জম্মুর পুঞ্চে সেনা হেপাজতে তিন সাধারণ নাগরিকের মৃত্যুর ঘটনার নিন্দা করেছে সিপিআই(এম) পলিট ব্যুরো।
রবিবার পলিট ব্যুরো প্রেস বিবৃতিতে বলেছে, ‘‘সেনা হেপাজতে অত্যাচারের কারণেই ৩ গ্রামবাসীর মৃত্যু হয়েছে। জম্মু-কাশ্মীর প্রশাসন নিহতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণের আশ্বাস এবং সরকারি চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। কিন্তু এটা যথেষ্ট নয়। অবিলম্বে যথাযথ তদন্ত করে দোষীদের চিহ্নিত করতে হবে এবং উপযুক্ত শাস্তি দিতে হবে।’’
জম্মু ও কাশ্মীরে অস্থিরতা বাড়ছে। রাজ্যে জারি রয়েছে কেন্দ্রের শাসন। বিধানসভা নির্বাচন করানো হয়নি। সেই অবস্থাতেই সংসদে জম্মু ও কাশ্মীর সংক্রান্ত একের পর এক আইন পাশ করা হচ্ছে।
সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম এদিনই হরিপালে সমাবেশে প্রশ্ন তুলেছেন কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের মনোভাবে। তিনি বলেছেন, ‘কাশ্মীরে মানুষ মারা যাচ্ছে। অথচ সংসদে কেউ প্রশ্ন তুলতে পারবে না। বিরোধী ১৪৬ সাংাসদকে সাসপেন্ড করে দেওয়া হয়েছে।’’
বৃহস্পতিবার জম্মু-কাশ্মীরের পুঞ্চের বাফলিয়াজ অঞ্চলে সেনার একটি কনভয়ে অতর্কিতে হামলা চালায় উগ্রপন্থীরা। ঘটনায় ৪ জওয়ান প্রাণ হারান। গুরুতর আহত হন আরও ৩জন। আহতদের মধ্যে ১জন পরবর্তীকালে প্রাণ হারিয়েছেন বলে সংবাদসংস্থা ‘দ্যা ওয়্যার’ জানিয়েছে।
এর পালটা স্থানীয় টোপা মাস্তানদারা গ্রামের ৮জন গ্রামবাসী এবং পশুপালককে তুলে নিয়ে যায় রাষ্ট্রীয় রাইফেলসের জওয়ানরা। তার মধ্যে প্রাণ হারিয়েছেন ৩জন। বাকিরা গুরুতর আহত অবস্থায় সেনা হাসপাতালে ভর্তি।
দ্যা ওয়্যার পত্রিকা জানাচ্ছে, একটি ভাইরাল হওয়া ভিডিও’তে দেখা গিয়েছে, আটকদের উপর অত্যাচার চালাচ্ছে সেনা জওয়ানরা। আটক গ্রামবাসীদের বিবস্ত্র করে ফাইবারের লাঠি দিয়ে পেটানো হচ্ছে। ওয়্যার লিখছে, ভিডিও’তে দেখা গিয়েছে নিথর হয়ে মেঝেতে পড়ে রয়েছে এক কিশোর।
সেনা হেফাজতে মৃত তিনজনের নাম সাফির হোসেন, মহম্মদ সওকত এবং শাবির আহমেদ। নিহত সওকতের কাকা মহম্মদ সিদ্দিকি স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য। তাঁর অভিযোগ, নিহত এবং আটকদের বিরুদ্ধে থানায় একটিও অভিযোগ নেই। তাঁর ভাইপো নিরপরাধ। দফায় দফায় প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করেও ভাইপোর উপর অত্যাচার বন্ধ করতে পারেননি তিনি।
মহম্মদ সিদ্দিকিকে উদ্ধৃত করে ওয়্যার লিখেছে, সেনার তরফে তাঁদের যোগাযোগ করে বলা হয় দেহ নিয়ে যেতে। তিনি প্রশ্ন করেন, ‘‘৩জনকে কেন খুন করা হল?’’ জবাবে বলা হয়, ‘‘নিজেদের দোষেই প্রাণ হারিয়েছে ওই ৩জন।’’
শুক্রবার তাঁদের দেহ উদ্ধারের পরে ক্ষোভে ফেটে পড়েন স্থানীয় বাসিন্দারা। দফায় দফায় অবরোধ হয়। পরিস্থিতি সামাল দিতে পুঞ্চের ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়।
জম্মু-কাশ্মীর প্রশাসনের তরফে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করা না হলেও নিহতদের পরিবারকে আর্থিক ক্ষতিপূরণ ও সরকারি চাকরির প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। ওয়াকিবহাল মহলের মতে, এর থেকেই স্পষ্ট, স্থানীয়দের অভিযোগ ভিত্তিহীন নয়।
নিহতরা মুসলিম গুজ্জর এবং বকরওয়াল, পশুপালন করে এই জনজাতির অনেকেই। কার্গিল যুদ্ধের সময় বকরেওয়াল পশুপালকদের তৎপরতায় পাকিস্তানি হানাদারদের গতিবিধি ভারতীয় সেনার নজরে এসেছিল। এর আগে এবং পরে উগ্রপন্থীদের মোকাবিলায় সেনাকে নানাভাবে সাহায্য করেছেন এই জনজাতির মানুষ।
চলতি বছরে এই অঞ্চলে ২৪জন উগ্রপন্থী এবং ২১জন সেনা জওয়ান এবং অফিসার নিহত হয়েছেন। ২০২৩ সালে কাশ্মীরে ২৮জন সেনাকর্মী সহ ১২৪ জন প্রাণ হারিয়েছেন। প্রশাসনের দাবি এই বছরে এখনও অবধি ৮৩ জন উগ্রপন্থীকে হত্যা করা হয়েছে। অথচ সংসদে তা নিয়ে প্রশ্ন তোলার উপায় থাকছে না। প্রধানমন্ত্রী এবং বিজেপি দাবি করে চলেছে জম্মু ও কাশ্মীরের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে।
Comments :0