Raju Jha murder case

রাজু ঝা হত্যায় ১৮ দিন পর গ্রেপ্তার একজনকে

জেলা

 অবশেষে ১৮ দিন পরে শক্তিগড় শুটআউট কাণ্ডে একজনকে গ্রেপ্তার করতে পারল পুলিশ। গত ১ এপ্রিল শক্তিগড়ে ল্যাংচার ধোকার দোকানের সামনেই গাড়িতে বসে থাকা কয়লা মাফিয়া রাজু ঝাকে পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জে পরপর চারটি গুলি করে খুনের ঘটনায় রাজ্যজুড়েই চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছিল। ১৮ দিন পরে প্রথম ‘ব্রেক থ্রু’ মিললেও জেলা পুলিশের তরফে ধৃতের সঙ্গে খুনের ঘটনার কী যোগ তা জানাতে অস্বীকার করা হয়েছে। খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে এড়িয়ে গিয়েছে পুলিশ।
জানা গিয়েছে, ধৃত যুবকের নাম অভিজিৎ মণ্ডল। পূর্ব বর্ধমান জেলার পুলিশ সুপার কামনাশিস সেন দাবি করেছেন, ধৃত অভিজিৎকে দুর্গাপুর থেকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। অভিজিৎ দুর্গাপুরের একটি বেসরকারি অফিসে কর্মরত ছিল। তার বাড়ি বাঁকুড়ার গঙ্গাজলঘাঁটিতে। এদিন সিজেএম আদালত বিচারক পুলিশের আবেদনের ভিত্তিতে আসামিকে ১৪ দিনের পুলিশি হেপাজতের নির্দেশ দিয়েছেন। 
ধৃত ব্যক্তি তৃণমূল ঘনিষ্ঠ কয়লা মাফিয়া নারায়ণ খারকের গাড়ি চালাতো বলে জানা গিয়েছে একটি সূত্রে। আসানসোল রানিগঞ্জ কয়লাঞ্চলে আরেক পরিচিত নাম এই নারায়ণ খারকে। মূলত শাসক দলের ঘনিষ্ঠ এই কয়লা মাফিয়া। রাজু ঝা হত্যাকাণ্ডের পরে একাধিক সূত্রে এই কয়লা মাফিয়ার নাম এলেও গত সপ্তাহ পর্যন্ত প্রকাশ্যে তাঁকে দুর্গাপুরে দেখা গিয়েছে। দু’দিন আগেও দেখা গিয়েছে। যদিও পুলিশের তরফে কোনও হেলদোল লক্ষ্য করা যায়নি। এদিন দুপুরে নরায়ণ খারকের গাড়ির চালক গ্রেপ্তার হওয়ার পরে অবশেষে এদিন রাতে দুর্গাপুরের সিটি সেন্টারে নারায়ণ খারকের অফিসে তল্লাশি অভিযান চালায় পুলিশ। রাত আটটা নাগাদ সিট’র আধিকারিকরা সিটি সেন্টার চত্বরে আসে। ঘটনাস্থলে পুলিশের দশটা গাড়ি, নারায়ণ খারকের অফিস ঘিরে চলে তল্লাশি। অফিসও সিল করে দেওয়া হয়। গাড়ির চালক অভিজিৎ মণ্ডলকে সিটি সেন্টারে নারায়ণ খারকের এই অফিস থেকেই মঙ্গলবার রাতে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। 
রাজু ঝাঁ খুনের ১৮দিন পর বর্ধমানের পুলিশ সুপার এদিন সাংবাদিক সম্মেলন করে জানিয়েছেন, ধৃতকে পুলিশি হেপাজতে নিয়ে আমরা বের করবো এই খুনে তার কী ভূমিকা ছিল? কোন সূত্র ধরে রাজু ঝাঁ’র খুনে অভিজিৎ মণ্ডলকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে তাও তিনি জানাতে পারেননি। খুনের মোটিভ কী তাও জানাতে চাননি তিনি। সাংবাদিকদের যাবতীয় প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানিয়েছেন অভিজিৎকে পুলিশি হেপাজতে নিয়েই সব জানা যাবে। 
অন্যদিকে ধৃতের আইনজীবীরা এদিন সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেন রাজু ঝার  খুনের ১৮দিন ধরে পুলিশ তদন্তের অগ্রগতি ঘটাতে পারেনি বা কিনারা করতে চায়নি।  গত মঙ্গলবার রাতে পুলিশ দুর্গাপুর থেকে ৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। অভিজিৎ মন্ডল ছাড়াও রাজু বেসরা ও মহম্মদ তাহারুল কাফিকে ধরে পুলিশ। অভিজিৎকে গ্রেপ্তার দেখালেও বাকি দু’জনকে শক্তিগড় থানায় আটক করে নাকি জিজ্ঞাসাবাদ চালাচ্ছে পুলিশ। ধৃতের আইনজীবীদের অভিযোগ, পুলিশ গ্রেপ্তার মেমোতে স্থানীয় কাউকে সই করায়নি, দুর্গাপুর থানাও জানে না, সিটি সেন্টার থানার আইসি জানিয়েছেন, তাঁরাও জানেন না অভিজিৎ মণ্ডলকে বর্ধমান পুলিশ আটক করেছে কি না। 
এদিকে এখনও পর্যন্তও ঘটনাস্থল থেকে মুহূর্তেই পুলিশের সামনে দিয়ে পালিয়ে যাওয়া গোরু পাচারে সিবিআই’র চার্জশিটে অভিযুক্ত শেখ আবদুল লতিফের হদিশও জানা যায়নি। আবদুল লতিফের গাড়ি চালক নূর হোসেনকে চার ঘণ্টার বেশি জেরা করেও পুলিশ লতিফের হদিশ জানতে পারলো না কেন? গত আগস্ট মাসে সিবিআই’র চার্জশিট নাম থাকার পরে লতিফ বাংলাদেশে পালিয়ে যায় বলে জানা যায়। তারপর ফিরে রাজু ঝার সঙ্গেই ব্যবসায় যোগ দেয়। একটি ইসিএলের বৈধ খনি উত্তোলনের পরে সড়কপথে পরিবহণের অর্ডারের (ডিও) টেন্ডার অন্যদিকে বর্ধমানের বিস্তীর্ণ বালি ঘাটে দখলদারি। পুলিশের সামনে দিয়েই লতিফ উধাও হয়ে গেলেও প্রশাসনের তরফে প্রথমে সে গাড়িতে ছিল সেটাও কেন অস্বীকার করা হচ্ছিল? একের পর এক রহস্যের জালেই এখনও আটকে কয়লা মাফিয়া রাজু ঝা’র হত্যাকাণ্ড।

 

Comments :0

Login to leave a comment