EDITORIAL

কিসের লোভে এখনো ক্ষমতা আঁকড়ে?

জাতীয় সম্পাদকীয় বিভাগ

ভারতের মতো একটি গণতান্ত্রিক দেশে শিক্ষাক্ষেত্রে দুর্নীতি এবং সর্বভারতীয় স্তরে পরীক্ষা ব্যবস্থার মাফিয়াকরণ যে ব্যাপকতায় ও গভীরতায় পৌঁছেছে তাতে এখনো কেন দেশের শিক্ষামন্ত্রী পদ আঁকড়ে বহাল তবিয়তে বিরাজমান সেটাই সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয়। এই বোধবুদ্ধিও কি তাঁর লোপ পেয়েছে যে তিনি বুঝতে পারছেন না দেশের মানুষ বিশেষ করে ছাত্র-যুব সমাজ তাঁকে ঐ পদে কোনও অবস্থাতেই দেখতে চাইছেন না। এমন একজন অযোগ্য, ব্যর্থ ও অপদার্থ মন্ত্রীকে ভারতের মতো দেশের শিক্ষা মন্ত্রকে মানায় না। যে কাণ্ড ইতিমধ্যেই ঘটে গেছে এবং যে দৃশ্য দুনিয়ার সামনে উন্মোচিত হয়েছে তাতে এহেন ব্যক্তির এক মুহূর্তের জন্যও ওই পদে বসে থাকার নৈতিক অধিকার নেই। ছাত্র সমাজ তথা দেশের আগামী প্রজন্মের প্রতি যদি তার ন্যূনতম সংবেদনশীলতা থাকত, শিক্ষা ব্যবস্থার স্বচ্ছতা ও নিষ্কলুসতার গৌরব সম্পর্কে যদি ন্যূনতম উপলব্ধি থাকত, তাহলে অনেক আগেই পদ ছেড়ে দিতেন। তার চেয়েও বিস্ময়ের স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীও শিক্ষামন্ত্রীকে পদ ছাড়তে বলছেন না। অর্থাৎ প্রধানমন্ত্রী চান হাজার দুর্নীতি হোক, শিক্ষার ব্যবস্থা লাটে উঠুক তবু দায় স্বীকার করা যাবে না। বরং ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে থেকে লাগাতার চেষ্টা করে যেতে হবে মানুষের চোখে ধুলো দিয়ে, নানা অপ্রাসঙ্গিক ও বিভ্রান্তিকর বিষয় সামনে এনে মহা কেলেঙ্কারিকে যথাসম্ভব লঘু করা। তথাকথিত কমিটি এবং সিবিআই তদন্তের নামে গোটা বিষয়টাকে ঝুলিয়ে রেখে ধীরে ধীরে ভুলিয়ে দেওয়ার চিরাচরিত কৌশল নেওয়া হয়েছে। আরও আশ্চর্যের বিষয় এত বড় ও ভয়ঙ্কর দুর্নীতি ধরা পড়ার পরও প্রধানমন্ত্রী নীরব। তাঁর মুখে কোনও কথা নেই। দুনিয়ার সব বিষয়ে তিনি কথা বলছেন, জ্ঞান বিতরণ করছেন কিন্তু এ বিষয়কে সচেতনভাবে এড়িয়ে যাচ্ছেন। তাঁর কাছে এটার কোনও গুরুত্বই নেই। এলেবেলে কোনও মামুলি ঘটনা মাত্র। মন্ত্রীসভার অন্য কোনও সদস্য, এমনকি দলের শীর্ষ নেতারা যথারীতি এড়িয়ে যাচ্ছেন।
মোদী-শাহদের জেনে রাখা উচিত অন্ধ হলে প্রলয় বন্ধ থাকে না। বালিতে মুখ গুঁজে রাখলে ঝড় থেমে যায় না। দু’হাতে ক্র্যাশে ভর দিয়ে কোনোরকমে ক্ষমতায় ফিরেছেন বলে ধরাকে সরা জ্ঞান করবেন না। বেশি ঔদ্ধত্য ভালো নয়। মানুষ জেনে গেছেন এবং বুঝে গেছেন শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণ ও সাম্প্রদায়িকীকরণের হাত ধরেই শিক্ষা ক্ষেত্রে দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে এবং শিক্ষা ব্যবসায়ীও শিক্ষা মাফিয়াদের দখলদারি কায়েম হয়েছে। তেমনি শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণ ও সাম্প্রদায়িকীকরণের লক্ষ্যেই শিক্ষার বিকেন্দ্রীকৃত ব্যবস্থাকে ভেঙে কেন্দ্রীভূত ব্যবস্থায় রূপান্তরিত করা হয়েছে। তার সুবাদে রাজ্য বা আঞ্চলিক স্তরের দুষ্কৃতীরা দেশব্যাপী নেটওয়ার্ক তৈরি করে দুর্নীতি ও মাফিয়াতন্ত্রকে অতিমাত্রায় শক্তিশালী করে তুলেছে এবং সরকারি অবহেলা, উদাসীনতা ও অপদার্থতার সুযোগ নিয়ে গোটা ব্যবস্থাকে কবজা করে ফেলেছে। তাই শিক্ষা ব্যবস্থা ও সর্বভারতীয় পরীক্ষা ব্যবস্থার গৌরব যদি ফেরাতে হয় তবে সবার আগে মোদী জমানায় গড়ে তোলা ব্যবস্থাকে ভেঙে ফেলতে হবে। শিক্ষার সর্বক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ সব পদ থেকে আরএসএস’র লোকদের অপসারণ করে প্রকৃত শিক্ষাবিদদের বসাতে হবে। সবার আগে অপসারণ করতে হবে শিক্ষামন্ত্রীকে।
 

Comments :0

Login to leave a comment