Post Editorial

নিয়োগে স্বচ্ছতার স্বার্থে বাঁচাতে হবে পাবলিক সার্ভিস কমিশনকে

রাজ্য উত্তর সম্পাদকীয়​


প্রকাশ দাস

ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সময়কালে কোম্পানির ডিরেক্টররা ভারত শাসনের জন্য উচ্চপদস্থ অফিসারদের মনোনীত করতেন এবং তারপর তাদের লন্ডনের হেইলিবারি কলেজে প্রশিক্ষণ দিয়ে ভারতে পাঠাতেন শাসনকার্য পরিচালনার জন্য। পরবর্তীতে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সিলেক্ট কমিটিতে ১৮৫৪ সালে লর্ড মেকলের পেশ করা একটি রিপোর্টে মনোনয়নের পরিবর্তে ভারতে একটি প্রতিযোগিতামূলক, মেধা ভিত্তিক এবং আধুনিক সিভিল সার্ভিস গঠনের প্রথম ধারণা দেওয়া হয়। এই রিপোর্টের ভিত্তিতেই ১৮৫৪ সালে লন্ডনে সিভিল সার্ভিস কমিশন গঠিত হয় এবং ১৮৫৫ সালে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার সূচনা হয়। পরবর্তীতে ১৯১৯ সালের ভারত শাসন আইনের 96(C) ধারায় ভারতে একটি পাবলিক সার্ভিস কমিশন গঠনের কথা বলা হয় যার কাজ হবে – “Dis- charge, in regard to recruitment and control of Public Services in India, such functions as may be assigned thereto by rules made by the Secretary of State in Council”. বিভিন্ন টালবাহানার পরে ১৯২৪ সালে গঠিত Lee Commission  অবিলম্বে পাবলিক সার্ভিস কমিশন গঠনের সুপারিশ করে। ফলে ১৯২৬ সালের ১ অক্টোবর ভারতে পাবলিক সার্ভিস গঠিত হয়। আবার ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইন অনুযায়ী ফেডারেশনের জন্য ফেডারেল পাবলিক সার্ভিস কমিশন এবং বিভিন্ন প্রভিন্সের জন্য প্রভিন্সিয়াল পাবলিক সার্ভিস কমিশন গঠন করা হয়। এপ্রিল, ১৯৩৭ সালে। বাংলার ক্ষেত্রে নাম হয় বেঙ্গল পাবলিক সার্ভিস কমিশন। স্বাধীনতার পরে ফেডারেল পাবলিক সার্ভিস কমিশনের নাম হয় ইউনিয়ন পাবলিক সার্ভিস কমিশন এবং বেঙ্গল পাবলিক সার্ভিস কমিশনের নাম হয় পাবলিক সার্ভিস কমিশন, ওয়েস্ট বেঙ্গল। সংবিধানের ৩১৫ থেকে ৩২৩ নং ধারায় পাবলিক সার্ভিস কমিশনের গঠন, কর্তব্য,আর্থিক সংস্থান, কার্যপ্রণালী ইত্যাদি বিষয়ে সুনির্দিষ্ট নির্দেশিকা রয়েছে।
জন্মলগ্ন থেকে অত্যন্ত স্বচ্ছতার সঙ্গে কাজ করে চলেছে এই কমিশন। ২০১১ অবধি কোনও কলঙ্কের দাগ লাগেনি এই কমিশনের গায়ে। ডাঃ বিধান রায় মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন কমিশনের তৎকালীন চেয়ারম্যানকে ফোন করে দেখা করতে বললে, কমিশনের চেয়ারম্যান প্রত্যুত্তরে বলেন যে, ‘‘I am the Chairman of Public Service Commission, not your servant. If you wish you may meet me at my chamber”. সিদ্ধার্থ শঙ্কর রায়ের আমলে বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে ১৭,০০০ এর মতো কংগ্রেসী ঢুকেছিল, কিন্তু কমিশনে কোনও হস্তক্ষেপ করতে পারেননি।
কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে পশ্চিমবঙ্গ পাবলিক সার্ভিস কমিশনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে বেশ কিছু ঘটনা ঘটছে যা আগামীদিনে বিভিন্ন সরকারি পদে স্বচ্ছ নিয়োগের ক্ষেত্রে একাধিক সমস্যার জন্ম দিতে পারে। বামফ্রন্ট সরকারের সময়কালে পশ্চিমবঙ্গ পাবলিক সার্ভিস কমিশন স্বচ্ছতার সঙ্গে নিয়োগের ক্ষেত্রে সারা দেশে এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিল। ২০০৯ সালে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের গ্রুপ ‘ডি’ পদে নিয়োগের জন্য পরীক্ষা নেয় পাবলিক সার্ভিস কমিশন। ১৩ লক্ষের অধিক পরীক্ষার্থীদের মধ্য থেকে স্বচ্ছতার সঙ্গে বেছে নেওয়া হয় যোগ্য প্রার্থীদের। এক দুরূহ জটিল কাজকে দক্ষতার সঙ্গে সম্পন্ন করে কমিশন। কিন্ত এই সফল প্রার্থীদের কাজে যোগদান করতে করতে ২০১১ সালে সরকারের পরিবর্তন ঘটে যায়। তৃণমূল সরকার এসেই এই সফল প্রার্থীদের কাজে যোগদান বন্ধ করে দেয়। শেষ পর্যন্ত কোর্টে মামলা করে দীর্ঘ টালবাহানার পরে তারা চাকরিতে যোগদান করতে পারে।এর থেকে বোঝা যায় যে একেবারে গোড়া থেকেই তৃণমূল সরকার পাবলিক সার্ভিস কমিশনকে অস্বীকার করতে চাইছিল। কমিশন যেভাবে স্বচ্ছতার সঙ্গে সরকারি নিয়োগের পরীক্ষা পরিচালনা করেছে তা নতুন সরকারের নাপসন্দ ছিল। পরবর্তীতে নিয়োগ সংক্রান্ত যে বিপুল দুর্নীতির জাল সারা রাজ্যে ছড়ায় তার অশনি সংকেত সেদিন কমিশনের কাজে বাধা দেবার মধ্য দিয়েই দেখা গিয়েছিল।
আবার বামফ্রন্ট সরকার ২০০৮ সালে পশ্চিমবঙ্গ পাবলিক সার্ভিস কমিশনকে সম্প্রসারণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে যাতে করে দূর দূরান্ত থেকে প্রার্থীদের বারেবারে কলকাতায় ছুটে আসতে না হয়। পশ্চিমবঙ্গ পাবলিক সার্ভিস কমিশনের তিনটি আঞ্চলিক অফিস খোলার সিদ্ধান্ত হয়। এর মধ্যে দুইটি দক্ষিণবঙ্গে এবং একটি উত্তরবঙ্গে। প্রতিটি অফিসে ২৮টি করে মোট ৮৪টি বিভিন্ন ধরনের পদ সৃষ্টি করা হয়েছিল। এছাড়াও মূল অফিসে ২১৩টি পদ সৃষ্টি করা হয়েছিল। এই পদগুলিতে ২০০৯ এবং ২০১০-এ রিটেনশন দেওয়া হয়। কিন্ত ২০১১ সালে সরকারের পরিবর্তনের পর সমস্ত নতুন পদগুলিকে বাতিল করে দেওয়া হয় ।
তৃণমূল সরকার আসার পর থেকেই কমিশনের সঙ্গে একটা অসহযোগিতা এবং অনীহার সম্পর্ক তৈরি হয়। ২০১২ সালে তৃণমূল সরকার West Bengal Services (Recriutment to Clerical Cadres) Rules, 2010 সংশোধন করে West Benal Staff Selection Commission- কেও যখন পরীক্ষা নেওয়ার অধিকার দেয় তখনও পাবলিক সার্ভিস কমিশন তার বিরোধিতা করে। এ প্রসঙ্গে মনে রাখা দরকার যে ২০১০ সালের আদেশনামার মধ্য দিয়ে বামফ্রন্ট সরকার রাজ্য সরকারের সব স্তরের করনিক পদে নিয়োগের পরীক্ষা পাবলিক সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে হবে বলে সিদ্ধান্ত নেয়। তৎকালীন বিরোধীরা এই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেন ক্ষুদ্র স্বার্থে। ২০১১ সালে সরকার পরিবর্তনের পর তৃণমূল সরকার পাবলিক সার্ভিস কমিশনের পাশাপাশি স্টাফ সিলেকশন কমিশন গঠন করে। পরবর্তীতে আদেশনামা জারি করে সরকার পাবলিক সার্ভিস কমিশনের হাত থেকে Group ‘B’ এবং Group ‘C’ পদের সব পরীক্ষা তুলে নিয়ে স্টাফ সিলেকশন কমিশনের হাতে তুলে দিল।
