PM Modi Morena

জাতগণনায় আশঙ্কা প্রকাশ করে ধর্মীয় মেরুকরণের চেষ্টা মোদীর

জাতীয়

মধ্য প্রদেশের ভোট যত এগিয়ে আসছে, ততই বেলাগাম বেপরোয়া সাম্প্রদায়িক মেরুকরণ করছেন খোদ প্রধানমন্ত্রী। বুধবার মোরেনার জনসভা থেকে মানুষের মধ্যে ধর্মীয় বিভেদের উসকানি দিতে প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেছেন, কংগ্রেস বলে দেশের সম্পদের উপরে প্রথম অধিকার মুসলমানদের। ভোটের সভা থেকে সরাসরি একটি সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে এইভাবে ঘুরিয়ে উসকানি দিলেন প্রধানমন্ত্রী। এরপরেই তিনি বলেন, আমরা বলছি দেশের সম্পদের উপরে প্রথম অধিকার গরিব এবং বঞ্চিতদের। যদিও বিরোধী দলগুলির পক্ষ থেলে মনে করিয়ে দেওয়া হয়েছে মোদীর আমলেই বৈষম্য ভয়াবহ রকমের বেড়েছে। আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলির প্রতিবেদনে সেটাই উঠে এসেছে। বিপরীতে বিপুল সম্পদ বেড়েছে প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ শিল্পপতির। বিরোধীদের এদিনও তিনি জাতিবাদী পার্টি বলেছেন এবং নিজেকে ফের গরিবের ছেলে হিসাবে তুলে ধরার চেষ্টা চালিয়েছেন। 
বিরোধীদের জাতভিত্তিক গণনার দাবি যত জোরালো হয়ে উঠছে, ততই আশঙ্কিত হয়ে পড়ছেন সেটা স্পষ্ট হয়ে গেছে তাঁর এদিনের বক্তব্যে। মোদী দাবি করেছেন, আমার কাছে গরিবই একমাত্র জাতি। তাঁর সরকারের প্রতিটি গরিব কল্যাণ যোজনার লাভার্থী আদিবাসী, দলিতরাই হয়েছেন বলে দাবি করেন। মোদী সব গরিবকে পাকা ঘরের গ্যারান্টি দিয়েছেন বলে দাবি করেন। মধ্য প্রদেশে আবাস যোজনা নিয়ে বিপুল দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। সেই কথা মাথায় রেখেই সঙ্গে সঙ্গে বলেছেন, যাদের আবাস যোজনায় এখনও ঘর মেলেনি, তারা ফের মধ্য প্রদেশে বিজেপি সরকার আসলেই ঘর পেয়ে যাবেন। ফের বিনামূল্যে রেশনের কথাও বলেন। নিজেই বলেছেন, মানুষের চিন্তা ছিল ডিসেম্বরের পরে কী হবে তা নিয়ে। রেশনের জন্য খরচ বেড়ে যাবে। আর চিন্তা রইলো না। এক্ষেত্রেও তিনি জাতের হিসেব দিয়ে বলেছেন, বিনামূল্যে রেশনেও দলিত, আদিবাসী আর ওবিসিদের ফায়দা হচ্ছে। কংগ্রেস নির্বাচন কমিশনে গেছে যাতে আমি রেশন দিতে না পারি। আপনাদের রেশন ছিনিয়ে নেওয়ার যারা ষড়যন্ত্র করছে সেই কংগ্রেসকে ভোট দেবেন না, আবেদন করেন মোদী। প্রতি বুথ থেকে কংগ্রেসকে সাফ করে দেওয়ার ডাক দেন। আরও অনেক কেন্দ্রীয় প্রকল্পের কথা বলার পরেও প্রধানমন্ত্রী একইভাবে বলেন, বিজেপি সরকারের এইসব প্রকল্প দলিত আদিবাসী ওবিসিদের স্বশক্তকরণ করছে। গরিব-বঞ্চিতরাই তার কাছে একমাত্র জাতি বলে হাততালি কুড়ানোর পরে গোটা বক্তৃতাতেই বারে বারে নানা জাতপাতের এইভাবেই উল্লেখ করে গেছেন প্রধানমন্ত্রী। আম্বেদকর থেকে রবিদাস পর্যন্ত উল্লেখ করে কী কী করেছেন তার বিবরণ দিতে থাকেন জাতপাতের অঙ্ক কষেই। 
