Tripura vlogger beaten up

হিন্দু ছেলে মুসলিম চরিত্রে কেন ? ত্রিপুরায় যুবককে মারধর হিন্দুত্ববাদীদের

জাতীয়

হিন্দু ছেলে কেন মুসলিম চরিত্র করবে এই অভিযোগে এক যুবককে বেধড়ক মারধর করা হলো। উত্তর প্রদেশ বা গুজরাট নয়, এই ঘটনা ত্রিপুরায়। শনিবার রাতে ওই যুবকের বাড়ি থেকে ডেকে পাঠিয়ে বিজেপি’র পঞ্চায়েত উপপ্রধানের নেতৃত্বে মারধর করা হয়। তারপর সেই মারধরের ভিডিও বিজেপি’র লোকেরাই ছড়িয়ে দেয় সোসাল মিডিয়ায়। মারধরের পরে ওই যুবকের নামেই থানায় অভিযোগ দায়ের করেছে বিজেপি’র লোকেরা। পুলিশ যারা মারধর করেছে তাদের গ্রেপ্তার করার বদলে ওই যুবককেই থানায় ডেকে পাঠিয়েছে সোমবার। বিষয়টি জানাজানি হতেই তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়েছে। নেটিজেনরা প্রশ্ন তুলেছেন এ কোন ত্রিপুরা, কোন সংস্কৃতির আমদানি করা হচ্ছে! অভিনয় করার জন্য মারধর করা হবে!
রাজ্যে অনেক তরুণই নানা ধরনের ভিডিও কনটেন্ট তৈরি করে সোসাল মিডিয়ার বিভিন্ন মাধ্যমে প্রকাশ করেন। উদয়পুরের খুপিলং এলাকার বাপন নন্দীও তেমনই নানা ধরনের কনটেন্ট তৈরি করেন। ভিডিও কনটেন্ট ক্রিয়েটার হিসাবে পরিচিতিও তৈরি হয়েছে বাপনের। সামাজিক সচেতনতা এবং কৌতূকের ভিডিও কনটেন্ট তৈরি করেছে আগে। সেই সব প্রশংসিতই হয়েছে। কিন্তু শনিবার কি এমন অপরাধ করে ফেলেছেন, বুঝতে পারছেন না ওই যুবক। বাপন নন্দী ব্লগ নামে ওই পেজে একটি চার মিটিটের ভিডিও পোস্ট করেন বাপন। ভিডিওটি ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়ে তৈরি একটি গান। কয়েকটি অল্পবয়সি ছেলেমেয়ে ঈদের দিনের আনন্দ করছে, শুভেচ্ছা জানাচ্ছে। সম্প্রীতির কথা বলছে। লড়াই ভুলে ভাইকে বুকে জড়িয়ে ধরার কথাও বলা আছে গানে।  
সম্ভবত লড়াই ভুলে সম্প্রীতির কথা বলাতেই  খেপে উঠেছে হিন্দুত্বের বাহিনী। ভিডিওটি শনিবার ঈদের দিন সামনে আসতেই সন্ধ্যার সময়ে ফোন করে বাপনকে পুলিশ লাইন বাজারের কাছে ডাকে বিজেপি’র স্থানীয় নেতারা। সেখানে ছিলেন পঞ্চায়েতের উপপ্রধান অনু মুড়াসিং সহ অন্য বিজেপি কর্মীরা। এই গোটা ঘটনায় মুখ্য ভূমিকা নেন রাধাকিশোরপুর থানার আর এফ টিলা গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান অনু মুড়াসিং। কেন হিন্দু পরিবারের ছেলে মুসলিম চরিত্রে অভিনয় করেছে এই কথা বলে তার জামা টেনে ধরে চড় থাপ্পড় মারতে থাকে। সোসাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে বিজেপি’র ওই নেত্রী বাপনকে মারছে। মারতে মারতে নেত্রীকে বলতে শোনা যাচ্ছে, হিন্দুত্বকে নষ্ট করছো! হিন্দু ঘরের ছেলে হয়ে মুসলিম সাজছো! মারধর থেকে বাঁচতে বাপনকে হাতজোড় করে কাতর অনুরোধ করতে দেখা যাচ্ছে ভাইরাল হয়ে যাওয়া ভিডিওতে। 
