WBCUTA

শিক্ষাক্ষেত্রকে শুকিয়ে মেরে বাণিজ্যিক মোড়ক দেওয়া হচ্ছে : প্রভাত পট্টনায়েক

রাজ্য

WBCUTA

একদিকে যুক্তিনির্ভর, বিজ্ঞানভিত্তিক ভাবনা এবং অন্যদিকে পুরাণধর্মী, কাল্পনিক ভাবনার মধ্যে দেশের গোটা শিক্ষাব্যবস্থাকে দাঁড় করানো হয়েছে। শিক্ষাব্যবস্থাকে আমূল পরিবর্তন করে সম্পূর্ণরূপে ঝকঝকে বাণিজ্যিক মোড়ক দেওয়ার ব্লু-প্রিন্ট তৈরি হয়েছে। এই ভয়ঙ্কর প্রবণতার বিরুদ্ধে শিক্ষকসমাজকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে লড়াই করতে হবে। বর্তমান পরিস্থিতি এই দাবি করছে শিক্ষক সমাজের কাছে। শনিবার কলকাতার গোলপার্কে রামকৃষ্ণ মিশন ইনস্টিটিউট অব কালচারে ওয়েবকুটা’র ৯৪তম বার্ষিক সাধারণসভা ও ৮৪তম সম্মেলনের উদ্বোধন করে একথা বলেছেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ প্রভাত পট্টনায়েক। তিনি বলেছেন, আরএসএস নির্দেশিত শিক্ষা ব্যবস্থা চালুর অন্যতম লক্ষ্য হচ্ছে কর্পোরেট স্বার্থপূরণ করা এবং শিক্ষা থেকে সরকারের দায় ঝেড়ে ফেলা।

এদিন থেকে শুরু হয়েছে ওয়েবকুটা’র বার্ষিক সাধারণসভা ও সম্মেলনের কাজ। এদিন শুরুতে এক আলোচনাসভার আয়োজন করা হয়। ‘‘স্বাধীনতার ৭৫ বছর: দেশের শিক্ষাচিত্র’’ এই শীর্ষক আলোচনায় দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাপনায় সরকারের গৌণ ভূমিকা ও উচ্চশিক্ষা বিস্তার না হওয়ার পেছনে পরিকল্পনার অভাব বলে বক্তারা জানিয়েছেন। বিষয়ের উপর আলোচনা করেছেন অধ্যাপক শোভনলাল দত্তগুপ্ত, অনির্বাণ চট্টোপাধ্যায় ও অধ্যাপক তরুণকান্তি নস্কর। এদিন ‘শতবর্ষের পথে অধ্যাপক সমিতি’ নামের এক বইও উদ্বোধন হয়েছে।

 সম্মেলনের উদ্বোধনী বক্তব্যে প্রভাত পট্টনায়েক বলেছেন, এবার দেশে যে বাজেট করা হয়েছে সেখানে শিক্ষাখাতে কোনও বরাদ্দ বৃদ্ধি করা হয়নি। এ থেকে বোঝা যায়, কেন্দ্রীয় সরকারের উদ্দেশ্য কী। সাংবাদিকরা যখন শিক্ষা সচিবকে প্রশ্ন করেছিলেন যে, এবারের বাজেটে শিক্ষাখাতে কেন বরাদ্দ বৃদ্ধি করা হলো না? জবাবে সচিব বলেছিলেন, ‘শিক্ষাখাতে অনেক বরাদ্দ করা হয়েছে। এখন শিক্ষাখাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি করে কোনও লাভ নেই।’ শিক্ষা সচিব আসলে কেন্দ্রীয় সরকারের মনোভাবের কথা বলেছেন। যেসব রাজ্যে বামপন্থীরা সরকারে ছিল বা আছে, সেইসব রাজ্য সরকার শিক্ষাখাতে বরাদ্দ বাড়িয়ে শিক্ষাকে জনমুখী করেছে, শিক্ষার বিস্তার ঘটেছে।
 

   কেন্দ্রের সরকার জাতীয় শিক্ষানীতি দেশজুড়ে কার্যকর করলে যে পরিস্থিতি দাঁড়াবে তা ব্যাখা করে প্রভাত পট্টনায়েক বলেছেন, এই শিক্ষানীতি তৈরির আগেই দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিকে কার্যত শুকিয়ে মারা হয়েছে। দেশের বহু কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থায়ী ফ্যাকাল্টি নেই। সেখানে চুক্তিতে কাজ করছেন শিক্ষকরা। দেশের গবেষণাগারগুলিতে বরাদ্দ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, স্কলারশিপ বন্ধ করা হয়েছে। ভারতের শিক্ষাক্ষেত্রে কর্পোরেটদের কাছে এক মুনাফার ক্ষেত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে। জাতীয় শিক্ষানীতির মধ্যে দিয়ে শিক্ষাকে ঝকঝকে বাণিজ্যিক মোড়ক দেওয়া হচ্ছে, যে মোড়কে ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষকদের মধ্যে সামাজিক দায়বদ্ধতা থাকবে না, ছাত্র-ছাত্রীদের মগজ শাণিত হবে না। এর বিরুদ্ধে বিকল্পের কথাও দেশের শিক্ষাবিদ, ইতিহাসবিদ, বিশিষ্টজনরা বলছেন। এখন আমাদের দায়িত্ব বিকল্পের কথা মানুষের সামনে তুলে ধরা।

 এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রেখেছেন অধ্যাপক শ্যামল চক্রবর্তী, রামকৃষ্ণ মিশন ইনস্টিটিউট অব কালচারের সম্পাদক স্বামী সুপর্ণানন্দ, পশ্চিমবঙ্গ সরকারি কলেজ শিক্ষক সমিতির সভাপতি দেবাশিস সরকার সহ গণ সংগঠনের অন্যান্য নেতৃত্ব। সভা পরিচালনা করেন অধ্যাপক শুভোদয় দাশগুপ্ত।

Comments :0

Login to leave a comment