STORY — SOURAV DUTTA — BRIGADER AVIMUKHE — MUKTADHARA — 20 APRIL 2025, 2nd YEAR

গল্প — সৌরভ দত্ত — ব্রিগেডের অভিমুখে — মুক্তধারা — ২০ এপ্রিল ২০২৫, বর্ষ ২

সাহিত্যের পাতা

STORY  SOURAV DUTTA  BRIGADER AVIMUKHE  MUKTADHARA  20 APRIL 2025 2nd YEAR

গল্পমুক্তধারা

ব্রিগেডের অভিমুখে

সৌরভ দত্ত

এরা সব মিছিলের মুখ। বর্গক্ষেত্রিয় পাড়ার হুলো।দিনহাটার জ্যোৎস্না। প্রতিবন্ধী ছেলেটা এসেছে হুইলচেয়ারে।সবার একটাই গন্তব্য ব্রিগেড।এটাই হয়ত মুক্তির পথ।যে পথে পিঁপড়ের মতো হেঁটে চলেছে মানুষ, মানুষ এবং মানুষ। সোনালী কাকিমা জিজ্ঞেস করছিল লিজাকে–কী রে আজ ব্রিগেড যাবি না!প্রচণ্ড ঘর্মাক্ত লিজা বলছিল–যাব তো।সঞ্জুদা‌ যাবে। অনিমেষদা যাবে। গোলাম রসুল আসবে খাঁ পাড়া থেকে। আমাদের সব কমরেডই যাবে।টেট পাশ করে বসে আছে বেচারা চাকরি নেই।না আছে …মানে ছিল টাকায় বিক্রি হয়েছে।এখন সব আদালতে ঝুলছে। এবারের ব্রিগেড অন্যবারের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা মনোভঙ্গি নিয়ে তৈরি করেছে আগুন।প্রতিবাদের আগুন।সর্বহারার ব্রিগেডে হাঁটছিল সত্তরোর্ধ্ব বুবুদা।এক সময় স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ছিল।ভ্যাপসা গুমোট গরম,কাঁধে ঝোলা ব্যাগ। হাওড়া স্টেশনে লোকে লোকারণ্য। পাঁচবছর আগের ব্রিগেডে প্রথম গিয়েছিল রোহিত পাড়ার শ্রমিক আন্দোলনের এক নেতৃত্বের সাথে।তারপর থেকে একটা ব্রিগেড ও ফাঁক দেয়নি সে।লিজাদের বাস এসে গেছে অলোকের দোকান থেকে মুড়ি আর আলুর দম সবার জন্য।ফুল পার্টির লোকেরা পার্টি অফিসে বসে দেখছে মানুষের আসা যাওয়া।আজ রবিবার সৈকতবাবু সকালে বাজারে গিয়েই কিনে পড়তে শুরু করেছেন গণশক্তিটা। গতকাল রাত্রে এক মা এসেছে।বাচ্চাকে তোয়ালে পেতে শুইয়ে রেখেছে মাটিতে । কোথাও একটা মেহনতি মানুষের লড়াইয়ের ডাক কি গর্জে উঠছে! মিথ্যাচারের বিরুদ্ধে জনতার ইনকিলাব ধ্বনি। মানুষ যাতে গন্তব্যে পৌঁছাতে না পারে কৌশলে হাওড়া স্টেশনে‌ বুদ্ধি করে ফেরি সার্ভিস বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। অন্য সংবাদপত্রে সেভাবে ছাপা হয়নি ব্রিগেডের খবর।তার বদলে চলছে ঘোষ আর রিঙ্কু বৌদির গসিপ।জনতা খাচ্ছে কিন্তু গিলছে না। ব্রিগেডের দিকে মিডিয়ার ফোকাস নেই। গতকাল রাত্রে ফুচকাওলা নীলুকে খুব শাসিয়ে গেছে ফুল পার্টির টারজানরা। ব্রিগেড গেলে বিকালে মাঠে ফুচকা বিক্রি চলবে‌না।