Durga Puja

ভাতের চিন্তায় দিন কাটে, রোশনাই থেকে বহু দূরে সবিতার পরিবার

জেলা

প্রবীর দাস
 

টিভির পর্দায় যখন রাজনীতিবিদ, সেলিব্রিটিরা কেমনভাবে কাটাচ্ছেন তারা তাদের পুজোর কটাদিন তার খোশগল্পে মশগুল ঠিক তখনই তার উল্টোদিকে নিদারুণ উল্টো ছবি লোনা মাটির দেশে। পুজোর রোশনাই থেকে যোজন খানিক মাইল দূরে গাঢ অন্ধকারে ঢাকা নিকশ কালো জীবনে পদে পদে বঞ্চনার করুন উপাখ্যান। তাদেরই একজন সবিতা হালদার। তাঁর স্পষ্ট উচ্চারণে কয়েকটি শব্দ চয়নে বোঝা গেল দুর্গা পুজোর আনন্দ তাদের কাছে বিলাসিতা ছাড়া আর কিছুই নয়। বললেন আধপেটা জীবন। আজ খেলাম তো কাল কী হবে? সেই চিন্তায় রাতে ঘুম আসে না আমাদের আবার পুজো! একদিকে ঢাকের আওয়াজ, মাইকের চিল চিৎকার। অন্যদিকে ডেঙ্গুর আতঙ্ক। আবহাওয়ার আগাম আশঙ্কা বার্তা। অষ্টমী পর্যন্ত খটখটে। নবমীতে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টির সম্ভাবনা দুই ২৪পরগনা জুড়ে। তারই মধ্যে পুজোর আনন্দ ভাগ করে নিতে মানুষের ঢল নামতে শুরু করেছে। এদিকে পুজো উদ্বোধনে ডজন ডজন নেতা, মন্ত্রীদের দৌড়াদৌড়ি। কেউ কেউ রাজনৈতিক প্রচার সারতে উদ্বোধন মঞ্চকে ব্যবহার করতে ভুলছেন না। সবটা নিয়ে পুজোর আনন্দে মাতোয়ারা বাঙালি। পুজোর কটা দিন কিভাবে আনন্দ হইহুল্লোড়ের মধ্যে কাটাবেন সেই নিয়ে পরিকল্পনা শুরু করে দিয়েছেন। আর তাদের আনন্দ তো দূরে থাক কিভাবে দু মুঠো অন্যের ব্যবস্থা করবেন সেই চিন্তায় রাতে ঘুমই আসে না। অনেকের কাছে পুজোর কটা দিন একটু আলাদা হলেও প্রত্যন্ত সুন্দরবন অঞ্চলের হিঙ্গলগঞ্জের নারকেলতলা এলাকার তারকনাথ হালদারের পরিবারের সদস্যদের কাছে একেবারেই আলাদা নয়। পুজো আসুক বা যাক তাতে তাদের কোন মাথা ব্যথা নেই। তাদের শুধু একটাই চিন্তা কিভাবে দুমুঠো খেয়ে বেঁচে থাকব। এই নিয়েই তাদের প্রতিদিনকার সংগ্রাম। মাটির দেওয়ালের উপর কোন রকমে ত্রিপল টানিয়ে বসবাস করছেন তারকনাথ হালদার ও তার স্ত্রীর সবিতা হালদার। তাদের দুই মেয়ের মধ্যে একজনের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। আরেকটি চোদ্দ বছরের মেয়ে রয়েছে তাদের। প্রবল ঘূর্ণিঝড় আমফানে তাদের বাড়িঘর ভেঙে যাওয়ার পর সরকারি সাহায্য মাত্র পাঁচ হাজার টাকা পেয়েছিলেন। পাঁচ হাজার টাকা পাওয়ার পর তা থেকে দুই হাজার টাকা স্থানীয় নেতাদের হাতে তুলে দিতে হয়েছিল। তিন হাজার টাকা দিয়ে কোন রকমে সংসারের রান্নাবান্নার জন্য হাড়ি, কড়া ও সংসারের অন্যান্য জিনিসপত্র কিনতে হয়েছিল। অসুস্থ তারকনাথ হালদার এলাকার অন্যান্য লোকেদের মতো ভিন রাজ্যে গিয়ে কাজকর্ম করতে পারেন না। এলাকায় কোন রকমে দিনমজুরের কাজ করে দৈনিক দুশো টাকা রোজগার হয়। তাও প্রতিদিন সেই রোজগার হয় না। সরকারি সাহায্য বলতে রেশনের চাল আর কোনরকম সরকারি সাহায্য মেলেনি বলে দাবি তারকনাথের স্ত্রী সবিতা হালদারের। বাড়ির সামনে ছোট্ট একটি ত্রিপালের তলায় কোন রকমে কাঠ পাতা কুড়িয়ে চলে রান্নাবান্নার কাজ। রোজগার যা হয় তাতে ওষুধ কিনতেই চলে যায়। কোন রকমে রেশনের চালটুকু ফুটিয়ে খেয়ে বেঁচে আছি। এমনটাই দাবি সুবিতা হালদারের।

Comments :0

Login to leave a comment