JALPAIGURI PANCHAYAT

‘বৌ-টা তো তোর, দাঁড়ালে তো তোর ওপর চাপ আসবে’

জেলা

JALPAIGURI PANCHAYAT হুমকি ফোন পরিবারে।

দীপশুভ্র সান্যাল

‘তোর বৌ দাঁড়াবে, তোর পারমিশন নেবে না?’ 

সিপিআই(এম) প্রার্থী পায়েল রাজবংশী হালদারের স্বামীকে ফোন করে ক্রমাগত হুমকি দেওয়া হচ্ছে এই ভাষাতেই। বলা হচ্ছে, ‘সিপিআই(এম) এখন কেউ করে!’ 

স্থানীয়রা বলছেন, যে পার্টি করারই লোক নেই, তার প্রার্থী নিয়ে তৃণমূলের মাতব্বরদের এত ভয় কিসের!

আবার জলপাইগুড়ির পাহাড়পুর ২০৮ নম্বর ঢিং পাড়া বুথের তপশিলি জাতি সংরক্ষিত আসনের প্রার্থী দীপক রায়ের বাড়িতে চড়াও তিন গাড়ি ভরা দুষ্কৃতী। স্ত্রী’কে হুমকি, স্বামী যাতে প্রার্থীপদ প্রত্যাহার করেন। বিদ্যুৎ দপ্তরের ঠিকা শ্রমিক দীপক রায়। অভিযোগ, তাঁর বাড়িতে জলপাইগুড়ি সদর ব্লকের পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতির স্বামী তৃণমূল নেতা নিতাই করের নেতৃত্বে আসে বাহিনী। 

দীপকের স্ত্রী সাহস করে জানান কোনভাবেই তার স্বামী প্রার্থী পথ প্রত্যাহার করবেন না। সোমবারের মধ্যে তার স্বামীকে যোগাযোগ না করলে প্রাণ সংশয় হবে, হুমকি দিয়ে দুষ্কৃতীরা চলে যায়। সোমবার বেলা দশটা নাগাদ আবার পাহাড়পুর এলাকায় ভীমপাড়া বুথের প্রার্থীর বাড়িতে চড়াও হয় বাহিনী। বলতে থাকে তাঁর স্ত্রী’কে, এখনই দীপক যোগাযোগ না করলে কাজ হারাবে। হুমকির মুখে ভেঙে পড়েন তাঁর স্ত্রী। দীপককে বাড়িতে এসে কথা বলতে বলেন। 

খবর পৌঁছায় সিপিআই(এম) পার্টি দপ্তরেও। প্রাক্তন সংসদ জিতেন দাসজেলা সম্পাদক মন্ডলী সদস্য পীযূষ মিশ্র সহ অন্যান্য পার্টি নেতৃবৃন্দ যোগাযোগ করেন ডিএসপি সমীর পালের সঙ্গে। বাড়িতে পৌঁছয় সংবাদ মাধ্যম ও জলপাইগুড়ি কোতোয়ালি থানার পুলিশ। সাংবাদিকদের প্রশ্নের হাত থেকে বাঁচতে তড়িঘড়ি এলাকা ছাড়েন নিতাই কর। পুলিশ দীপককে থানায় নিয়ে আসে। 

জলপাইগুড়ি সদর ব্লকের পাহাড়পুর গ্রাম পঞ্চায়েতের ২১৯ নং বুথের সিপিআই(এম) প্রার্থী পায়েল রাজবংশী হালদার। জলপাইগুড়ি শহর সংলগ্ন এই বুথ করলা নদীর ওপারে শহরের ২২ নম্বর ওয়ার্ড মাসকলাই বাড়ির ব্রিজ শহরের সাথে সংযুক্ত করেছে পাহাড়পুর গ্রাম পঞ্চায়েতের এই বুথকে। তাঁর স্বামী গৌতম হালদার হাটে হাটে মাছ বিক্রি করে সংসার চালান। 

পায়েলকে হুমকি দেওয়া অডিও ক্লিপ এখন ভাইরাল। তবু অস্বীকার করছে তৃণমূল। ক্লিপে শোনা যাচ্ছে, ‘‘‘বৌ-টা তো তোর, দাঁড়ালে তো তোর ওপর চাপ আসবে।’’ আবার শোনা যাচ্ছে, ‘‘তোর বৌ দাঁড়াবে তোর পারমিশন নেবে না।’’

অডিও ক্লিপের শোনা যাচ্ছে তৃণমূলের ব্লক কমিটির নেতা সঞ্জীব কর্মকার, হাট কমিটির সম্পাদকও, হুমকির সুরে বলছেন, ‘‘স্ত্রী সিপিএম’র প্রার্থী হলে তাকে হাটে ব্যবসা করতে দেওয়া হবে না।’’ শুধু ফোনে হুমকি নয় জলপাইগুড়ি বিডিও অফিসে মনোনয়ন জমা করতে গিয়ে তাঁরা তৃণমূলের রোষের শিকার হন। বিডিও অফিসের ভেতর তাঁদের মনোনয়ন পত্র ছিঁড়ে দেয় তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা। পরে সিপিআই(এম) নেতৃত্বের তৎপরতায় পায়েল মনোনয়ন দাখিল করেন। তিনি জলপাইগুড়ি কোতোয়ালি থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন।

গৌতম হালদার বলেন‘‘আমি হাটে হাটে মাছ বিক্রি করি। আমরা দিন আনি দিন খাই। আমার স্ত্রী ভোটে মনোনয়ন দাখিল করার পর থেকে আমাকে ও আমার স্ত্রীকে শাসক দলের পক্ষ থেকে ফোন করে লাগাতার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। আমরা প্রশাসনের সহযোগিতা চাইছি।’’ 

পার্টির এরিয়া কমিটির সম্পাদক দীপক গাঙ্গুলীএরিয়া কমিটির সদস্য ও পাহাড়পুর এলাকার নেতা আজম আলি আব্বাস জানান, পাহাড়পুর গ্রাম পঞ্চায়েতের বিভিন্ন বুথে সিপিআই(এম) প্রার্থীদের প্রার্থী পদ প্রত্যাহার করে নিতে ক্রমাগত হুমকি দিচ্ছে তৃণমূলের দুষ্কৃতী বাহিনী।

Comments :0

Login to leave a comment