PRIMARY TET EXAM

নির্বিঘ্নে হলো না টেট, মন্ত্রীও মানলেন

রাজ্য জেলা

SSC TET RECRUITMENT SCAM WEST BENGAL বিতর্ককে সঙ্গী করেই হল টেট পরীক্ষা

নির্বিঘ্নে হলো না প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষা (টেট)।


পাঁচ বছর পরে রবিবার রাজ্যে এই পরীক্ষা ছিল। এদিন হয়রান হলেন অনেক পরীক্ষার্থী। তাঁদের বিক্ষোভে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে বেশ কয়েকটি পরীক্ষাকেন্দ্রে। অনেকে অ্যাডমিট কার্ডের ভুলের কারণে সঠিক সময়ে পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছাতেই পারেননি বলে অভিযোগ করেছেন।


রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুও অভিযোগগুলি এড়াতে পারেননি। তিনি  সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেছেন, ‘‘কোথাও কোথাও কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটেছে হয়তো। কিন্তু কোনও অনিয়ম দেখলেই তা নিরসনে সঙ্গে সঙ্গে নির্দেশ পাঠানো হয়েছে।’’ তবে মন্ত্রীর অভিযোগ, ‘‘ভুয়ো প্রশ্নপত্র ছড়ানো হয়েছিল। পরীক্ষা বানচালের চেষ্টা হয়েছিল। বিরোধীদের থেকে এ কাজ হয়েছে। টেটের প্রশ্ন ফাঁস হয়নি।’’ 


প্রশ্ন ফাঁস হবে না, সেটাই তো স্বাভাবিক। মমতা ব্যানার্জির সরকারের মন্ত্রীর কাছে তাই সাফল্য!
অন্যদিকে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সভাপতি গৌতম পাল দাবি করেছেন, ‘‘স্বচ্ছতার সঙ্গে পরীক্ষা হয়েছে। কোথাও কোনও গোলমাল নেই, শান্তিপূর্ণ হয়েছে গোটা প্রক্রিয়া। পর্ষদ কড়া নজর রেখেছিল যাতে কোনও গোলমাল না হয়।’’


যদিও ‘গোলমাল’ দেখা গেছে অনেক জায়গাতেই।
অনেক ক্ষেত্রে অ্যাডমিট কার্ডে পরীক্ষাকেন্দ্রের ভুল ঠিকানা, বায়োমেট্রিক না হওয়া, অনিবার্য কারণে সামান্য ৫মিনিটের এদিক ওদিকে অসুস্থ পরীক্ষার্থীদের মুখের ওপর গেট বন্ধ করে দেওয়া, টোকাটুকির মতো অভিযোগ উঠেছে। 


টোকাটুকির আশঙ্কাও দেখা গেছে। রায়গঞ্জে পরীক্ষা শুরুর আগেই মোবাইল দেখে চিরকুটে টোকাটুকি করতে দেখা যায় বেশ কিছু যুবককে। একটি কাগজে সিরিয়াল নম্বর দিয়ে পরপর উত্তর লিখতে দেখা যায়। তাহলে কি প্রশ্নপত্র আগেই ফাঁস হয়ে গিয়েছে? এই সন্দেহে তুমুল শোরগোল ওঠে রায়গঞ্জ গার্লস ও রায়গঞ্জ করোনেশন হাইস্কুলের পরীক্ষাকেন্দ্রের সামনে। এছাড়াও প্রাথমিকের টেট পরীক্ষা ঘিরে অশান্তি ছড়ায় রায়গঞ্জ ব্লকের সুভাষগঞ্জ হাইস্কুলে। পরীক্ষা শুরুর সময়েও সেখানে সমাধান হয়নি বায়োমেট্রিক সমস্যার। অভিযোগ, ছিল না সিসিটিভি ক্যামেরা।

ওদিকে ট্রাফিক সমস্যার কারণে সামান্য দেরি হওয়ায় রায়গঞ্জ মোহনবাটি পার্বতী দেবী উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের পরীক্ষাকেন্দ্রে ঢুকতেই দেওয়া হয়নি পরীক্ষার্থীদের।


রবিবার দিনভর যা ঘটেছে তার প্রেক্ষিতে আইনজীবী, সাংসদ বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য বলেছেন, এই সরকারের নিয়োগ প্রক্রিয়ার সবটাই দুর্নীতি আর কারচুপিতে ভরা। এটা পরীক্ষা হচ্ছে? নাকি সীমান্তে যুদ্ধ চলছে বোঝা যাচ্ছে না। চাকরিপ্রার্থীদের এত মানসিক উদ্বেগের মধ্যে ফেলা কেন? যদি নিয়োগের সৎ উদ্দেশ্যই সরকারের থাকত তাহলে এত ছেলে-মেয়েকে এত দিন ধরে রাস্তার ধারে প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে বসতে হতো না। বাস্তবে নিয়োগের উদ্দেশ্য নিয়ে তো এই পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে না, শাসকের উদ্দেশ্য তো অন্য, নিতান্তই প্রহসন। শনিবার থেকেই পর্ষদ টেট নিয়ে নানা ভয় দেখাতে আর বিভ্রান্তি ছড়াতে ব্যস্ত পরীক্ষার্থীদের মধ্যে। বলছে, কেউ কেউ নাকি বানচাল করার চেষ্টা করছে পরীক্ষা। কে করছে, কারা করছে সেটা প্রকাশ করুক পর্ষদ।

