কেরালার মাঠে কেরালা ব্লাস্টার্সকে ৪-২ গোলে পর্যুদস্ত করল লাল হলুদ। একইসঙ্গে প্রবল ভাবে ফিরে এল আইএসএলের টপ সিক্সে ওঠার লড়াইয়ে। এদিন ইস্টবেঙ্গলের হয়ে ২টি করে গোল করেন নওরেম মহেশ এবং সল ক্রেসপো। কেরালার হয়ে গোল ১টি গোল করেন ফেডর সার্নিচ। অপর গোলটি ইস্টবেঙ্গল ডিফেন্ডার হিজাজি মাহেরের ‘ওন গোল’।
কোচির জওহরলাল নেহরু স্টেডিয়ামে কেরালা ব্লাস্টার্স সমর্থকরা টিফো নিয়ে এসেছিলেন, যাতে লেখা ছিল এই স্টেডিয়াম আমাদের দুর্গ। ম্যাচের শুরুতে সমর্থকদের সেই আত্মবিশ্বাসের মর্যাদা দেয় টিম কেরালা। ২৩ মিনিটে মাঝমাঠ থেকে বাড়ানো বল ধরে গতিতে এগিয়ে যান ফেডর। ইস্টবেঙ্গল ডিফেন্ডার অ্যালেক্স্যান্ডার প্যান্টিচ স্লাইডিং ট্যাকেল করতে গিয়ে ভুল করে বসেন, এবং বল কাড়ার বদলে বলের দখল দিয়ে বসেন ফেডরকেই। ফেডর মাটি ঘেঁষা শট মারেন, এবং সেই বল শরীর দিয়ে আটকাতে গিয়ে, বল ফস্কান লাল হলুদ গোলরক্ষক প্রভসুখন সিং গিল। বল জালে ঠেলতে ভুল করেন নি ফেডর সার্নিচ।
গোল হজম করলেও ম্যাচ থেকে একবারও হারিয়ে যায়নি ইস্টবেঙ্গল। বরং আক্রমণে চাপ বাড়াতে থাকে লাল হলুদ। দুই প্রান্ত ধরে দলের দুই তরুণ তুর্কি বিষ্ণু এবং সায়নের গতি কার্যত ঝড় তোলে। প্রথমার্ধের সংযুক্ত সময়ে সায়নকে নিজেদের পেনাল্টি বক্সে ফাউল করে কেরালা। পেনাল্টি থেকে ঠান্ডা মাথায় গোল করে দলকে ম্যাচে ফেরান সল ক্রেসপো।
প্রথমার্ধের শেষে স্কোরে সমতা থাকলেও, দুই দলের শক্তির বিন্যাসে বদল ঘটে। ৪৫ মিনিটে দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখে মাঠের বাইরে চলে যান কেরালার জ্যেকসন সিং। প্রতিপক্ষের দুর্বলতার এই সুযোগ নিয়ে ম্যাচ পকেটে পুরতে ঝাঁপিয়ে পড়ে গোটা দল। সেই চেষ্টার ফসল হিসেবে ৭১ মিনিটে ফের গোল করেন সল। বিষ্ণুর পরিবর্ত হিসেবে নামা আমন সিকে কেরালা বক্সে বল নিয়ে ঢুকে সলকে স্কোয়ার পাস বাড়ান। সেই পাসে ছিটকে যায় পুরো কেরালা ডিফেন্স। নিশানায় গোলা দাগতে ভুল করেন নি ইস্টবেঙ্গল মাঝমাঠের হৃদস্পন্দন।
ব্যবধান ২-১ হয়ে যাওয়ার পরেই মেজাজ হারাতে শুরু করেন ব্লাস্টার্সের খেলোয়াড়রা। ৭২ মিনিটে আমন সিকের কাছে গতি এবং স্কিলে পরাজিত হন নওচা সিং। সেই হতাশায় আমনকে ঢুঁশো মারেন তিনি। দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখিয়ে সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে মাঠের বাইরে পাঠান রেফারি। কেরালা নেমে যায় ৯জনে।
ম্যাচের টুইস্ট তখনও বাকি ছিল। বাকি ছিল মহেশ ম্যাজিকেরও। ৮২ মিনিটে প্রান্ত থেকে আক্রমণ গড়ে তুলে ভাসানো ক্রস ভাসান মহেশ। ঘূর্ণির মত তীব্র সেই শট হেড করে ক্লিয়ার করতে যান কেরালার ডাইসুকে। বল তাঁর মাথায় লেগে ঢুকে যায় গোলে। রেফারি যদিও মহেশকেই গোলটি দেন। এর পরেও বাকি ছিল চমক। এর ঠিক ২ মিনিটের মধ্যে ইশান পন্ডিতার ক্রস ক্লিয়ার করতে গিয়ে ‘ওন গোল’ করে বসেন হিজাজি মাহের। ম্যাচের স্কোর তখন ৩-২।
ইস্টবেঙ্গল ম্যাচ পকেটে পুরে নেয় এর ৩ মিনিট পরেই। ফের মহেশ ঝড়। ভিক্টর ভাসকুয়েজের পাস রিসিভ করেন মহেশ। সেই বল জোরালো ঠিকানা লেখা শটে জালে জড়িয়ে দেন জাতীয় দলের নিয়মিত এই খেলোয়াড়। ৪-২ ব্যবধান হয়ে যাওয়ার পরে আর ম্যাচে ফিরতে পারেনি কেরালা।
এই ম্যাচ জয়ের ফলে লিগ তালিকার সপ্তম স্থানে উঠে এল লাল হলুদ। ২০ ম্যাচে ২১ পয়েন্ট। এই আইএসএলে আর ২টি ম্যাচ বাকি কার্লেস কুয়াদ্রাতের টিমের। সেই পাঞ্জাব এবং বেঙ্গালুরু ম্যাচ জিতলেই খুলে যেতে পারে আইএসএলের টপ সিক্সের দরজা। ইস্টবেঙ্গলের আইএসএল ইতিহাসে প্রথম বারের জন্য। ঠিক যেমন প্রথম বারের জন্য ২০ পয়েন্টের গন্ডী টপকালো লাল হলুদ।
Comments :0