SUSHMA SAU DASPUR HIGH COURT

পুলিশ লিখিয়েছে মিথ্যা অভিযোগ, এবার হাইকোর্টে জানালেন দাসপুরের সেই মহিলা প্রার্থী

রাজ্য জেলা

SUSHMA SAU DASPUR HIGH COURT শুক্রবার কলকাতা হাইকোর্টে সিপিআই(এম) নেতৃবৃন্দের সঙ্গে সুষমা সাউ।

তিনি প্রার্থীপদ ছাড়তে চাননি। মনোনয়ন তোলাতে দাসপুর থানার পুলিশই তাঁকে দিয়ে সাদা কাগজে সই করিয়ে নিয়েছিল। দাসপুরে সিপিআই(এম)’র মহিলা প্রার্থী সুষমা সাউ এবার হাইকোর্টে জানালেন সেই অভিযোগ।

শুক্রবার কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি রাজশেখর মান্থা জরুরি ভিত্তিতে এই ঘটনায় পুলিশকে হলফনামা জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। আদালতের নির্দেশ, চিঠিতে নাম থাকা সিপিআই(এম) নেতাদের গ্রেপ্তার করা যাবে না এখন।

গত ২০ জুনে পশ্চিম মেদিনীপুরের দাসপুরের এই ঘটনায় রাজ্যজুড়ে ধিক্কারের মুখে পড়ে তৃণমূল কংগ্রেস এবং পুলিশ। দেখা যায় পুলিশ সিপিআই(এম) প্রার্থী সুষমা সাউকে মনোনয়ন প্রত্যাহার করাতে নিয়ে যাচ্ছে বিডিও দপ্তরে। সিপিআই(এম) কর্মীরা প্রশ্ন তুলছেন, বাধা দিচ্ছেন। সে সব অগ্রাহ্য করে পুলিশ মনোনয়নের জন্য নিয়ে যাচ্ছে সুষমা সাউকে (২০ জুন গণশক্তি’তে প্রকাশিত ভিডিও দেখুন)। 

শেষ পর্যন্ত তাঁর মনোনয়ন বাতিল করানো যায়নি। কিন্তু পুলিশ তাঁর সই করা একটি চিঠি দেখিয়ে সিপিআই(এম) নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা করে। 

এদিন হাইকোর্টে সুষমা সাউয়ের পক্ষে পরিষ্কার জানানো হয়েছে যে তাঁকে দিয়ে পুলিশই সাদা কাগজে সই করিয়ে নিয়েছিল। সিপিআই(এম) সেই নেতাদের সঙ্গে ছিলেন তিনি, যাঁদেরকে তাঁর শ্লীলতাহানির জন্য অভিযুক্ত করেছে পুলিশ। ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছেন সিপিআই(এম) পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সম্পাদক সুশান্ত ঘোষ। ‘‘তাঁর ক্ষোভ, তৃণমূলের তাঁবেদারি করতে করতে পুলিশ তার দায়িত্ব ভুলে গিয়েছে। প্রার্থী, নেতা ও কর্মীদের নামে মিথ্যা মামলা দায়ের করা হচ্ছে। অথচ তদন্ত হচ্ছে না।’’ 

দাসপুর ১ ব্লকের নিজনাড়াজোল গ্রাম পঞ্চায়েতের ৫ নম্বর কুলড়িপূর্বের সিপিআই(এম) প্রার্থী হয়েছেন সুষমা সাউ। এই প্রার্থীর স্বামী লক্ষ্মীনারায়ণ সাউ কলকাতা হাইকোর্টে অভিযোগ করেছেন তাঁর স্ত্রীর প্রার্থীপদ প্রত্যাহার করার জন্য তৃণমূল এবং দাসপুর থানার পুলিশ একযোগে জোর জবরদস্তি করেছে। তৃণমূলের মদতে পুলিশ সুষমা সাউকে জোর করে তুলে নিয়ে গিয়েছিল। মামলাকারী অভিযোগ করেছেন মনোনয়ন প্রত্যাহার করাতে না পেরে শেষ পর্যন্ত পুলিশ থানায় নিয়ে গিয়ে সুষমা সাউকে দিয়ে একটি সাদা কাগজে সই করিয়ে নেয়। সেই সাদা কাগজে পুলিশ নিজেই লিখে একটি এফআইআর দায়ের করে। ওই এফআইআরে দেখা যায় বেশ কয়েকজন সিপিআই(এম) কর্মীর নামে সুষমা সাউ শ্লীলতাহানির অভিযোগ দায়ের করেছেন। 

শুক্রবার বিচারপতি রাজশেখর মান্থার এজলাসে এই মামলার শুনানির পর বিচারপতি নির্দেশ দিয়েছেন যে পুলিশকে দ্রুততার সঙ্গে এই মামলায় হলফনামা জমা দিতে হবে। এছাড়া ওই এফআইআর-এ যাঁদের নাম রয়েছে তাঁদের বিরুদ্ধে পুলিশ কোনও পদক্ষেপ করতে পারবে না। এদিন এই মামলায় আবেদনকারীর আইনজীবী সামিম আহমেদ আদালতে বলেন, ‘‘তৃণমূলের কর্মীরা প্রথমে সুষমা সাউকে মনোনয়ন পত্র প্রত্যাহার করার জন্য নিয়ে যায়। কিছু সময় বসে থাকার পর ওই প্রার্থী সিপিআই(এম) কর্মীদের কাছে নিরাপত্তার জন্য চলে যাবার চেষ্টা করেন। এই সময়ই পুলিশ ওই প্রার্থীকে মনোনয়ন পত্র প্রত্যাহারের জন্য চাপ দেয় এবং শারীরিক নির্যাতন করে। এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পরই পুলিশ ওই প্রার্থীকে দিয়ে সাদা কাগজে সই করিয়ে নেয়।’’ এদিন আবেদনকারীর পক্ষে ছিলেন আইনজীবী রাজিত লাল মৈত্র এবং সিদ্ধার্থ শঙ্কর মন্ডল। 

পশ্চিম মেদিনীপুরেই ঘটালে পঞ্চায়েত সমিতিতে সিপিআই(এম) প্রার্থীকে জেলে ভরা হয়েছে। চন্দ্রকোণার কৃষ্ণপুর পঞ্চায়েতের এক মহিলা প্রার্থীর নাম তোলাতে গড়বেতা থেকে আত্মীয়দের জোর করে পাঠিনোর অভিযোগ ঘিরেও সরগরম জেলা। কৃষ্ণপুরের গ্রামবাসীদের সামনে তৃণমূল নেতাদের নাম করে জোর করে পাঠানো অভিযোগ তুলেছিলেন গড়বেতা থেকে আসা ওই মানুষজন। সিপিআই(এম) নেতৃবৃন্দ জানিয়েছেন, এখন কৃষ্ণপুরে প্রার্থীসহ পার্টির ২৫-৩০ জনের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। 

সুশান্ত ঘোষ জানিয়েছেন, পুলিশ-তৃণমূল যৌথ আক্রমণের মধ্যেও জোরদার প্রচার হচ্ছে জেলায়। জনতার পঞ্চায়েত গড়ার আহ্বানে চলছে প্রচার। 

Comments :0

Login to leave a comment