PM VISHWAKARMA

তা’হলে চালু ‘বিশ্বকর্মা’-র কী হবে, সংশয় মোদীর প্রচারে

জাতীয়

PM VISHWAKARMA শনিবার শিল্পীদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী।

পুরনো প্রকল্পেরই কী নতুন ঘোষণা করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী? হস্তশিল্পী এবং ক্ষুদ্র কারিগরদের জন্য একাধিক প্রকল্পের উল্লেখ সংসদে বিভিন্ন সময়েই করেছে কেন্দ্র। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ভাষণে ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ লক্ষ্যের প্রচারেও এমন প্রকল্পের ঘোষণা শোনা গিয়েছে। 

তা’হলে ফের ‘পিএম বিশ্বকর্মা’ প্রকল্পে নতুন করে লোগো, ট্যাগলাইন চালুর জাঁকালো কর্মসূচি কেন, উঠেছে সে প্রশ্ন।

রবিবার, বিশ্বকর্মা পুজোর উল্লেখ করে, দু’টি বড় প্রকল্পের উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তাঁর দল বিজেপি’র নেতারা আবার প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিনে পুজো দিয়েছেন। এদিন দিল্লি লাগোয়া দ্বারকায় মেট্রো সম্প্রসারণ প্রকল্পের উদ্বোধন করেন মোদী। আন্তর্জাতিক কনভেনশন এবং প্রদর্শনীর কেন্দ্র ‘যশোভূমি’-র উদ্বোধন করেন মোদী। এদিনই ‘পিএম বিশ্বকর্মা’ প্রকল্পের ১৮ জনকে সার্টিফিকেট দেন তিনি। মোদী বলেছেন, ‘‘এই প্রকল্পে দেশে ১৩ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করা হবে।’’

সরকারের তরফে জানানো হয়েছে যে শনিবার দেশের ৭০টি কেন্দ্র থেকে একযোগে ‘পিএম বিশ্বকর্মা’ প্রকল্প চালুর অনুষ্ঠান হয়েছে। চিরাচরিত হস্তশিল্পীদের বিশেষ উৎসাহ দেওয়ার জন্য এই প্রকল্প। আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলের প্রথাগত ক্ষুদ্র উৎপাদনে যুক্ত কারিগরদের। 

পশ্চিমবঙ্গের মতো দেশের বিভিন্ন প্রান্তেই হস্তশিল্পী এবং ছোট কারিগরদের সঙ্কটের খবর রয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে আত্মঘাতী হয়েছেন একাধিক তাঁতশিল্পী। কৃষির সঙ্কটের কারণে গ্রামীণ অর্থনীতিতে তার ছাপ পড়ছে। তার ওপর আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে নকল পণ্য চকচকে মোড়কে হাজির হচ্ছে বাজারে। ফলে পেশা ছেড়ে দিচ্ছেন বহু শিল্পী। ফলে তাঁদের বিশেষ প্রকল্প প্রয়োজন। আর্থিক সহায়তাও জরুরি। 

কিন্তু চলতি বছরের ৩ এপ্রিল লোকসভাতেই কেন্দ্র জানিয়েছিল এমন অংশের জন্য একাধিক প্রকল্প রয়েছে। কেন্দ্রীয় শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রক জানায় যে দক্ষতা বৃদ্ধি ও কর্মসংস্থানের জন্য রয়েছে একাধিক প্রকল্প। যেমন, ‘স্কিল ইন্ডিয়া’, প্রধানমন্ত্রী কৌশল রোজগার কেন্দ্র, পিএম বিশ্বকর্মা কৌশল যোজনা। 

শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রক আরও জানিয়েছিল যে ‘স্কিল ইন্ডিয়া যোজনা’-র আওতায় কৌশল বিকাশ যোজনা, জন শিক্ষণ সংস্থান, জাতীয় শিক্ষানবিশ বিকাশ প্রকল্প চালু রয়েছে। কেন্দ্রের দাবি, আইটিআই-গলির মাধ্যমে দেওয়া হচ্ছে প্রশিক্ষণ। ২০২২’র ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ১ কোটি ৩৭ লক্ষ আবেদনকারীকে সহায়তা দেওয়া হয়েছে। 

মোদী এদিন বলেছেন, ‘‘প্রযুক্তির অগ্রগতি যতই হোক বিশ্বকর্মাদের গুরুত্ব কমবে না। তাঁদের সহায়তা দিতে হবে। সে জন্য তাঁদের নথিভুক্ত করতে হবে।’’ প্রকল্পের লক্ষ্য জানিয়ে মোদীর সংযোজন, ‘‘বড় বড় সংস্থা এখন কাজ পাঠিয়ে দিচ্ছে ছোট ছোট কারিগরদের হাতে। বিশ্বকর্মা বন্ধুদের হাতে এই কাজ আসা উচিত। বিশ্ব সরবরাহ ব্যবস্থায় তাঁরা যাতে যুক্ত হতে পারেন সেই লক্ষ্যে কাজ করছি আমরা।’’ 

মোদীর দাবি এই যোজনা বহু মানুষের মধ্যে আশার সঞ্চার করবে। প্রশ্ন উঠছে, চালু প্রকল্পকেই ফের ‘নতুন’ করে দেখিয়ে এমন ঢালাও প্রচার কেন? কেন্দ্রীয় বস্ত্র মন্ত্রকও এ বছরের ২ আগস্ট লোকসভায় জানিয়েছিল যে তাঁত শিল্পীদের জন্য জাতীয় হস্তশিল্প উন্নয়ন প্রকল্প রয়েছে। কাঁচা মাল সরবরাহের প্রকল্পও রয়েছে। হস্তশিল্প ক্লাস্টার বিকাশ প্রকল্পও রয়েছে। মোদীর ভাষণে এই চালু প্রকল্পগুলির অগ্রগতি নিয়ে কোনও কথা নেই। কেন্দ্রীয় তথ্য মন্ত্রকও চালু প্রকল্পগুলির অগ্রগতি নিয়ে তথ্য দেয়নি এদিন। 

হস্তশিল্পী এবং কারিগরদের প্রায় সব অংশই সামাজিক বিচারে নিপীড়িত অংশেরও। জাতের বিচারে বঞ্চিত অংশের ওপর নিপীড়ন মোদীর সময়েই বেড়ে যাওয়ার অভিযোগ রয়েছে। বিরোধী মঞ্চ ‘ইন্ডিয়া’ জাতভিত্তিক সমীক্ষার দাবি জানালেও বিরোধিতা করে চলেছে বিজেপি। এমনকি বিহারে মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের সরকার জাতগণনায় হাত দিলেও তার বিরোধিতা চালাচ্ছে নরেন্দ্র মোদীর দল। মুসলিমদের মধ্যেও ‘পশমন্দা’  অংশকে লক্ষ্যে রাখছে বিজেপি। পর্যবেক্ষকদের মত, বিহার এবং উত্তর প্রদেশের মতো রাজ্যে তাঁত এবং বুনন শিল্পে যুক্তদের বড় অংশ পিছিয়ে থাকা ‘পশমন্দা’  অংশের মুসলিম।

এই অংশে ক্ষোভ রয়েছে বুঝেই কী, এদিন পুরনো প্রকল্পের নতুন ঘোষণা, উঠছে প্রশ্ন।      

Comments :0

Login to leave a comment