PM Modi

ঘরে-বাইরে চাপের মুখে আচমকাই মোদীর ফোন আব্বাসকে

জাতীয়

 

 

 ঘরে-বাইরে যখন প্যালেস্তিনীয় মানুষের আকাঙ্ক্ষা-অধিকার-নিরাপত্তার পক্ষে মত জোরদার হচ্ছে, চাপের মুখে বেগতিক বুঝেও নরেন্দ্র মোদীর ‘শুভবুদ্ধির’ উদয় হলো। হাসপাতালে নিরীহ মানুষ মারা নিয়ে গোটা বিশ্বের পাশাপাশি মূলত আরব দুনিয়া যখন ক্ষোভে ফুটছে, তখন কূটনৈতিক স্তরে জমি ফিরে পেতে বৃহস্পতিবার হঠাৎই ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী প্যালেস্তাইন ও সেখানকার মানুষের দুর্দশার কথা মনে পড়ল। শুধু নিজেই প্যালেস্তাইন প্রধান মাহমুদ আব্বাসের সঙ্গে কথা বললেন তাই নয়, বিদেশ মুখপাত্রকে দিয়ে আরও একবার দুই রাষ্ট্র সমাধান সূত্রের কথা আওড়ালেন।
ইজরায়েল-প্যালেস্তাইন সংঘর্ষ শুরু হতেই ভারতের বহুদিনের ঘোষিত অবস্থান থেকে সরে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী ইজরায়েলের হয়ে গলা চড়িয়েছিলেন। এমনকি গাজার হাসপাতালে ইজরায়েলী বোমাবর্ষণের পরেও গতকাল শুধু ‘স্তম্ভিত’ বলেই দায় সেরেছিলেন। এড়িয়ে গেছেন ইজরায়েলের নাম। কিন্তু বিশ্বজুড়ে ইজরায়েলী আগ্রাসনের পাশাপাশি তাদের মদতদাতা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে জনমত জোরদার হতে দেখে বৃহস্পতিবার খানিকটা ‘ড্যামেজ কন্ট্রোলে’ নেমে মোদী টেলিফোনে কথা বললেন প্যালেস্তাইনের রাষ্ট্রপতি মাহমুদ আব্বাসের সঙ্গে। পরে নিজেই এক্স হ্যান্ডেলে মোদী জানিয়েছেন, গাজার আল-আহলি হাসপাতালে হামলায় এতগুলি নিরীহ মানুষের মৃত্যুতে তিনি জানিয়েছেন। একই সঙ্গে ইজরায়েল-প্যালেস্তাইন বিষয়ে নয়াদিল্লির দীর্ঘদিনের অবস্থান স্মরণ করিয়ে দিয়ে মোদী আব্বাসকে আশ্বস্ত করেছেন যে, ভারত প্যালেস্তাইনকে মানবিক সহায়তা পাঠানো অব্যাহতই রাখবে। গত ৭ অক্টোবর থেকে ইজরায়েল-প্যালেস্তাইন সংঘর্ষ চরম পর্যায়ের পৌঁছানোর পর এই প্রথম মোদীর সঙ্গে প্যালেস্তাইনের প্রশাসনিক প্রধানের কথা হলো। তাও হলো আল-আহলি হাসপাতালে প্রায় ৫০০ মানুষের মৃত্যু নিয়ে যখন আন্তর্জাতিক মহলে নিন্দা চরমে উঠেছে, তার দুদিন পর।
‘নজিরবিহীন’ এই ইজরায়েলী হামলা নিয়ে প্যালেস্তাইন প্রশাসন সোচ্চার হতেই ইজরায়েল দাবি করতে থাকে, গাজা থেকে ইসলামিক জিহাদ গোষ্ঠীর ছোঁড়া রকেট লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে আল-আহলি হাসপাতালে গিয়ে আঘাত করে। তবে এই দাবি একেবারেই ধোপে টিকছে না। ঘটনাপ্রবাহ ও তার অভিঘাতে ক্রমেই স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে বিস্ফোরণ ঘটেছে বোমাতেই। আশপাশে এলাকার কোনও ক্ষতি না করে যেভাবে নির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তু আল-আহলি হাসপাতালে আঘাত হানা হয়েছে, তা যে কোনও ‘প্রিসিসন গাইডেড মিউনিশন’ বা স্মার্ট বম্বেরই কাজ তা একেবারেই স্পষ্ট। আর এখানেই ইজরায়েলকে মার্কিন মদতের আরও স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ব্লুমবার্গের একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ৭ অক্টোবর হামাসের সঙ্গে সংঘর্ষ শুরু হওয়ার পর আমেরিকার সংস্থা বোয়িং ইজরায়েলকে এক হাজার ‘স্মার্ট বম্ব’ সরবরাহ করেছে। তাছাড়াও যদিও ইজরায়েলের কাছে নিজেদের তৈরি ‘স্পাইস বম্ব’ও রয়েছে। সেই ‘স্পাইস বম্ব’ও স্মার্ট বম্ব গোত্রের মধ্যেই পড়ে। তাই হাসপাতালে হামলা যে ইজরায়েলের দিক দিয়েই হয়েছে, তা নিয়ে সন্দেহের বিশেষ অবকাশ নেই। যদিও ‘মানবিক কারণে যুদ্ধ সাময়িক ভাবে থামানোর’ যে প্রস্তাব রাষ্ট্রসঙ্ঘে এসেছিল, তাতে একপেশে হয়েই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভেটো দিয়ে দিয়েছে। জরুরি পরিস্থিতিতে সাময়িক ভাবে যুদ্ধ বন্ধ করায় ব্রাজিলের আনা প্রস্তাবটি খারিজ হয়ে গেছে। 
আমেরিকার এই অবস্থানের বিরুদ্ধে কড়া প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন সিপিআই(এম)’র সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি। তিনি বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইজারায়েলী নৃশংসতাকে মদত দিচ্ছে। বৃহস্পতিবার এই প্রসঙ্গে ইয়েচুরি এক্স হ্যান্ডেলে লিখেছেন, ‘প্রথমে বাইডেন শিশুদের জবাই করার জাল খবর প্রচার করলেন এবং তারপরে সে খবর প্রত্যাহার করলেন। এখন আবার বলছেন হাসপাতালে নৃশংস অমানবিক বোমা হামলা ‘অন্য পক্ষ’ চালিয়েছে। মিডিয়ায় যদিও অন্য খবর বের হচ্ছে। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ ইজরায়েলী বর্বরতার পৃষ্ঠপোষকতা করছে।’ ইয়েচুরি বলেন, ‘এটাই মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের আসল রং! গাজা স্ট্রিপে প্যালেস্তিনীয়দের মানবিক সাহায্যের কথা বলছেন বাইডেন, আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জীবন বাঁচাতে সহায়তা প্রদানের প্রস্তাবে ভেটো দিচ্ছে!’ অবিলম্বে সম্পূর্ণ বিনাশকারী এই ইজরায়েলী যুদ্ধ বন্ধ করার ডাক দিয়েছেন ইয়েচুরি। এদিন কোচিতে এক জনসভায় তিনি এই যুদ্ধ বন্ধ করে প্যালেস্তাইনি ভূখণ্ডে বেআইনি দখলদারি বন্ধ করতে ইজরায়েলকে বাধ্য করতে আওয়াজ তুলেছেন। একই সঙ্গে ইয়েচুরি বলেন, ইস্ট জেরুজালেমকে প্যালেস্তাইনের রাজধানী মেনে নিয়ে রাষ্ট্রসঙ্ঘের দুই রাষ্ট্রের সমাধান সূত্রকেও মানতে হবে ইজরায়েলকে।  
বৃহস্পতিবার সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গে কথা বালার সময় ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচী বলেন, ভারত দুই রাষ্ট্র সমাধান সূত্র নিয়ে সরাসরি আলাপ-আলোচনারই পক্ষে। তাঁর কথায়, ‘প্যালেস্তাইন প্রসঙ্গে আমরা আবার পুরানো অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করছি। নিরাপদ ও স্বীকৃত সীমান্তের মধ্যে সার্বভৌম, স্বাধীন প্যালেস্তাইন রাষ্ট্র গঠন নিয়ে সরাসরি আলোচনা শুরুর পাশাপাশি ইজরায়েলের শান্তির পক্ষেই আমাদের দীর্ঘদিনের অবস্থান। আমরা সেখানেই রয়েছি।’
এদিন কংগ্রেসও আরও একবার প্যালেস্তাইন নিয়ে নিজেদের অয়স্থান খোলসা করে দিয়েছে। কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে থেকে রাহুল গান্ধী উভয়েই বলেছেন, আতঙ্ক আর বৈরিতার আবহে বেঁচে থাকা প্যালেস্তিনীয় মানুষের অধিকারের পক্ষে আমরা। একইসঙ্গে তাঁরা গাজার হাসপাতালে যারা বেপরোয়া বোমা ফেলেছে তাদের শাস্তি দিতেই হবে।
 

Comments :0

Login to leave a comment