Tarakeshwar Slum Dwellers Deprived

মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণাই সার, ১০ বছরেও মিলল না পাকা ছাদ

রাজ্য

Tarakeshwar Slum Dwellers Deprived

অভীক ঘোষ

পাকা বাড়ি ,মাথার উপর ছাদের আশা অধরাই রয়ে গেলো তারকেশ্বরের বস্তিবাসীদের। 

২০১২ সালের ৪ জুন আরামবাগে রেলের কর্মসূচিতে যোগ দিতে যাওয়ার সময় তারকেশ্বর পৌরসভার ১২ নম্বর রোডের ধারে বসবাসকারী বস্তিবাসীদের ওপর নজর পরে মুখ্যমন্ত্রীর। ত্রিপলের ছাউনি এবং বাঁশের বেড়া দিয়ে ঝুপড়ি তৈরি করে বসবাস করছেন বহু মানুষ। তাঁদের বসবাসের অসুবিধার কথা শোনার পর প্রত্যেকের জন্য পাকা বাড়ি তৈরি করে দেওয়ার নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী।  

মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের পাঁচ বছর পর ২০১৭ সালে শুরু হয় গৃহ নির্মাণ প্রকল্প। সে সময়  ঠিক করা হয় তারকেশ্বর পৌরসভার ১,, ১১, ১২ ও ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের প্রায় ৩১৬ জনের হাতে তুলে দেওয়া হবে ঘরের চাবি।

তারকেশ্বর পৌরসভার ১১ নম্বর ওয়ার্ডে কুড়িটি চার তলা বিল্ডিংয়ে মোট ৩১৬টি বাড়ি তৈরির কাজ ১০ বছরেরও সম্পূর্ণ হলো না। পৌরসভা সূত্রে জানা গেছে প্রকল্পটি সম্পূর্ণ করতে রাজ্য সরকারের বরাদ্দ ছিল সাড়ে ১০ কোটি টাকা। কাজ শুরু হতেই প্রথম দফায় রাজ্য অর্থ দপ্তর থেকে ২ কোটি ৬৫ লক্ষ টাকা প্রদান করা হয় পৌরসভাকে। অর্থ দপ্তর থেকে অনুমতি না নিয়েই প্রকল্প ব্যয় বাড়িয়ে ১৭ কোটি ২০ লক্ষ টাকা করে পৌরসভা। টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করা হয় পৌরসভার পক্ষ থেকে। তখন চেয়ারম্যান ছিলেন স্বপন সামন্ত। অর্থ দপ্তরে না জানিয়ে প্রকল্প ব্যয় বাড়িয়ে দেওয়ার পরই টাকা দেওয়া বন্ধ করে দেয় রাজ্য অর্থ দপ্তর। প্রায় আশি শতাংশ কাজ হওয়ার পরও আটকে যায় মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষিত প্রকল্প।

অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে রয়েছেন গরিব বস্তিবাসীরা। তাঁদের অভিযোগ, ভোট এলেই তৃণমূল নেতারা ছুটে এসে আশ্বাস দেন। বলে থাকেন যে খুব তাড়াতাড়ি মাথায় উপর পাকা ছাদ মিলবে। কিন্তু ভোট মিটে গেলেই আর কারও দেখা মেলে না। মেন রোডের পাশে ঘর, যখন তখন দুর্ঘটনা লেগেই আছে। 

বস্তিবাসী মধুমিতা সরকার বলেন, ‘‘আমাদের আর আশা নেই ঘর পাওয়ার। কিছুদিন আগে রাস্তা মাপতে এসেছিল। তখন শুনেছি রাস্তা চওড়া হবে। তাহলে আমরা কোথায় যাব। এখন আমাদের জন্য তৈরি পাকা ঘর থেকে চাঙর ভেঙে ভেঙে পড়ছে। মিথ্যা প্রতিশ্রুতি আর বিশ্বাস করছি না।’’

আরেক বাসিন্দা রত্না ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘আমাদেরকে পৌরসভা পুতুল নাচের মতো ব্যবহার করছে। যে ঘরগুলি তৈরি করেছে সেখানে কারা থাকবে আমরা জানিনা। এত কষ্টে দিন কাটাচ্ছি তবু কেউ একবার খোঁজও নেয় না।

তারকেশ্বরের সিপিআই(এম) নেতা মুকুল ঘোষের ক্ষোভ, পৌরসভা চায় না গরিব মানুষ ভালো থাকুক। তিনি বলেন, ‘‘রাস্তার ধারে থাকা গরিব মানুষ অসহায়। রাস্তা বাড়ানোর জন্য দু’পাশ ভাঙছে। তার মধ্যেই আতঙ্ক নিয়ে দিন কাটাচ্ছেন ভূমিহীন, বাস্তুহীন মানুষ। পাশে পৌরসভা নেই।’’

তাঁর অভিযোগ, ‌‘‘ সূর্যের আলো ডুবতেই নির্মীয়মান আবাসনে শুরু হচ্ছে অসামাজিক কাজকর্ম।’’ প্রাক্তন চেয়ারম্যান স্বপন সামন্ত বলেন, ‘‘সঠিক নিয়ম মেনেই টেন্ডার হয়েছিল। কিন্তু আমরা সব টাকা পাইনি।’’ বর্তমান চেয়ারম্যান উত্তম কুন্ডু বলেন, ‘‘নতুন পৌরবোর্ড গঠন হওয়ার পরই বিষয়টি পৌর মন্ত্রীকে জানানো হয়েছে। সমস্যা আছে, দ্রুত সমাধান করে অবসানের কাজ সম্পূর্ণ করা হবে।’’

তবে এমন প্রতিশ্রুতিতে আর ভরসা রাখতে পারছেন না বস্তিবাসীরা। দশ বছরের অভিজ্ঞতাই ভরসা রাখতে দিচ্ছে না।

Comments :0

Login to leave a comment