 
এদিন প্রায় ১০ জন পরীক্ষার্থী উত্তর ২৪ পরগনার মধ্যমগ্রাম থেকে দক্ষিণ ২৪ পরগনার আমতলায় পরীক্ষা দিতে যান অ্যাডমিট কার্ডের ঠিকানা অনুযায়ী। পৌঁছে তাঁরা জানতে পারেন তাঁদের পরীক্ষাকেন্দ্র সেখানে নয়, তা হবে উত্তর ২৪ পরগনার খড়দা এলাকায়। ফলে তড়িঘড়ি যখন আবার তাঁরা নির্দিষ্ট কেন্দ্রে এসে পৌঁছান। তখন অনেকটাই দেরি হয়ে গেছে। বিষ্ণুপুর থানায় অভিযোগও দায়ের করেন তাঁরা। 


প্রায় ৭ লক্ষ পরীক্ষার্থীর জন্য পর্ষদের নির্দেশ ছিল পরীক্ষার্থীদের সকাল ১১টার মধ্যে সেন্টারে ঢুকতে হবে। পরীক্ষা শুরু হবে ১২টায়। কিন্তু পরিবহণ ও ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের ব্যার্থতার জন্য পূর্ব মেদিনীপুর জেলার, এক প্রান্ত থেকে অপরপ্রান্তে যাওয়া বহু পরীক্ষার্থী যানজটের ফলে রাস্তায় আটকে পড়েন।

চণ্ডীপুর থেকে হেঁড়িয়া পর্যন্ত দীর্ঘ ১৭ কিলোমিটার রাস্তা যানজটের কারণে আটকে যান পরীক্ষার্থীরা। বিষয়টি নিয়ে হইচই হওয়ায় জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ নির্দেশ দেয় ১২টা পর্যন্ত পরীক্ষার্থীরা পরীক্ষা হলে ঢুকতে পারবেন। অন্যদিকে পরীক্ষার্থীদের ক্ষোভ, আঁটোসাট নিয়মের ফলে তাঁদের হয়রানি হতে হয়েছে পরীক্ষা কেন্দ্রগুলিতে। খুলতে হয়েছে নাকছাবি, কানের দুল, শরীরে পরিহিত সেফটিপিন। পকেটের পয়সাও জমা রাখতে হয়েছে। নিষেধাজ্ঞা ছিল জলের বোতলের ক্ষেত্রেও। ফলে দুর্ভোগ বেড়েছে। আলিপুরদুয়ারে এই সমস্যা দূর করার জন্য নিখিলবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি’র পক্ষ থেকে শহরের ম্যাকউইলিয়াম উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রবেশ দ্বারে টেট পরিক্ষার্থীদের সুবিধার জন্য হেল্প ডেস্ক খোলা হয়।


বায়োমেট্রিক নিয়ে চূড়ান্ত হয়রানির অভিযোগ উঠল বহু কেন্দ্রেই। কলকাতার তীর্থপতি ইন্সটিটিউশনে পরীক্ষা শুরুর আগে প্রথম কয়েকজনের বায়োমেট্রিক হলেও পরে মেশিন খারাপের কথা বলে দেওয়া হয়। বলা হয়েছিল পরীক্ষা শেষে বায়োমেট্রিক হবে। কিন্তু তা হয়নি। ফলে সেখানেই বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চূড়ান্ত বিক্ষোভ দেখান তাঁরা। তাঁদের আশঙ্কা, তাঁরা যে পরীক্ষা দিয়েছেন তারই তো কোনও প্রমাণ থাকল না, সুতরাং এটা প্রহসনেরই শামিল হলো, এটা তো কারচুপি। তাঁদের ক্ষোভের কোনও সন্তোষজনক উত্তর দিতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। 

অন্যদিকে নির্ধারিত সময়ে টেট পরীক্ষার্থীদের বায়োমেট্রিক না হওয়ায় পরীক্ষা চলাকালীন সময় নষ্ট করে হলো বায়োমেট্রিক। ঘটনাটি ঘটেছে রবিবার কালনা কলেজে। এখানে ‘পরিকাঠামোগত ত্রুটি’র জন্য প্রথমে সব পরীক্ষার্থীর বায়োমেট্রিক করা সম্ভব হয়নি। পরে পরীক্ষা চলাকালীনই পরীক্ষার্থীদের বায়োমেট্রিক দিতে হয়। তাতে সময় নষ্ট হয় বলে পরীক্ষার্থীদের অভিযোগ। সল্টলেকের এক কেন্দ্রে আবার পরীক্ষা শুরুর আগে বায়োমেট্রিকের নামে কড়াকড়ি ও হয়রানি এমন পর্যায়ে পৌঁছায় যে চূড়ান্ত অসন্তোষ প্রকাশ করেন পরীক্ষার্থীরা।  

 

Comments :0

Login to leave a comment