কিন্ত পাবলিক সার্ভিস কমিশনের নিয়োগ সংক্রান্ত পরীক্ষা সম্পন্ন করার যে বিপুল অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা তা রাতারাতি গড়ে তোলা যায় না। ফলে আংশিকভাবে কিছু পরীক্ষা নেওয়ার পরে স্টাফ সিলেকশন কমিশনের কাছ থেকে পরীক্ষার দায়িত্ব আবারও পাবলিক সার্ভিস কমিশনের কাছে ফিরে আসে ২০১৭ সালে।
কিন্ত ইতিমধ্যেই রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ শুরু হয়ে গেছে পাবলিক সার্ভিস কমিশনে। শাসকদলের নেতা-মন্ত্রীদের ঘনিষ্ঠ এবং আত্মীয়েরা কমিশনের সদস্য হিসাবে নিযুক্ত হতে শুরু করলেন। তাদের খবরদারির চোটে অনেক চেয়ারম্যান পর্যন্ত পদত্যাগ করে চলে যেতে বাধ্য হলেন। এইরকম এক পরিস্থিতিতে ২০১৭ সালের ওয়েস্ট বেঙ্গল সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় দুর্নীতির ঘটনা জনসমক্ষে চলে আসে। অভিযোগ ওঠে যে জনৈক পরীক্ষার্থীর একটি বিষয়ে প্রাপ্ত নম্বর ০ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ১৬২ হয়েছে। এও অভিযোগ ওঠে যে ঐ পরীক্ষার্থী ডব্লিউবিসিএস পরীক্ষার প্রিলিমিনারিতে প্রাথমিকভাবে সফল না হলেও, দ্বিতীয় একটি তালিকা প্রকাশ করে তাকে মেইন পরীক্ষায় বসার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছিল। ২০১৬ এবং ২০১৭ সালের আরও কয়েকজন পরীক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ ওঠে। এ প্রসঙ্গে বলা দরকার যে ২০২২ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে যে সব বিডিওদের বিরুদ্ধে কারচুপির অভিযোগ ওঠে তার মধ্যে এইসব বিডিওরাও ছিলেন। কিন্তু এটা অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে যে পুরো দুর্নীতিটাই হয়েছিল রাজনৈতিক মদতে। সাধারণ কর্মচারীরা প্রথম থেকেই এই দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করছে। এর বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই হাইকোর্টে মামলা চলছে প্রাক্তন কর্মচারীদের উদ্যোগে।
রাজ্য সরকার পাবলিক সার্ভিস কমিশনকে পরিকল্পিতভাবে ধ্বংস করার জন্য ২০১৬ সালে একটি আদেশনামা জারি করে পাবলিক সার্ভিস কমিশন কে অর্থ দপ্তরের অধীনস্ত একটি সংস্থায় পরিণত করে যা সম্পূর্ণভাবে অসাংবিধানিক। এই আদেশনামায় কমিশন ১৯৫৩ সালে রচিত যে ৩২টি রেগুলেশন দ্বারা পরিচালিত হত তার সঙ্গে ৩৩নং রেগুলেশন যুক্ত করে । সহজ বাংলায় যে আদেশনামার অর্থ বেগড়বাই করলেই যেখানে খুশি পাঠিয়ে দেব।
