্তব্য নিয়ে মুকুল রায়ের প্রতিক্রিয়া জানতে চেয়েছিলেন সাংবাদিকরা। ‘মিসিং’ মুকুল তৃণমূল নেত্রীর মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। মমতা ব্যানার্জির কথাতেই শিলমোহর দিয়েছেন তাঁর দীর্ঘদিনের ‘সেনাপতি।’ নয়াদিল্লিতে মুকুল রায় এদিন বলেছেন,‘‘বিজেপি-তেই ছিলাম। বিজেপি-তেই আছি। রাজ্যে পরিবর্তন চাই। তৃণমূলে যোগ দেওয়ার সময় মানসিকভাবে ঠিক ছিলাম না। এই মুহূর্তে তৃণমূল ভালো অবস্থায় নেই। এ জেলে ও জেলে।’’ 
পার্থ চ্যাটার্জি জেলে। তৃণমূলের আরও দু’জন বিধায়ক জেলে। আরও অনেকের দিকে অভিযোগের তির। এমন সময়ে ছেলের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন মুকুল রায় দিল্লি গিয়েছেন ‘আমি তো বিজেপি-তেই আছি’ বলার জন্য? তৃণমূলের অনেকেই তা বিশ্বাস করতে চাইছেন না। বিজেপি-ও তা বিশ্বাস করছে না। 
মুকুলের ‘রাজনীতির কাজ’ আর তৃণমূলের জাতীয় দলের তকমা হারানোর কোনও সম্পর্ক নেই — এমন কথা জোর দিয়ে বলতে পারছেন না অনেকেই। তাছাড়া আগামী ২৪ এপ্রিল সুপ্রিম কোর্টে অভিষেক ব্যানার্জিকে সিবিআই-ইডি জেরা করতে পারবে কিনা, সেই মামলার শুনানি আছে। মুকুল তাৎপর্যপূর্ণভাবে এদিন বলেছেন, ‘‘দিল্লি নিরাপদ। আমি এখন কয়েকদিন দিল্লিতেই থাকবো।’’

 

 

Comments :0

Login to leave a comment