নেদারল্যান্ডসের ক্ষমতায় আসতে চলেছেন চরম দক্ষিণপন্থী জিয়ার্ট উইলডার্স। সেদেশের সংসদ নির্বাচনের শেষ প্রান্তে দাঁড়িয়ে এমন ছবি উঠে এসেছে।
মঙ্গলবার নেদারল্যান্ডসে সাধারণ নির্বাচন হয়। নির্বাচনের ফল প্রকাশের পরে দেখা যায় নেদারল্যান্ডসের সংসদের নিম্নকক্ষের দেড়শো আসনের মধ্যে ৩৫টি আসনে জিতেছেন জিয়ার্ট উইলডার্সের পার্টি ফর ফ্রিডম। গত নির্বাচনে ১৭টি আসনে জিতেছিল এই রাজনৈতিক দল।
সংবাদ সংস্থা এপি’র প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে, উইলডার্সকে নেদারল্যান্ডসের ডোনাল্ড ট্রাম্প বলে থাকেন তাঁর সমালোচকরা। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে এই প্রথম নেদারল্যান্ডসে উগ্র-দক্ষিণপন্থী কোনও শক্তি সাধারণ নির্বাচনে জয়ী হল। স্বাভাবিক নিয়মেই এই নির্বাচনের প্রভাব গোটা ইউরোপে পড়তে চলেছে।
জয়ের পরে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন উইলডার্স। কিন্তু নেদারল্যান্ডসের প্রধানমন্ত্রীর চেয়ারে বসার জন্য এখনও দীর্ঘ পথ হাঁটা বাকি তাঁর।
এপি লিখেছে, নেদারল্যান্ডসের ক্ষমতা দখলের জন্য জোট রাজনীতির আশ্রয় নিতেই হবে উইলডার্সকে। সেক্ষেত্রে তাঁর মুসলিম বিদ্বেষী ও অভিবাসন বিরোধী রাজনীতির সঙ্গে কতটা সম্পৃক্ত হতে চাইবে বাকি দলগুলি, সেই প্রশ্ন এখনই উঠতে শুরু করেছে।
উইলডার্স প্রকাশ্য সভা থেকে নেদারল্যান্ডসে মুসলিম প্রভাবমুক্ত করার কথা বলেছেন নিয়ম করে। তাঁর নির্বাচনের অন্যতম প্রতিশ্রুতি ছিল, ক্ষমতায় এলে নেদারল্যান্ডসে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে আলাদা করার জন্য গণভোটের আয়োজন করা হবে। একইসঙ্গে তিনি এশিয়া এবং আফ্রিকা থেকে আগত শরনার্থীদের জন্য দেশের দরজা পুরোপুরি বন্ধ করার পক্ষে। ‘বেআইনি’ অনুপ্রবেশকারীদের নেদারল্যান্ডস থেকে তাড়ানোর প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন তিনি। একইসঙ্গে নেদারল্যান্ডসকে ফের একবার জগৎ সভায় শ্রেষ্ঠ স্থানে বসানোর প্রতিশ্রুতিও দিয়ে ফেলেছেন উইলডার্স।
জোট সরকার গঠন ছাড়া গতি নেই বুঝে ইতিমধ্যেই অন্যান্য দলগুলিকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন উইলডার্স। সেই আবেদন খারিজ করে দিয়েছে বাম ঘেঁষা লেবার পার্টি এবং গ্রিন লেফ্টের জোট। এই জোট ২৬ আসনে জয়ী হওয়ার পথে। জোটের তরফে ফ্রান্স টিমারম্যান্স জানিয়েছেন, ‘‘উইলডার্সের সঙ্গে জোটের প্রশ্নই আসে না। যে দল মনে করে আমাদের দেশের সব সমস্যার জন্য দায়ী সব হারানো শরণার্থীরা, তাঁদের সঙ্গে সরকারে যাওয়া আমাদের পক্ষে অসম্ভব।’’
যদিও নিউ সোশ্যাল কন্ট্রাক্ট পার্টি’র তরফে ইতিবাচক বার্তা মিলেছে। এই দলটি ২০টি আসন পেয়েছে। সোশ্যাল কন্ট্রাক্টের পিয়েটার ওমটজিঘট্ বলেছেন, ‘‘আমরা সব সময় আলোচনার জন্য তৈরি’’।
সাম্প্রতিক সময়ে ইউরোপের একাধিক দেশের ক্ষমতায় এসেছেন উগ্র-দক্ষিণপন্থীরা। ২০২২ সালে ইতালির দখল নেয় চরম দক্ষিণপন্থী ব্রাদার্স অফ ইতালি পার্টি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে প্রথমবার ইতালিতে এমন একটি শক্তি জয়লাভ করে। ইতালি ছাড়াও স্লোভাকিয়া, স্পেন, জার্মানি, পোল্যান্ডের মত ইউরোপীয় দেশগুলিতে দক্ষিণপন্থীদের উত্থান চোখে পড়ার মত।
উইলডার্সের জয়ের খবরে প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অর্বান। তিনি বলেছেন, ‘‘বদলের হাওয়া এসে গিয়েছে। অভিনন্দন।’’
প্রসঙ্গত, দীর্ঘদিন ধরে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ভেঙে দেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছেন অর্বান। উইলডার্সের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিও তাই। ইংল্যান্ডের রক্ষণশীল সরকারও ব্রেক্সিটের মাধ্যমে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েছে। স্বাভাবিক ভাবেই নেদারল্যান্ডসের এই পট পরিবর্তনের ফলে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ভবিষ্যত নিয়ে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
Comments :0