রবিবার এই বিষয়ে বাপনের সঙ্গে কথা বললে তিনি জানান, আমি সোসাল মিডিয়ার জন্য বিভিন্ন ধরনের কনটেন্ট তৈরি করি। এটাই আমার পেশা। বাবা-মা সহ পরিবার চালানোর দায়িত্ব তাঁর কাঁধেই। বললেন, কেউ কোনোদিন বলতে পারবে না যে আমি সোসাল মিডিয়ায় কোনও খারাপ কনটেন্ট দিয়েছি। কালও যেটা দেওয়া হয়েছে সেটাতেও কোনও খারাপ কিছু নেই। আমি এখনও বুঝতে পারছি না এরজন্য আমাকে মারধর করা হলো কেন,  বাপন বললেন, এই ভিডিওটাও আমি তৈরি করিনি। আগরতলা থেকে পরিচিত একজন ঈদের শুভেচ্ছা জানানো এই গানটির ভিডিও তৈরির কথা জানান। সেটাতে কাজ করেছি। সামান্য অভিনয়ও করেছি। এরজন্য মারধর করতে হবে! পুলিশে অভিযোগ জানিয়েছেন?,  জবাবে বাপন বললেন,,  আমরা খুব সাধারণ ঘরের। যারা আমাকে মেরেছে তাদের অনেক ক্ষমতা। আমার কি সাধ্য যে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানাই। ওরাই আমাকে মারধর করার পরে পুলিশে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে। পুলিশ আমাকে সোমবার থানায় ডেকেছে। আমি যাব। 
এই ঘটনায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে সাধারণ পরিবারের বছর তেইশের ওই যুবক। বাবা-মাও ছেলেকে নিয়ে আতঙ্কে রয়েছেন শনিবারের রাতের ঘটনার পর থেকে। এদিনও সকাল থেকে বাড়িতে রান্নাও হয়নি। বাপন বললেন,  যেভাবে এই ঘটনা ভাইরাল হয়েছে, আমাকে ট্রোল করা হয়েছে মনে হচ্ছিল আত্মহত্যা করি। পরে নেটিজেনরা অনেকে দৃঢ়তার সঙ্গে দাঁড়িয়েছেন বাপনের পাশে। অনেকে ফোন করেও সাহস জুগিয়েছে তাঁকে। 
বিজেপ’র শাসনে ত্রিপুরার ঐতিহ্যপূর্ণ কৃষ্টি, সংস্কৃতি, এমনকি সৌভ্রাতৃত্বও প্রশ্নের মুখে বলে বিভিন্ন মহল থেকে উদ্বেগ জানানো হয়েছে। ‘‘ত্রিপুরা সংস্কৃতি সমন্বয় কেন্দ্র’’ রবিবার রাতে এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বলেছে, অবাক কাণ্ড! এ তো অভিনয় মাত্র! অভিনয়ও করা যাবে না, এর মধ্যে ধর্ম আসছে কোথা থেকে?  অভিনয়ের জন্য বাপন একটি ভিডিওতে অংশগ্রহণ করেছে,  এজন্য তার উপর যে আক্রমণ আনা হয়েছে, ত্রিপুরা রাজ্যের জাতি-উপজাতি সব ধরনের শিল্পীদের সংগঠন ‘‘ত্রিপুরা সংস্কৃতি সমন্বয় কেন্দ্র’’ এর তীব্র  প্রতিবাদ জানাচ্ছে। সোসাল মিডিয়ায় নেটিজেনদের অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, উপপ্রধানের মতো সাংবিধানিক পদে থেকে একজন কনটেন্ট ক্রিয়েটরকে ঈদের শুভেচ্ছা জানানোর গান তৈরি করার অপরাধে কি করে বেধড়ক পেটাতে পারে তা বোধগম্য হচ্ছে না।
সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক জীতেন্দ্র চৌধুরি এদিন রাতে এই প্রসঙ্গে বলেছেন, বিজেপি শাসনে এইধরনের ঘটনা নতুন নয়। সমস্ত ঘটনাতেই জড়িতে শাসক দলের লোকেরা। তাদের পৃষ্ঠপোষকতাতেই এইসব ঘটনা ঘটছে। কয়েক বছর ধরেই সাম্প্রদায়িক জিগির ছড়ানোর চেষ্টা চলছে উদয়পুর সহ সংলগ্ন এলাকায়। এই ঘটনাও তেমনই, বিচ্ছিন্ন বিষয় নয়। বারবার এইধরনের ঘটনা ঘটছে কারণ বিজেপি শাসনে অপরাধীদের কোনও শাস্তি হচ্ছে না।
 

Comments :0

Login to leave a comment