STORY — SOURISH MISHRA / MUKTADHARA - 18 September

গল্প — অলোক স্যার / মুক্তধারা

সাহিত্যের পাতা

STORY   SOURISH  MISHRA  MUKTADHARA - 18 September

মুক্তধারা / গল্প

অলোক স্যার

সৌরীশ মিশ্র

২০১২ সাল। আমি তখন কর্মসূত্রে উড়িষ্যায়। ছুটিতে এসেছি সেবার বাড়িতে। এক সকালে সাইকেলে বাজার করে ফিরছি, দেখি আমাদের স্কুলের ইংরেজির শিক্ষক অলোক স্যার। বাজারের থলে হাতে তাঁর বাড়ির দিকে চলেছেন। 
অলোক স্যার আমার প্রিয় শিক্ষকদের অন্যতম। ইংরেজি আমার অত্যন্ত ভালো লাগার বিষয় হওয়ায় আমাকে স্যার স্কুলে স্নেহ করতেন খুবই।
যদিও স্যার আমাদের পাশের পাড়াতেই থাকতেন, তবু ওনাকে প্রায় সাত বছর পর দেখলাম। চেহারা বেশ ভেঙ্গে গেছে স্যারের, লক্ষ্য করলাম।
আমি সাইকেল চালিয়ে ওনার পাশে গিয়ে দাঁড়াই। তারপর সাইকেল স্ট্যান্ড করে ওনাকে প্রণাম করি। বলি, "চিনতে পারছেন স্যার?"
আমার মুখের দিকে তাকান স্যার, তারপর বলেন, "নাইনটি ওয়ান তো?"
মাধ্যমিকে আমি ইংরেজিতে একানব্বই পেয়ে জেলায় ঐ বিষয়ে টপ্ করার পর থেকেই উনি আমায় ভালবেসে 'নাইনটি ওয়ান' বলেই ডাকতেন। আমার ভাল লাগে এই দেখে যে ওনার এত ছাত্রের মধ্যে আমাকে ভোলেননি স্যার।


"হ্যাঁ স্যার, আমিই নাইনটি ওয়ান। স্যার, দিন ব্যাগটা, হ্যান্ডেলে ঝুলিয়ে নিই। আজ আপনার পাড়া দিয়েই বাড়ি ফিরব।"
স্যারের বাজারের ব্যাগটা আমার সাইকেলের হ্যান্ডেলে ঝোলাই আমি।  তারপর স্যার আর আমি পাশাপাশি ধীরে ধীরে হাঁটতে থাকি।
মিনিট পাঁচেকের মধ্যেই আমরা দু'জনে এসে দাঁড়াই স্যারের বাড়ির সামনে। "তাহলে স্যার আসি আজ?" অনুমতি চাই আমি।
"আসবি কি রে! ভিতরে চল।"
"না স্যার, আজ যাব না। মা বসে আছে নিশ্চয়ই বাজারের অপেক্ষায়।"
"ঠিক আছে, তবে আসিস কিন্তু একদিন। তোর সাথে কথাই তো হল না আজ ঠিক করে।"
"হ্যাঁ স্যার, নিশ্চয়ই আসব। সেদিন অনেকক্ষণ থাকব। অনেক গল্প করব।"
"কথা দিচ্ছিস তো?"


"হ্যাঁ স্যার কথা দিলাম।" হেসে বলি আমি। আরো একবার প্রণাম করি স্যারকে। স্যার সস্নেহে মাথায় হাত রাখেন আমার।
আমার কথা রাখতে তার পরের দিন সকালেই স্যারের বাড়ি গিয়েছিলাম আমি। স্যারের দেখাও পেয়েছিলাম। কিন্তু স্যারের সাথে গল্প করা হয়ে ওঠেনি আমার। কারণ, ওনার বসার ঘরে একটি খাটে শুয়ে ছিলেন সেদিন তিনি। ফুলে ফুলে ঢাকা ছিল তাঁর শরীর।


 

Comments :0

Login to leave a comment