CPIM RALLY

হানাহানি ও লুটের রাজনীতি রুখে দিচ্ছে বাংলা

রাজ্য জেলা

CPIM west bengal panchayat election TMC BJP

অনন্ত সাঁতরা ও শুভ্রজ্যোতি মজুমদার: শ্রীরামপুর 

বাংলার মানুষ ধর্মের নামে হানাহানি চায় না। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও ঐক্য দৃঢ় করে ক্ষমতাসীন দুর্নীতিগ্রস্ত লুটেরাদের শাস্তি চায়। রবিবার সিপিআই(এম)’র হুগলী জেলা কমিটির ডাকে শ্রীরামপুর থেকে রিষড়া পর্যন্ত মহামিছিলে অংশ নিয়ে একথা বলেছেন পার্টির রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম।

জনস্রোতের মতো মহামিছিল থেকে এদিন মুহুর্মুহু উঠেছে ‘চোর ধরো, জেলে ভরো’ স্লোগান। পাশাপাশি সাম্প্রদায়িক বিভাজনের রাজনীতির বিরুদ্ধে দৃপ্ত স্লোগানে কেঁপে উঠেছে জিটি রোড। 


মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে, দুর্নীতিগ্রস্তদের শাস্তির দাবিতে এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষার আহ্বান জানিয়ে এদিন শ্রীরামপুর ইএসআই হাসপাতালের সামনে থেকে লাল ঝান্ডা হাতে হাজার হাজার মানুষের মিছিল শুরু হয়। 

মিছিল জিটিরোড ধরে শ্রীরামপুর ওভারব্রিজ, বটতলা, মাহেশ, শিরিষতলা, সন্ধ্যা বাজার হয়ে ৬ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে রিষড়া বাগখালে পৌঁছালে সেখানে সংক্ষিপ্ত সভা হয়। মিছিলের পুরোভাগে ছিলেন পার্টির রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শ্রীদীপ ভট্টাচার্য, জেলা সম্পাদক দেবব্রত ঘোষ, রাজ্য কমিটির সদস্য মনোদীপ ঘোষ সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।

শুরু থেকেই মিছিলে ছিল অগণিত মানুষের ভিড়। জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ট্রেন ও বিভিন্ন যানবাহনে তাঁরা সমবেত হন। লাল পতাকা হাতে ছাত্র, যুব, মহিলা, কৃষক ও শ্রমিকদের অংশগ্রহণে উত্তাল মিছিল দেখতে রাস্তার দু’ধারেও ছিল অজস্র মানুষের ভিড়। দোকান, বাড়ি, আবাসনের বারান্দা, ছাদে বহু মানুষ জড়ো হয়ে মিছিল দেখছিলেন। পথচলতি মানুষজন মিছিলকে হাত নেড়ে উৎসাহিত করেন, মিছিলের ছবি মোবাইলবন্দি করেন।


রিষড়া বাগখালে মিছিল শেষে সভায় বক্তব্য রাখেন মহম্মদ সেলিম, শ্রীদীপ ভট্টাচার্য। সভাপতিত্ব করেন দেবব্রত ঘোষ। 

মহম্মদ সেলিম বলেন, ধর্মের নামে, জাতের নামে মানুষকে ভাগ করে এক অংশকে আরেক অংশের বিরুদ্ধে হানাহানিতে লাগিয়ে দিতে চাইছে শাসকরা। কিন্তু মানুষ কি চাইছেন? শান্তি চাইছেন, কাজ চাইছেন, নিরাপত্তা চাইছেন, ছেলেমেয়েরা যাতে শিক্ষার সুযোগ পায় তা চাইছেন, বৃদ্ধ মানুষজন সরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবা চাইছেন। কিন্তু কেন্দ্র এবং রাজ্যের সরকার এসব চাওয়া-পাওয়ার মধ্যে ঢুকতে চায় না। তারা চাইছে কোথাও জাতির নামে, কোথাও ধর্মের নামে অশান্তি বাধিয়ে মানুষকে শায়েস্তা করতে। মনিপুরে এভাবেই জাতির নামে হাঙ্গামা বাধানো হয়েছে, এরাজ্যের জঙ্গলমহলেও সেই চেষ্টা হচ্ছে। হাওড়া, হুগলীতে ধর্মের নামে রামনবমীর নামে হানাহানি তৈরির চেষ্টা হয়েছিল। আমরা বামপন্থীরা হাওড়া ও হুগলীর মানুষকে ধন্যবাদ জানাবো যে তাঁরা এখানে দাঙ্গা হতে দেননি। দাঙ্গা ও লুটের রাজনীতিকে সমর্থন করেননি। বাংলার মানুষও এটাকে প্রত্যাখ্যান করেছেন। বাংলার মানুষ হিন্দুর বিরুদ্ধে মুসলমান, মুসলমানের বিরুদ্ধে হিন্দু এই বিভাজনের পক্ষে নেই। তাঁরা চোর ধরার জন্য, দুর্নীতিবাজদের ধরার জন্য, লুটেরাদের ধরার জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন। কেন্দ্র ও রাজ্যের সরকারের জনবিরোধী কার্যকলাপের বিরুদ্ধে, লুটের রাজত্বের বিরুদ্ধে মানুষ ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে। গ্রাম শহরে যেভাবে মানুষ জাগছে, মানুষের মনোভাব আমাদের মনোবল বাড়াচ্ছে। 


শ্রীদীপ ভট্টাচার্য বলেন, কেন্দ্রের মোদী সরকারের জমানায় আমাদের দেশের মানুষের জীবন জীবিকার অধিকার আক্রান্ত। বেঁচে থাকার সব অধিকার কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। আমাদের দেশের গরিবরা আরও গরিব হচ্ছেন, আর কিছু বড়লোকের সম্পদ বাড়ছে। বিজেপি’র ঘনিষ্ঠ আদানি ও আম্বানির সম্পদ ব্যাপকহারে বাড়ছে। কেন্দ্রের এই জনবিরোধী শাসকের দোসর হয়েছে এরাজ্যের তৃণমূল। তাই এই দুই শক্তির বিরুদ্ধে মানুষকে সংগঠিত করে লড়াই করতে হবে। এই লড়াইতে সমস্ত অংশের মানুষ ক্রমশ সমবেত হচ্ছেন। শ্রমিক, কৃষক, খেতমজুর, মহিলা, ছাত্র-যুব, আদিবাসী-দলিত মানুষ সবাই লড়ছেন তাঁদের অধিকার রক্ষার স্বার্থে। 

পার্টির জেলা সম্পাদক দেবব্রত ঘোষ বলেন, এরাজ্যের দুর্নীতির মূল কারিগরদের চ্যালাচামুণ্ডাদের ধরে মানুষের নজর ঘোরানো যাবে না। যতদিন পর্যন্ত দুর্নীতির আসল কারবারী মাথাগুলোকে ধরা না হচ্ছে ততদিন লড়াই তীব্র থেকে তীব্রতর হবে। 

Comments :0

Login to leave a comment