সংবিধানের ৩১৫ থেকে ৩২৩নং ধারায় পাবলিক সার্ভিস কমিশনের গঠন, কর্তব্য,আর্থিক সংস্থান, কার্যপ্রণালী ইত্যাদি বিষয়ে সুনির্দিষ্ট নির্দেশিকা রয়েছে। এই সংস্থা মূলত সরকারি প্রশাসনের বিভিন্ন পদের জন্য নিয়োগ সংক্রান্ত বিধি তৈরি করা, বিভিন্ন সরকারি পদে নিয়োগের জন্য প্রার্থী নির্বাচন করা, পদোন্নতির ক্ষেত্রে ও শৃঙ্খলা ভঙ্গকারী কর্মচারীদের বিরুদ্ধে সরকারি সুপারিশের উপর পরামর্শ প্রদান করার কাজে যুক্ত থাকে। এই রাজ্যের পাবলিক সার্ভিস কমিশন প্রতিষ্ঠার সময় থেকে ধারাবাহিকভাবে স্বচ্ছতা, নিরপেক্ষতা এবং কোনরকম রাজনৈতিক হস্তক্ষেপকে অগ্রাহ্য করে সরকারি দপ্তরে নিয়োগের ব্যাপারে জনমানসে বিপুল আস্থা অর্জন করেছিল। এই রকম একটি সাংবিধানিক সংস্থায় কাজের ধরন অন্যান্য সরকারি অফিসের থেকে আলাদা। একদম প্রাথমিক স্তর থেকে কাজ শেখার মধ্য দিয়েই একজন দক্ষ কর্মচারী গড়ে ওঠেন। ফলে দীর্ঘ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে উঠে আসা দক্ষ কর্মচারীদের অন্যত্র বদলির আদেশনামা আদতে কমিশনের দক্ষতাকে যে ক্ষতিগ্রস্ত করবে, কোনও ‘Public Interest’ রক্ষা করবে না বরং নির্দিষ্ট রাজনৈতিক ধান্দা চরিতার্থ করার উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হবে তা রাজ্য কো-অর্ডিনেশন কমিটি আগেই বলেছিল।
ইতিমধ্যেই মুখ্যমন্ত্রী হঠাৎই মন্তব্য করলেন যে পাবলিক সার্ভিস কমিশনে নিয়োগ হয় আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের সুপারিশে। মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত এই মন্তব্য একেবারেই অনভিপ্রেত। এর তীব্র প্রতিক্রিয়া হয় কর্মচারী মহলে। তৎক্ষণাৎ প্রতিবাদ হয় এই মন্তব্যের বিরুদ্ধে সারা কর্মচারী সমাজে। আর এর পরেই মাঠে নেমে পরে সরকারপন্থী সংগঠন। তারা কিছু হাস্যকর অভিযোগ তোলে কমিশনের কিছু সুদক্ষ কর্মচারীর বিরুদ্ধে। তারা নাকি অধিক সময় ধরে অফিসে থাকেন। এরপর এবছর ১৩ই আগষ্ট তারিখে একটি নির্দিষ্ট কাগজে তার সংবাদও পরিবেশন করানো হয়। এবং ১৮ই আগষ্ট তারিখে একটি আদেশনামা জারি করে একজন আধিকারিক সহ পাঁচজন কর্মচারীকে অন্য দপ্তরে স্থানান্তরিত করা হয়। পুরো ঘটনাটাই যে পূর্বপরিকল্পিত তা দুর্বল চিত্রনাট্য দেখেই বোঝা যায়। পাবলিক সার্ভিস কমিশনে একটা ভয়ের পরিবেশ তৈরির জন্যই এই চিত্রনাট্য তৈরি করা হয়েছিল। সামগ্রিকভাবে কমিশনের প্রায় সমস্ত কর্মচারীই বামপন্থী কর্মচারী সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত। ফলে সরকারপন্থী সংগঠনের এতে খুবই জ্বালা ধরেছে। এমন সব কর্মচারীদের স্থানান্তরিত করা হয়েছে যাদের কেউ নিজে ভয়ানক অসুস্থ অথবা কারোও বাড়িতে মা ক্যান্সারের রোগী।