নীলুর মা সাহস দিয়েছে।তুলে দিয়েছে রক্ত পতাকা নীলুও চলছে মিছিলে।চাকরিহারারা হাহুতাশ করতে করতে কিছুটা জিরেন করে এগিয়ে যাচ্ছে।হয়ত এবারেই তাঁদের কারোর কারোর প্রথম যাওয়া।হিঙ্গলগঞ্জ থেকে যারা এসেছে কলাই রুটি আর কাঁচা লঙ্কা ভাগ করে যাচ্ছে।চাকলায় চাকলায় বসেছে লুটেরাদের হাতে সব হারানো পুরুষ-মহিলারা।রোদে চাঁদি ফেটে যাওয়ার জোগাড় ধুলো উড়ছে ময়দান জুড়ে।ক্যাম্প অফিসে ব্যস্ত মীনাক্ষী,কলতানরা। এবারের মঞ্চে ধামসা মাদলের ছন্দ।শালপাতার জঙ্গলের পিঁপড়ের ডিম খাওয়া মানুষ লক্ষ্মীর ভাণ্ডারে ভোলেনি। হিন্দু-মুসলমানের মেরুকরণ মানেনি মানুষ।আলিশা আর সুমন পাশাপাশি দাঁড়িয়ে প্রগতিশীল পুস্তক বিক্রয়কেন্দ্র বইয়ের পাতা উল্টাচ্ছে।সারা শরীরে কাস্তে-হাতুড়ি প্রতীক আঁকা ইলেকট্রিক মিস্ত্রি দুখীরামের ।হাঁটু দিয়ে হেঁটে ব্রিগেডের জনারণ্যে এসেছে পঞ্চাশোর্ধ রবীন্দ্র রাই। ব্রিগেডের ময়দানে ছবি আঁকছে কোনো শিল্পী। একজনের মাথায় প্রয়াত বুদ্ধবাবুর মূর্তি। ব্রিগেড বড় আবেগের জায়গা। ট্রেনে,বাসে যে যেভাবে পারে গতকাল রাত থেকে জমা হয়েছে ক্যাম্প অফিসে।মাইকে ভেসে আসছে একদম সাধারণ মানুষের উপজীব্য, কৃষি ব্যবস্থা ভেঙে দেওয়ার পরিকল্পনা, মানুষের সাথে চাকরির নামে প্রতারণা,কাজ হারানো শ্রমিকের যন্ত্রণা আর রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সোচ্চার কন্ঠ।যারা মঞ্চে তারাও সাধারণ মানুষ–অনাদি লাহু,নিরাপদ সর্দার,অমল‌ হালদার।বজ্রনির্ঘোষের ধ্বনি হয়ে  প্রতিধ্বনিত হচ্ছিল বন্যা টুডুর ভাষণ আজকের ব্রিগেড ময়দানে।সভা ভাঙতেই সবাই কলরব মুখরিত ভাবে চলেছে। প্রত্যেকের কাঁধে লাল পতাকা, প্রত্যেকের অভিমুখ এক।সভা ফাঁকা হতেই মঞ্চ থেকে একে একে নেমে এলেন ওরা যারা এতক্ষণ মঞ্চে ছিলেন।এরাই নিপাট সাধারণ মানুষ।একে একে পরিস্কার করছেন ব্রিগেডের মাঠ। ঝাঁটা হাতে বন্যা টুডু।কাগজ কুড়োচ্ছেন আভাস রায় চৌধুরীরা।পরিবেশ প্রকৃতিকে সুস্থ রাখার পাঠ শেখাচ্ছে। ভবিষ্যত প্রজন্মকে বাসযোগ্য পৃথিবী দিয়ে যাওয়াই এনাদের কাজ।বাড়ি ফিরতে ফিরতে ওদিকে আটকে গেছে তার চোখ।লিজার ভাবনায় ওরাই আসলে রবীন্দ্রনাথের সেই মাটির পৃথিবীর শ্রমজীবী মানুষ।লিজার মনে পড়ে যাচ্ছে ‘ওরা কাজ করে’ কবিতার কয়েকটা লাইন–ওরা কাজ করে নগরে-প্রান্তরে….ওরা কাজ করে দেশে দেশান্তরে…

 

Comments :0

Login to leave a comment