STORY | BHABANISHANKAR CHAKRABORTY | PARAMA | MUKTADHARA | 2025 MARCH 24

গল্প | ভবানীশংকর চক্রবর্তী | পরমা | মুক্তধারা | ২০২৫ মার্চ ২৪

সাহিত্যের পাতা

STORY  BHABANISHANKAR CHAKRABORTY  PARAMA  MUKTADHARA  2025 MARCH 24

গল্প | মুক্তধারা

পরমা
ভবানীশংকর চক্রবর্তী

    কলেজ থেকে বেরিয়ে বাসস্টপে এসে দাঁড়িয়েছি। মিনিট পনেরো  হয়ে গেল বাসের দেখা নেই।একটু আগে ফিরতে পারলে ছেলে বটুককে নিয়ে একটু বসা যায় ।পাঁচ পেরিয়েছে।ক্লাস ওয়ান ।ওকে বাসবীই সামলায়। সে জানে কলেজ ছাড়াও অন্য নানা কাজে আমাকে ব্যস্ত থাকতে হয়। তবু মাঝে মাঝে কপট রাগ দেখিয়ে বলে, ' ছেলেটা তো আমার একার নয়। এতটুকু সময় পাও না ওর জন্য!ওরও তো ইচ্ছে করে বাবাকে কাছে পাওয়ার! ছেলে কী শিখছে, না শিখছে, একটুও জানার ইচ্ছে করে না! অবরে সবরে ওকে নিয়ে একটু বসতে পারো না!'
সে কথার জবাব দিই না।জবাব নেইও আমার কাছে।আজ ওকে নিয়ে একটু বসব বলেই কলেজ শেষে স্টাফরুমের আড্ডা ফেলে সকাল সকাল বেরিয়ে পড়েছি। একটা বাস দাঁড়াল।খুব ভিড় । পাদানিতে দাঁড়িয়েই ঝুলতে ঝুলতে চলে যাব ভেবেই উঠতে যাচ্ছি, বাঁ হাত ধরে হ্যাঁচকা টান দিয়ে কেউ আমাকে থামিয়ে দিল।পিছন ফিরে দেখি এক মাঝবয়সি মহিলা আমার দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসছে।আমার বাঁ হাতটা এখনো তার ডান হাতে । কী বলব বুঝতে না-পেরে তার মুখের দিকে হাঁ করে তাকিয়ে রইলাম।
' আমি নিশ্চ্য়ই হেমাঙ্গ রায়চৌধুরীকে চিনতে ভুল করিনি। আমি অতসী।'
সে আমার ঘোর কাটাল ।
পাশের একটা পার্কে গিয়ে বসলাম দুজনে।
অতসী আমার ক্লাসফ্রেন্ড ।স্কুলবেলায় দুজনেই একটা কো-এড স্কুলে মাধ্যমিক পড়েছি। একথা সেকথার পর সে জিজ্ঞেস করল ' মাসিমা কেমন আছে রে ?'
'মা তো নেই। বছর দুই হল ।' নিষ্পৃহ গলায় বললাম।আমার জবাব শুনে অতসীর মুখখানা  ভারী হয়ে গেল।চোখের কোণে জল চিক চিক করে উঠল।
তখন ক্লাস নাইন ।সেই ছোট্ট শহরে ওর বাবা রিকশা চালাত।একদিন এক মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় মারা গেল ওর বাবা। তিন ভাইবোনকে নিয়ে ওর মা অকূলপাথারে ।ওর মা ওর পড়াশোনা বন্ধ করে দিতে চেয়েছিল। কেন কি জানি,সে কথাটাও আমাকে এসে বলেছিল। ওর সমস্যা সমাধানের উপায় আমার হাতে ছিল না। মাকে তাই কথাটা বলেছিলাম।
সে যাত্রা ওর পড়াশোনা বন্ধ হয়নি।মাধ্যমিকের পর আমরা কলকাতায় চলে আসি,স্কুলের বন্ধুদের থেকে অনেক দূরে।
আঁচলে চোখ মুছে অতসী বলল 'মাসিমার একটা ছবি দিতে পারিস হেমাঙ্গ? আমাদের অফিসে রাখব।'
'অফিস!' আমি বিস্মিত হয়ে জিজ্ঞেস করি।
'হ্যাঁ, পরমা।একটা এন জি ও। ড্রপ আউট মেয়েদের নিয়ে কাজ করি। মাসিমার নামেই চলছে আমাদের উদ্যোগ।'
আমি নির্বাক।অতসী বলল, 'চল ওঠা যাক।'  দুজনেই উঠলাম।আমি বাসস্টপে এসে দাঁড়ালাম।অতসী চলে গেল উলটোদিকে। আমার মনে হল ওই অনেক দূরে দাঁড়িয়ে আমার মা। অতসী ওই দিকেই হাঁটছে।
 

Comments :0

Login to leave a comment