NEET GUJARAT

নিট-নেট দুর্নীতির গুজরাট মডেল

সম্পাদকীয় বিভাগ

 

একটু একটু করে ঝাঁপি খুলছে নিট-নেট দুর্নীতির প্যান্ডোরার বাক্সের। বিহার, ঝাড়খণ্ড, ওডিশা, উত্তর প্রদেশ, হরিয়ানা, মহারাষ্ট্রের পর এবার নজর কেন্দ্রীভূত হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর খাস তালুক গুজরাটে। স্বাধীন ভারতের ইতিহাসে বর্বরতম ও নৃশংসতম গণহত্যার সঙ্গে জড়িয়ে থাকা গোধরাই হয়ে উঠছে এই সুসংগঠিত দুর্নীতির ভরকেন্দ্র। তদন্ত যত এগচ্ছে ততই কেঁচো খুঁড়তে সাপ বেরোনোর মতো স্পষ্ট হয়ে উঠছে শাসক বিজেপি’র নিবিড় যোগ। দুর্নীতি-কেলেঙ্কারি-বেনিয়ম যাই হোক সেটা শাসক মদত বা যোগ ছাড়া কখনোই ব্যাপক আকারে ছড়াতে পারে না। দেশ-বিদেশের দুর্নীতির ইতিহাস চর্চা করলেই এই সত্য সকলের জ্ঞাত হয়ে যাবে। পশ্চিমবঙ্গে শিক্ষা দুর্নীতি, নিয়োগ দুর্নীতি থেকে যত রকমের দুর্নীতি হয়েছে তার সবক’টিই সরকারি প্রশাসন যন্ত্রকে যুক্ত শাসক তৃণমূলের নিখুঁত পরিকল্পনায় সম্পন্ন হয়েছে। মধ্য প্রদেশের ব্যাপম কেলেঙ্কারির মতো ঘটনাও সরকারি ছত্রছায়াতেই হয়েছে। অস্বীকার করার বিন্দুমাত্র উপায় নেই যে সরকারি মদত ছাড়া কোনও দুর্নীতি সম্ভব নয়। অতি ছোট মানের বিচ্ছিন্ন কোনও অনিয়ম বা দুর্নীতির ঘটনায় কোনও একজন বা কয়েকজন সরকারি আধিকারিক এককভাবে বা কয়োজন মিলে করতে পারেন। কিন্তু সেটা বড় আকারে ও বিস্তীর্ণ পরিসরে সম্ভব নয়। সম্ভব তখনই হয় যখন শাসক দলের পক্ষ থেকে তাকে সংগঠিত করা হয়। শাসক দলের তরফে ডাক এলে আধিকারিকরা হয় স্বেচ্ছায় অথবা বাধ্য হয়ে দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন। নেট-নিট কেলেঙ্কারি তার ব্যতিক্রম নয়।

আবার এটাও মনে রাখতে হবে শাসক দল যেখানে নিবিরভাবে যুক্ত সেখানে তদন্তের নামে যতই ঢাকঢোল পেটানো হোক না কেন শেষ পর্যন্ত সত্য উদঘাটন কখনোই হয় না। তদন্ত পথভ্রষ্ট হয় অথবা গতি হারায়। কিছু উলুখাগড়াকে ধরে সাজা দেওয়া হলেও আসল অপরাধীরা বা অপরাধের নাটের গুরুরা অধরাই থেকে যায়। নেট-নিটের তদন্তের পরিণতিও যে সেই চেনা পথেই হারিয়ে যাবে বলার অপেক্ষা রাখে না। মোদী-শাহর সিবিআই বিজেপি’র নেতা-মন্ত্রীদের এবং তাদের অনুগত ও বিশ্বস্ত আধিকারিকদের ধরে ধরে জেলে পুড়বে এমনটা ভাবার কোনও কারণ নেই। গত ১৩ বছরে মমতা ব্যানার্জির পুলিশ এমন কোনও তদন্ত করেছে যেখানে তৃণমূল নেতা-মন্ত্রীরা ফেঁসে যেতে পারে? বরং তদন্ত করেছে তাদের কীভাবে আড়াল করা যায় সেই পথে। নিট-নেট সিবিআই-ও যে বেশিদূর এগবে না সেটা নির্দ্বিধায় বলে দেওয়া যায়। যদি সত্য উদঘাটনে সরকারের সদিচ্ছা থাকত, যদি এমন মনোভাব থাকত যে দলের নেতা-মন্ত্রী হলেও কাউকে ছেড়ে কথা বলা হবে না তাহলে সংসদে স্বৈরাচারী কায়দায় জোর করে আলোচনা আটকে দিত না। সরকার যদি নিজেদের সৎ ও স্বচ্ছ মনে করে থাকে, যদি দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সের নীতিতে বিশ্বাস করে তাহলে বিরোধীদের দাবি করার আগেই নিজেরাই আলোচনার ব্যবস্থা করতো। কিন্তু তা করেনি। অর্থাৎ বিসমিল্লায় গলদ আছে। গলদ যে আছে তা ইতিমধ্যেই বিহার ও হরিয়ানায় বিজেপি যোগ থেকেই স্পষ্ট। সর্বশেষ যে তথ্য সামনে আসছে তাতে মোদী-শাহের গুজরাটের নাম সামনের সারিতে উঠে আসছে। দেশের বিভিন্ন রাজ্য থেকে ৩০ থেকে ৬০ লক্ষ টাকা দিয়ে গোধরার যে কেন্দ্রে পরীক্ষা দিতে এসেছিল  পরীক্ষার্থীরা সেই কেন্দ্রে সঙ্গে মিলেছে বিজেপি’র ঘনিষ্ঠ যোগ। তাদের নানা কর্মসূচিতে বিভিন্ন সময় প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী উত্তর প্রদে‍‌শের রাজ্যপাল, গুজরাটের শিক্ষা মন্ত্রী যোগ দিয়েছেন। ঐ সংস্থা প্রতি বছর নিয়ম করে বিজেপি তহবিলে টাকা দেয়। এর পরও আশা করা যায় মোদীরা ঠিকঠাক তদন্ত করবে? দুর্নীতিতে দলীয় যোগ উন্মোচন করবে?

Comments :0

Login to leave a comment