Sujan Chakraborty attacks Abhisekh Banarjee

অবাধ ভোটের পক্ষে অভিষেকের দাবিকে নির্জলা মিথ্যা বললেন সুজন চক্রবর্তী

রাজ্য পঞ্চায়েত ২০২৩

তৃণমূল কংগ্রেস চায় সব আসনে ভোট হোক। কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়েগ করে ভোটেও আপত্তি নেই তৃণমূলের। বৃহস্পতিবার সাংবাদিক সম্মেলনে এমনই দাবি করেছেন তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদ অভিষেক ব্যানার্জি। 
কলকাতা প্রেস ক্লাবে ‘মিট দ্য প্রেস’ অনুষ্ঠানে অভিষেকের বক্তব্য, মানুষ দেখেছেন তৃণমূল কংগ্রেস তাঁদের পাশে থেকেছেন। লক্ষ্মীর ভাণ্ডার, কন্যাশ্রী মতো প্রকল্পের সুবিধা দিয়েছে তৃণমূলেরই সরকার। একশো দিনের কাজের টাকা, আবাস যোজনার টাকা বন্ধ রেখেছে বিজেপি। কেন্দ্রে বিজেপি’র সরকার। 
মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির ভাইপো এদিন বলেছেন, ‘‘তৃণমূল কংগ্রেস চায় সব আসনে ভোট হোক। ভোট হলেই তো বোঝা যাবে মানুষ কাকে সমর্থন করছেন।’’ তিনি বলেছেন, ‘‘রাজ্যের সব বুথে এবার ভোট হচ্ছে।’’ 


সেই সঙ্গে অভিষেক বলেছেন, ‘‘হাইকোর্টকে ধন্যবাদ কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের নির্দেশ দেওয়ার জন্য। প্রতি বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকুক। তাতে তৃণমূলেরই সুবিধা। ২০২১ বা ২০১৬’তেও কেন্দ্রীয় বাহিনী ছিল। তাতে তৃণমূলের সমস্যা হয়নি।’’ 
সিপিআই(এম)’কে লক্ষ্য করেও আক্রমণ করেছেন অভিষেক। তিনি বলেছেন, ‘‘বিজেপি’র সঙ্গে নীতিহীন জোট করছে সিপিএম।’’ তাঁর অভিযোগ, ‘‘সিপিএম’র সময় ভোটের নামে প্রহসন চলত। বিরোধীরা ফ্ল্যাগ লাগাতে পারত না। সুপরিকল্পিত সন্ত্রাসের সেই প্রবণতায় ইতি টানা হয়েছে।’’ 


অভিষেকের বক্তব্যকে নির্জলা মিথ্যাচার আখ্যা দিয়েছেন সিপিআই(এম) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী। সংবাদমাধ্যমের প্রশ্নে তাঁর প্রতিক্রিয়া: ‘‘নিজের প্রার্থী হওয়ার প্রয়োগ করে বিরোধী দলগুলির বহু সমর্থক পঞ্চায়েত ভোটে লড়তে চেয়েছিলেন। সেই অধিকারে বাধা দেওয়া হলো ব্লক দপ্তরের ভেতর, বিডিও-দের সামনে। যারা বাধা দিল তাদেরই জেড ক্যাটেগরি সুরক্ষা দেওয়া হলো। এতে স্পষ্ট যে তৃণমূল কংগ্রেস দুষ্কৃতীদের রাজত্ব চায়। নির্জলা মিথ্যাচার করছেন ‘সততার প্রতীক’-র ভাইপো।’’ 
প্রকল্পের বরাদ্দ আটকানোর পাশাপাশি ধর্মের নামে ভোট চাওয়ার রাজনীতির জন্যও বিজেপি’কে দায়ী করেছেন অভিষেক। তিনি বলেছেন, ‘‘মানুষের কাছে আবেদন থাকবে ধর্মের নামে ভোট দেবেন না। কানে শুনে বিশ্বাস না করে চোখকে দেখে বিশ্বাস করুন।’’ তিনি বলেন, ‘‘অস্ত্রের ঝনঝনানি যেন ভোট পর্বকে নিয়ন্ত্রণ না করে।’’ 


চক্রবর্তী পাল্টা প্রশ্ন তুলেছেন তৃণমূল নেতার ‘মানুষের পাশে থাকার দাবিতেও। তিনি বলেছেন, ‘‘আমফান বা কোভিডের সময় মানুষ তৃণমূলকে লুট করতে দেখেছে। আর পাশে থাকতে দেখেছে লাল ঝান্ডাকে। পাশে পেয়েছে রেড ভলান্টিয়ারদের।’’ তাঁর ক্ষোভ, ‘‘তৃণমূল এখন পুলিশকে ব্যবহার করে মিথ্যা মামলা দিচ্ছে বামফ্রন্ট, কংগ্রেস ও আইএসএফ’র কর্মী ও নেতাদের বিরুদ্ধে। প্রতিরোধও হচ্ছে। তার মুখে পড়ে তৃণমূলকে যেমন পালাতে হচ্ছে, তেমন পুলিশকেও পালাতে হচ্ছে।’’ 


অভিষেকের বক্তব্যের সত্যতা নিয়ে যদিও প্রশ্ন তুলছে ভোট প্রক্রিয়াই। সর্বদলীয় সভা না ডেকে ভোট ঘোষণা করেন রাজ্য নিযুক্ত নির্বাচন কমিশনার রাজীব সিনহা। কার্যত মাত্র পাঁচ দিন মনোনয়নের সময় দেওয়া হয়। শেষ আট ঘন্টায় তৃণমূল চল্লিশ হাজারের বেশি মনোনয়ন জমা দিল কী করে তা নিয়ে প্রশ্ন ঝুলে রয়েছে। তার ওপর ভাঙড়, রানিনগর, ডোমকল বা চোপড়ায় মনোনয়ন জমা দিতে আসা প্রার্থীদের ওপর তৃণমূলের হামলায় অভিষেকের নীরবতায় অসত্যভাষণ ধরা পড়েছে। কেন্দ্রীয় বাহিনীর মোতায়েন ঠেকাতে সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত তৃণমূলেরই সরকার ছুটেছিল কেন, উঠেছে সে প্রশ্নও। 
রাজনৈতিক মহলের অনেকেরই বক্তব্য, শত বাঁধা, হুমকির সঙ্গে লড়েও বামফ্রন্ট, কংগ্রেস এবং আইএসএফ’র মতো তৃণমূল ও বিজেপি বিরোধী শক্তি প্রার্থী দিয়েছে। ২০১৮’র মতো ভোট এবার হচ্ছে না। পিছু হটাকেই তাই সাফল্য বলে দেখাতে বাধ্য হচ্ছেন অভিষেক ব্যানার্জি।

Comments :0

Login to leave a comment