অন্যকথা | মুক্তধারা
ওঠো গো ভারতলক্ষ্মী
কৃশানু ভট্টাচার্য্য
বছরের অন্য দিনগুলোতে নাগিন নাগিন কিংবা লুঙ্গি ড্যান্স বাজানো ব্যান্ডওয়ালা ২৬ শে জানুয়ারি সকালে যখন তাঁর ক্যাসিওতে' সারে জাহাসে আচ্ছা' র সুর তুলে শীতের সকালের ঘুম ভাঙ্গায় সে সময় অন্যমনস্ক হলে কারো দু'চারটে ভুল হয়ে যায়। সারা বছর যে মানুষটা কথায় কথায় হিন্দু-মুসলমান করে বেড়ায়, দেশের জনসংখ্যা নিয়ে , জনসংখ্যার অনুপাত নিয়ে কিংবা জনসংখ্যার বৃদ্ধির হার নিয়ে বাজার গরম করে ২৬ শে জানুয়ারির সকালের সেই লোকটাও সংবিধানের প্রস্তাবনা পাঠ করতে করতে ধর্মনিরপেক্ষতার পক্ষে গলা তোলে। মেঘহীন আকাশে যখন ত্রিবর্ণরঞ্জিত পতাকা উড়তে থাকে, উড়তেই থাকে সেই সময় সেই পতাকাকে অভিবাদন জানানো মানুষগুলো অনেকেই হয়তোবা 76 বছর আগের ভারতবর্ষের কথা ভাবতে ভাবতে। আজকের ভারত বর্ষে পৌঁছে অন্য ভাবনা ভাবতে শুরু করেন। মুখ আর মুখোশের একটা চোর-পুলিশ খেলা চলে আমাদের ২৬ শে জানুয়ারি আর ১৫ই আগস্টে। বিদ্বেষ , হতাশা, অসহায়তা কিংবা অপূর্ণতার গ্লানিকে আড়াল করে আমাদের অনেকেই আকাশ ফাটিয়ে বলে উঠি- 'এই দেশ আমার দেশ, এই দেশের প্রতিটি মানুষের ভালো-মন্দ আমার ভাল মন্দ।'
১৯৪৯ সালে সংবিধানের প্রস্তাবনা রচনা করবার সময় কিংবা পৃথিবীর সর্ববৃহৎ গণতান্ত্রিক দেশের আগামী দিনের নিয়মকানুন ঠিক করতে গিয়ে সেই সময়ের প্রাজ্ঞ ভারতীয়রা যে উদারতার পরিচয় দিয়েছিলেন আজকের ভারতবর্ষে সে উদারতা আক্রান্ত। আক্রান্ত মানবতাও। বরং দোষারোপের খেলা চলে পাঞ্জাব, বোম্বাই, গুজরাটে, তামিলনাড়ুতে কিংবা এই বাংলায়।
গোটা দেশকে এক করে ভাববার মুখোশ মুখে একদল মানুষ তাদের হিংস্র বিভেদকামী মুখটাকে আড়াল করে। প্রতি পদে মানুষে মানুষে বিভাজনের এক খেলা চলে আড়ালে আবডালে। এরই মধ্যে আসে ২৬ শে জানুয়ারি। স্কুল-কলেজে উদারতার পাঠ নেয় শৈশব, কৈশোর। যৌবনে সে পাঠ বদলের জন্য উদগ্রীব হয়ে থাকে নতুন শিক্ষকেরা।
ভারত আবার জগত সভায় শ্রেষ্ঠ আসন লবে- এ প্রত্যয় বুকে নিয়ে যে শৈশব যে কৈশোর জাতীয় পতাকার দিকে তাকিয়ে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে দু হাত দিয়ে সেই স্বপ্নকে আগলে রাখাটাই ২৬শে জানুয়ারির সবচেয়ে বড় কাজ। তবেই তো বলা যাবে,' জননী তোমার চরণতলে এই ভারতবর্ষের অগণিত নরনারী একত্রে নিরাপদে থাকবার জন্য বসে আছে। তুমি তাদের আশ্রয় দাও।'
Comments :0