Kaliagunj

কালিয়াগঞ্জের ছাত্রী মৃত্যুর তদন্তে ‘সিট’ হাইকোর্টের

রাজ্য

কালিয়াগঞ্জে ছাত্রীর অস্বাভাবিক ও রহস্য মৃত্যুর ঘটনায় রাজ্যের দেওয়া রিপোর্টে অসন্তোষ প্রকাশ করে ঘটনার তদন্তে সিট গঠন করলো কলকাতা হাইকোর্ট। বৃহস্পতিবার বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা জানিয়ে দেন, আদালতের নজরদারিতে তদন্ত কার্য চালাবে সিট। এই বিশেষ তদন্তকারী টিমে থাকবেন আইপিএস দময়ন্তী সেন, রাজ্য পুলিশের প্রাক্তন আইজি পঙ্কজ দত্ত এবং প্রাক্তন সিবিআই কর্তা উপেন বিশ্বাস। একই সঙ্গে এই তদন্তের স্বার্থে কেস ডায়েরি থেকে অন্যান্য নথিপত্র যা আছে তা রাজ্য পুলিশ তুলে দেবে সিট-এর হাতে, এমনই নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি মান্থা। এছাড়াও রাজ্য শিশু সুরক্ষা কমিশন এবং জাতীয় শিশু সুরক্ষা কমিশনকে তাদের অনুসন্ধান রিপোর্ট সিট-এর কাছে দিতে হবে বলেও হাইকোর্টের নির্দেশ। এই নির্দেশে আরও বলা হয়েছে, সিট-কে তদন্তে সাহায্য করার পাশাপাশি নিহত ওই ছাত্রীর পরিবারের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে হবে রাজ্য পুলিশকে। 
বৃহস্পতিবার কলকাতা হাইকোর্টে আবার মুখ পুড়েছে রাজ্য সরকারের। কালিয়াগঞ্জের ঘটনায় এবার সিট গঠন করেছে কলকাতা হাইকোর্ট।  গত ২১ এপ্রিল কালিয়াগঞ্জে দশম শ্রেণীর এক রাজবংশী ছাত্রীর দেহ উদ্ধারের পর থেকেই গোটা জেলায় ছড়িয়ে পড়ে তীব্র উত্তেজনা। পরিবারের অভিযোগ, ওই কিশোরীকে ধর্ষণের পরে খুন করা হয়েছে। খুনিকে গ্রেপ্তারের দাবিতে নিহতের দেহ গ্রামের রাস্তায় রেখে বিক্ষোভ দেখান গ্রামবাসীরা। গ্রামবাসীদের সরাতে পুলিশ লাঠি চালায়, কাঁদানে গ্যাস ছোঁড়ে। পুলিশ এই ঘটনাকে আত্মহত্যার ঘটনা বলে চালাতে চায় যা মানতে রাজি ছিলেন না পরিবারের সদস্য ও গ্রামবাসীরা। এমনকি পুলিশ ওই ছাত্রীর দেহ লোপাটের জন্য, দেহটি মর্মান্তিকভাবে রাস্তা দিয়ে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে গিয়েছে বলেও অভিযোগ ওঠে, একটি ছবির ফুটেজেও দেখা যায় সেই দৃশ্য। নিহত ছাত্রীর পরিবার সিবিআই তদন্ত চান আদালতের কাছে। ঘটনার পর বিভিন্ন সময়ে নিহত ছাত্রীর বাড়িতে গিয়ে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন সিপিআই(এম) এবং ডিওয়াইএফআই-এসএফআই নেতৃত্ব ও কর্মীরা। 
ইতিমধ্যে বিভিন্ন শুনানিতে রাজ্যের পুলিশের দেওয়া রিপোর্টে অসন্তোষ প্রকাশ করে কলকাতা হাইকোর্ট। কীভাবে কখন ময়নাতদন্ত করা হল-এসব প্রশ্ন ওঠে। এপ্রিলের শেষ সপ্তাহে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা এই তদন্ত কীভাবে এগোচ্ছে তার বিস্তারিত ও পুর্ণাঙ্গ রিপোর্ট তলব করেন। তিনি ময়নাতদন্তের ভিডিও এবং ছবি সংরক্ষণের নির্দেশ দেন। আদালতে ওই ছাত্রীর দেহ উদ্ধারের কিছু ছবি পেশ করা হলে বিচারপতি মান্থা বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, মৃতদেহের ময়নাতদন্তের রিপোর্ট, এফআইআর’র কপি মৃতার পরিবারের হাতে তুলে দিতে হবে পুলিশকে। শুধু তাই নয়, জাতীয় শিশু অধিকার সুরক্ষা কমিশন যদি সব রিপোর্টের কপি চায়, তাহলে তা দিতে হবে পুলিশকে। সেই সঙ্গে তদন্তের স্বার্থে এখন পর্যন্ত কী কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তা জানাতে হবে আদালতকে। সে সময়ে  দ্বিতীয়বার ময়নাতদন্ত চাওয়া হলে বিচারপতি বলেন, এখনই তার প্রয়োজন নেই, আগে সব রিপোর্ট সামনে আসুক। 
এরপর বৃহস্পতিবারের শুনানিতে রাজ্য পুলিশের দেওয়া রিপোর্টে অসন্তোষ প্রকাশ করে বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা এই ঘটনার তদন্তে সিট গঠন করলেন। আইপিএস দময়ন্তী সেন, প্রাক্তন আইজি পঙ্কজ দত্ত এবং প্রাক্তন সিবিআই কর্তা উপেন বিশ্বাসের নেতৃত্বে একটি টিম ঘটনার তদন্ত করবেন আদালতের নজরদারিতে। এমনই নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি মান্থা। তবে তদন্ত চলাকালীন কোথাও তাঁরা প্রকাশ্যে এই তদন্ত নিয়ে নিজেদের মতামত ব্যক্ত করতে পারবেন না বলেও এদিন জানিয়ে দেন বিচারপতি। রাজ্য পুলিশকে নির্দেশ দিয়ে তিনি বলেন, সমস্ত নথি তথ্য সিটের হাতে তুলে দিয়ে তদন্তে সাহায্য করতে হবে সিটকে। এছাড়াও পুলিশকে দিতে ওই পরিবারের যাবতীয় নিরাপত্তা। বিচারপতির আরও নির্দেশ, জাতীয় শিশু সুরক্ষা কমিশন এবং রাজ্য শিশু সুরক্ষা কমিশনের যাবতীয় অনুসন্ধান রিপোর্টও তুলে দিতে হবে সিট’র হাতে। এদিন বিচারপতি বলেন, প্রকৃত সত্য সামনে আসা দরকার। সিট মনে করলে দ্বিতীয়বার মৃতদেহের ময়নাতদন্ত করতে পারবে।

Comments :0

Login to leave a comment