Farmer Suicide

ঋণের ফাঁসে জড়িয়ে কালনায় আত্মঘাতী কৃষক

রাজ্য জেলা

Farmer Suicide


চাষের জমিতে গেলেই শোনা যাচ্ছে কৃষকদের হাহাকার, কান্নার শব্দ। লাগামছাড়া দাম দিয়ে সার কিনতে নাভিশ্বাস উঠেছে রাজ্যের কৃষকদের। অন্নদাতাদের অন্ন জুটছে না। পাট, শসা চাষ করতে গিয়ে ঋণের জালে জড়িয়ে রবিবার রাতে আত্মঘাতী হলেন এক কৃষক। মৃত কৃষকের নাম রাম ঘোষ(৫৩)। কালনা থানার কল্যাণপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের সর্বমঙ্গলা গ্রামের বাসিন্দা। সোমবার কালনা মহকুমা হাসপাতালে মৃতদেহের ময়নাতদন্ত হয়।


মৃতের ছেলে তমাল ঘোষ জানান, নিজের তিন বিঘা ছাড়াও পরের জমি ভাগে নিয়ে  বাবা চাষ করতেন। করোনার সময় লকডাউনে আমার কাজ চলে যায়। তারপর আমিও বাবার সঙ্গে চাষের কাজে যুক্ত হয়ে পড়ি। এবছর পাঁচ বিঘা জমিতে পাট চাষ করা হয়েছিল। পাটের দাম না থাকায় উৎপাদিত পার্ট বিক্রি করে উৎপাদন খরচে ওঠেনি। বরং বিঘা প্রতি কয়েক হাজার টাকা করে লোকসান হয় পাট চাষে। তারপরে এই মরশুমে দুই বিঘা শসা চাষ করা হয়েছিল। লাগামছাড়া দাম দিয়ে সার কিনতে হয়। প্রতি বিঘাতে প্রায় ৩০ হাজার টাকা খরচ। কিন্তু গাছ না হওয়ায় ফলন হয়নি একেবারে। তাই শসা চাষেও লোকসান হয়। তার আগে পেঁয়াজ চাষ করেও লোকসানের বোঝা বইতে হয়েছে। ফলে বাবা বাজারে বেশ কিছু ঋণ হয়ে যায়। পাশাপাশি বাবার একটা ক্রনিক রোগ থাকায়, চিকিৎসা করাতে বেশ কিছু টাকা খরচ হতো প্রতি মাসে মাসে। ফলে ঋণ পরিশোধ করা ও সংসার চালানো উনার পক্ষে অসম্ভব হয়ে উঠেছিল। শেষ পর্যন্ত বাবা হতাশায় নিজেকে কয়েকদিন গুটিয়ে নিয়েছিলেন। রবিবার গভীর রাতে বাবা নিজের বাড়িতেই গলায় দড়ি দিয়ে ঝুলে পড়েন। তাঁকে উদ্ধার করে কালনা হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।


সারা ভারত কৃষক সভার পূর্ব বর্ধমান জেলা সভাপতি শুকুল শিকদার বলেন, রাজ্য ও কেন্দ্র দুই সরকারই বলছে কৃষকের আয় বৃদ্ধি পেয়েছে। যদি কৃষকদের আয় বেড়েই থাকে, তাহলে দিল্লিতে দীর্ঘদিন কৃষকরা আন্দোলন করেছিলেন কেন ?  এই আন্দোলন করতে গিয়ে শহীদ হয়েছেন দুই শতাধিক কৃষক। এখনো পাঞ্জাবে কৃষক আন্দোলন জারি আছে। আর এই সরকারের আমলে রাজ্যে ঋণগ্রস্ত কৃষকের মৃত্যু মিছিল শুরু হয়েছে অনেক আগেই। তা আজও অব্যাহত। দুই সরকারই এ ব্যাপারে নির্বিকার। 
তিনি বলেন, শুধু কালনার রাম ঘোষ নয়,  গোটা রাজ্যে অভাব ও চাষের কারণে কয়েক শত গরিব, কৃষক আত্মহত্যা করেছেন। গ্রামের অধিকাংশ সমবায় সমিতি লুট হয়ে গেছে, শাসক দলের নেতারা সমবায়ের টাকা আত্মসাৎ করার পর সেই সমবায় সমিতিগুলি হয় উঠে গেছে, নয়তো ধুঁকছে। সেখানে আর গরিব মানুষ ঋণ পায় না। এখন গ্রামের মহাজন আর মাইক্রোফিনান্সের কোপে পড়ে দেউলিয়া হতে বসেছে। শাসক দলের মদতে মাইক্রোফিনান্সের চড়া সুদের ফাঁসে কৃষকরা ঋণগ্রস্ত হয়ে আত্মহত্যা করতে বাধ্য হচ্ছেন। কৃষকের মৃত্যু মিছিল রোধ করতে আমরা বলেছি, সব ফসলের এমএসপি’র আইনি নিশ্চয়তা দিতে হবে। তিনি আরো বলেন, সমস্ত উন্নত দেশগুলি কৃষিক্ষেত্রে ভর্তুকি ও সস্তায় কৃষককে ঋণ দেয়। ফসলের দাম না পেলে কৃষরা কৃষিক্ষেত্রে উৎসাহ হারিয়ে ফেলবেন,  নিরাশ হবেন। উদারিকরনের নীতি পরিবর্তন না করলে শুধু কৃষক বা কৃষিক্ষেত্রই নয়, বিপদাপন্ন হবে সমস্ত মানুষের জীবনই। তাই উদার্নীতির বিরুদ্ধে সংগ্রাম ছাড়া কৃষি রক্ষার লড়াই সফল হবে না। তাই আত্মহত্যা সমাধানের পথ নয়। ঐক্যবদ্ধভাবে কৃষক আন্দোলন করেই কৃষকের ন্যায্য অধিকার আদায় করতে হবে।

Comments :0

Login to leave a comment