মধ্য প্রদেশে ১৮ বছর বিজেপি সরকার থাকার পরে মানুষের মধ্যে যে প্রবল অসন্তোষ তৈরি হয়েছে, তার দায় কংগ্রেসের ঘাড়ে এদিন চাপালেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। মোরেনার সভা থেকে তিনি দাবি করেন, বিজেপি’র ডবল ইঞ্জিনের সরকারের সময়ে মধ্য প্রদেশে নতুন শক্তি তৈরি হয়েছে। কিন্তু ২০১৪ সালের আগে রাজ্যে বিজেপি সরকার থাকলেও কেন্দ্রে কংগ্রেসের সরকার ছিল। সেই সরকার রাজ্যের বিজেপি সরকারের সঙ্গে সহযোগিতা তো করেইনি উলটে বাধা দিয়েছে। সমস্যা তৈরি করেছে। কাজ করতে দেয়নি। মোদী আরও দাবি করেন, তিনি গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন সেই সময়। এমন কোনোদিন ছিল না যেদিন কেন্দ্রের কংগ্রেস সরকার তাঁকে বিব্রত করেনি, কাজে বাধা তৈরি করেনি। অর্থাৎ এতদিন ধরে রাজ্যের বিজেপি সরকার নিয়ে মানুষের যে ক্ষোভ তা সামাল দিতে শেষ পর্যন্ত এই রাস্তা নিতে হয়েছে প্রধানমন্ত্রীকে। মধ্য প্রদেশে ভোট প্রচার শুরু করে তিনি শুধু নিজের সরকারের গুণকীর্তন করছিলেন। মধ্য প্রদেশের বিজেপি সরকার বা মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহানের নাম মুখে আনছিলেন না। তাতে রাজ্যের বিজেপি আরও বেকায়দায় পড়ে। শিবরাজ সরকার নিয়ে বিরোধীদের অভিযোগ সত্যতা পেয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত রাজ্যে তার দলের সরকারের কাজের ব্যর্থতার দায় কংগ্রেসের ঘাড়ে চাপানোর এই পন্থা বের করেছেন। মধ্য প্রদেশে বিজেপি’র হারের আশঙ্কাও প্রকাশ করে ফেলেছেন মোদী। বলেছেন, কংগ্রেস যদি এখানে চলে আসে তাহলে মোদীকে দিল্লিতে কাজ করতে দেবে না! আপনাদের জন্য কাজ করতে পারবো না! বক্তৃতার শুরুতে বলেছিলেন, কংগ্রেস দিল্লিতে থেকে মধ্য প্রদেশের বিজেপি সরকারকে, গুজরাটে তাঁর সরকারকে কাজ করতে দেয়নি। বক্তৃতার শেষে এসে বললেন, কংগ্রেস মধ্য প্রদেশে এসে গেলে দিল্লিতে তাঁর সরকারকে কাজ করতে দেবে না! 
প্রধানমন্ত্রী দাবি করেন, মধ্য প্রদেশের যুবকরা নাকি বলছেন আমাদের বাবা-মায়ের জন্য কংগ্রেস কিছু করেনি। আমাদের জন্য কী করবে? এরপরে কংগ্রেসের পরিবারবাদ নিয়ে পরিচিত আক্রমণ করেন। গরিব মধ্যবিত্ত আদিবাসী পিছড়ে দলিত এদের পরিবারের ভালো করাই নাকি বিজেপি’র একমাত্র কাজ, এমন দাবিও করেন। জনতার জন্য কাজ করাই তাঁর স্বপ্ন বলে দাবি করেন। মোদীর গ্যারান্টি কিরকম তার ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, ওয়ান র্যাাঙ্ক ওয়ান পেনশন মোদী করে দিয়েছে। চম্বলের এই অঞ্চল থেকে বিপুল সংখ্যক দেশের সেনাবাহিনীতে ছিলেন, আছেন। সেই হিসাবেই এদিনের সভায় এসে সেনা নিয়ে অনেকখানি সময় খরচ করেন প্রধানমন্ত্রী। এরসঙ্গেই তিনি জাতীয়তাবাদের আবেগ জুড়ে দেন। কংগ্রেস দেশে দুর্নীতি শুরু করেছে সেনাবাহিনীর থেকে বলে তিনি অভিযোগ আনেন। কংগ্রেস দেশের সেনাকে বিদেশি হাতিয়ারের উপরে নির্ভরশীল করে রেখেছিল বলে অভিযোগ করেছেন। উল্লেখ্য, মোদীর সরকার দেশের সমস্ত অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরির বেসরকারিকরণ করছে। যা নিয়ে প্রতিরক্ষা শিল্পের শ্রমিক কর্মীরা আন্দোলন করছেন। 
মোদীর ভাষণে একই কথা বারবার চলতে থাকায় ক্লান্ত বিজেপি কর্মীরাও সভা ছেড়ে চলে যেতে শুরু করলে মোদী বলতে থাকেন, যে যেখানে আছেন বসে পড়ুন। পিছনে আর জায়গা নেই! এত ভিড় হয়েছে আর ভেতরে আসার কোনও সুযোগ নেই! বক্তৃতার শেষে কর্মীদের উৎসাহিত করার চেষ্টা করেন। বলেন, সব ঘরে যেতে হবে। পদ্ম ফোটাতে হবে। তার জন্য প্রতিটি ভোটারের কাছে যেতে হবেন।
 

Comments :0

Login to leave a comment