CPI(M) NYAY SANHITA

ন্যায় সংহিতায় সিপিআই(এম): বাড়বে 'দেশদ্রোহী' আখ্যা, নাগরিক অধিকারে আক্রমণও

জাতীয়

সংসদে বিতর্ক ছাড়াই পাশ হয়েছিল বিল। সেই ফৌজদারি আইনই ১ জুলাই থেকে কার্যকর হয়েছে দেশে। নাগরিক অধিকারে আরও বড় আঘাত আনবে নতুন আইন। দেশদ্রোহী বলে দাগিয়ে দিয়ে বিরোধী স্বর দমনের রাস্তা আরও চওড়া করবে। নতুন আইনে তীব্র বিরোধিতা জানিয়ে একথা বলেছে সিপিআই(এম) কেন্দ্রীয় কমিটি। 
তিনদিনের বৈঠকের পর সোমবার কেন্দ্রীয় কমিটির বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সম্পূর্ণ স্বৈরাচারী এবং অগণতান্ত্রিক কায়দায় তাড়াহুড়ো করে কোনও বিতর্ক ছাড়াই পাশ হয়েছে এই আইন। বিরোধী সাংসদদের বড় অংশকে সাসপেন্ড করে রাখা হয়েছিল তখন। এই আইন পুরোপুরি দমনমূলক। 
কেন্দ্রীয় কমিটি মনে করিয়েছে যে সুপ্রিম কোর্ট ভারতীয় দণ্ডবিধির ১২৪ ধারা বাতিল করেছিল। উল্লেখ্য, ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ স্বাধীনতা আন্দোলনকে দমনের চেষ্টায় ‘দেশদ্রোহ’ সংক্রান্ত এই ধারা ব্যবহার করত। নতুন করে পাশ ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ১৫২ ধারায় সুপ্রিম কোর্টে বাতিল ধারাটিকেই কৌশলে যুক্ত করা হয়েছে। তার সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়েছে সার্বভৌমত্ব এবং সংহতি রক্ষার প্রসঙ্গকে। কেন্দ্রীয় কমিটি বলেছে, সুপ্রিম কোর্টের রায়কে সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করে নতুন আইন জনতাকে ‘দেশদ্রোহী’ আখ্যা দিয়ে সাজা দিতে পারবে আরও সহজে। 
কেন্দ্রীয় কমিটি বলেছে, একগুচ্ছ ধারা রয়েছে ন্যায় সংহিতায় যার সাহায্যে নাগরিক অধিকার কেড়ে নেওয়ার বাড়তি ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে পুলিশকে। যেমন, আগের আইনে পুলিশ হেপাজতে রাখার মেয়াদ ছিল ১৫ দিন, তা বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। একজন বিচারপতি ৯০ দিন পর্যন্ত একজন অভিযুক্তকে পুলিশ হেপাজতে রাখার নির্দেশ দিতে পারবেন। গুরুতর একাধিক অপরাধেও পুলিশ ১৫ দিন তদন্ত না করে এফআইআর দায়ের করবে না।
উল্লেখ্য, এমন শর্তে বেশিরভাগ সময় ন্যায় থেকে বঞ্চিত হয় প্রান্তিক অংশ। কেননা প্রভাবশালীরা চাপ দিয়ে এফআইআর দায়েরের প্রক্রিয়া আটকে দিতে পারে। 
কেন্দ্রীয় কমিটি বলেছে, আরেকটি অত্যন্ত বিপজ্জনক বিধি হলো বেআইনি কার্যকলাপ রোধ আইন বা ইউএপিএ-তে দায়ের অভিযোগে তদন্ত করতে হতো উঁচু স্তরে পুলিশ আধিকারিককে। এখন নতুন ১৫২ ধারায় কোনও থানার কোনও আইও এমন কড়া আইনে নিজেই তদন্ত করতে পারবেন। আগে ইউএপিএ-তে তদন্তের জন্য সরকারের অনুমতি নিতে হতো। এখন কোনও আইও সরাসরি তদন্তে নামতে পারেন সেই আইনে যা সন্ত্রাসবাদ দমনের লক্ষ্যে তৈরি। 
কেন্দ্রীয় কমিটি বলেছে, আগের আইন এবং নতুন আইন দু’টি আপাতত একইসঙ্গে কার্যকর থাকবে। ফলে যেখানেই প্রয়োগ করা হবে দ্বন্দ্ব বাঁধবে। (অভিযুক্তের) আবেদনের বিচারও জটিল হয়ে দাঁড়াবে। নতুন আইনে অস্পষ্টতা এবং অনিশ্চয়তা দুই-ই বাড়বে যা একেবারেই কাম্য নয়। এমনিতেই বহু ফৌজদারি মামলা ঝুলে থাকে, এবার সেই সংখ্যা কয়েক লক্ষে দাঁড়াবে। 
বিভিন্ন বার অ্যাসোসিয়েশন, উদ্বিগ্ন নাগরিকদের অংশ এবং নাগরিক অধিকার সংগঠনগুলির বক্তব্যে সম্মতি জানিয়েছে সিপিআই(এম)। কেন্দ্রীয় কমিটি বলেছে, এমন বিভিন্ন অংশের বক্তব্যকে গুরুত্ব দিয়ে সঙ্গত উদ্বেগ নিরসন না হওয়া পর্যন্ত এমন পশ্চাৎপদ এবং দমনমূলক আইনের প্রয়োগ বন্ধ রাখা জরুরি।

Comments :0

Login to leave a comment