কিন্তু কর্মচারীরা বিনা প্রতিবাদে এই অন্যায় মেনে নেয়নি। স্থানান্তরকরণের খবর পাওয়ার পরের দিনই রাজ্য কো-অর্ডিনেশন কমিটি এবং পশ্চিমবঙ্গ সেক্রেটারিয়েট এমপ্লয়িজ অ্যাসোসিয়েশনের যৌথ উদ্যোগে সমস্ত কর্মচারীরা সেক্রেটারির ঘরের সামনে ধরনায় বসে পড়ে। সেক্রেটারিকে ডেপুটেশন দিয়ে বলা হয় যে এই কর্মচারীদের ছাড়া যাবে না। সেক্রেটারিও তাতে সহমত হন। কমিশনের কাজ সুসম্পন্ন করার ক্ষেত্রে স্থানান্তরিত কর্মচারীদের গুরুত্ব লিখে তাদের ছাড়ার ক্ষেত্রে অপারগতা জানিয়ে চেয়ারম্যানের চিঠি যায় অর্থ দপ্তরে। কিন্তু সিদ্ধান্ত যেহেতু রাজনৈতিক তাই চেয়ারম্যানের চিঠির পরেও একই সিদ্ধান্ত বহাল রাখে অর্থ দপ্তর এবং স্থানান্তরিত কর্মচারীদের ছেড়ে দিতে নির্দেশ দেয়। এইভাবে একটি সাংবিধানিক সংস্থার উপর রাজ্য প্রশাসন জোর করে নিজের মত চাপিয়ে দেয় যা সম্পূর্ণ অসাংবিধানিক। সংগঠন আবারও তীব্র প্রতিবাদ জানায়। রাজ্য কো-অর্ডিনেশন কমিটির সাধারণ সম্পাদক এবং পশ্চিমবঙ্গ সেক্রেটারিয়েট এমপ্লয়িজ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদকের উপস্থিতিতে জমায়েত এবং সেক্রেটারির কাছে ডেপুটেশনের কর্মসূচি নেওয়া হয় পরের দিনই।স্বচ্ছভাবে নিয়োগের দাবিতে রাজ্য কো-অর্ডিনেশন কমিটি লাগাতার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। 
গত ২৪ নভেম্বর, ‘২৩ তারিখে ‘কর্মীবর্গ এবং প্রশাসনিক সংস্কার’ দপ্তরের  আদেশনামার দ্বারা এই পাঁচজন কর্মচারীকে দূর-দূরান্তে বদলি করা হয়েছে। সহ-সম্পাদক শ্রী পঙ্কজ চক্রবর্তীকে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলায়; উত্তরবর্গীয় সহায়ক (UDA)  সুব্রত ভট্টাচার্যকে মালদা জেলায় এবং রাজর্ষি রায়কে মুর্শিদাবাদ জেলায়; অবরবর্গীয় সহায়ক (LDA)  শুভ্রদীপ ভট্টাচার্যকে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় এবং দিব্যরূপ চ্যাটার্জিকে পুরুলিয়া জেলাতে প্রতিহিংসামূলক বদলি করা হয়েছে।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে পাবলিক সার্ভিস কমিশনের প্রতি এত আক্রোশ কেন? শিক্ষক, শিক্ষাকর্মী বা পৌরসভার কর্মী নিয়োগে যে দুর্নীতির জাল ছড়িয়েছে সারা রাজ্য জুড়ে, সেই জাল পাবলিক সার্ভিস কমিশনে তেমনভাবে ছড়ানো যায়নি কুচক্রীদের ষড়যন্ত্র সত্ত্বেও। ছড়ানো যায়নি কমিশনের অভ্যন্তরে গণতান্ত্রিক চেতনাসম্পন্ন সাধারণ কর্মচারীদের আপসহীন মনোভাবের জন্য। যেহেতু এই লড়াইয়ের একেবারে সম্মুখভাগে রয়েছেন কমিশনের সাধারণ কর্মচারীরা, তাই তাদের উপর আক্রমণ নেমে আসছে। সুতরাং এই মুহূর্তে আমাদের কাজ হল কমিশনের আক্রান্ত কর্মচারীদের পাশে দাঁড়িয়ে আক্রমণকে প্রতিহত করা। আগামী দিনে স্বচ্ছভাবে নিয়োগের স্বার্থে পাবলিক সার্ভিস কমিশনকে কেন্দ্র করে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। এটা নিশ্চিত যে এই চক্রান্তের জাল ছিন্ন হবে।
সারা পশ্চিমবঙ্গের সব নিয়োগ কমিশনগুলোকে যখন দুর্নীতির আখড়াতে পরিণত করার চেষ্টা হচ্ছে, সেই সময়ে পাবলিক সার্ভিস কমিশনের কর্মচারীদের এই লড়াইয়ে যুবসমাজও এগিয়ে আসছেন। দুর্নীতির বিরুদ্ধে এই লড়াইকে এক সামগ্রিক যৌথ রূপ দিতে হবে।
 

Comments :0

Login to leave a comment