বহু মানুষ বামপন্থীদের সঙ্গে থাকতে চান, অথচ নানা কারণে পারছেন না, তাঁদের কাছে পৌঁছানোর পক্ষে সহায়ক ডিজিটাল মিডিয়া। তার প্রসারের কাজে জোর দিয়েছে সিপিআই(এম)। সেই প্রচারের অঙ্গ হিসেবেই ‘গ্রাম জাগছে’ শীর্ষক একটি ভিডিও প্রকাশ করল গণশক্তি। মঙ্গলবার মুজফ্ফর আহমদ ভবনে সাংবাদিক সম্মেলন করে এই ভিডিওটি আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রকাশ করেন সিপিআই(এম)’র রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম।
এই মুহূর্তে গ্রাম বাংলায় দুষ্কৃতী এবং দুর্নীতিরাজ রুখতে সঙ্ঘবদ্ধ হচ্ছেন মানুষ। বামপন্থীরা নভেম্বর মাসজুড়ে যাচ্ছেন ঘরে ঘরে। ‘সন্ত্রাসের’ মুক্তাঞ্চল গুলিতেও উঠছে রক্তপতাকা। সেই বার্তাকেই আরও জোরালো ভাবে ছড়িয়ে দেওয়ার কাজ করবে গণশক্তির এই ভিডিও।
ভিডিওটিতে প্রত্যন্ত গ্রাম গ্রামান্তরের মানুষের ক্ষোভ, দুঃখ, দুর্দশার কথা ফুটে উঠেছে তাঁদেরই জবানীতে। সেখানে এক ভুক্তভুগী বলছেন, আমার ছিটে বেড়ার ঘর। কিন্তু ঘর পাকা করার টাকা ওরা দিচ্ছে না। কাটমানি চাইছে। আমি গরীব মানুষ। অত টাকা কোথা থেকে পাবো? টাকা দিতে না পারার জন্য একটা ত্রিপলও জোটেনি। অথচ যাঁরা বড়লোক, দোতলা, তিনতলা বাড়ি রয়েছে, তাঁরা সবকিছু পাচ্ছে।
এক মহিলা ক্ষোভ উগড়ে দিয়ে বলেন, উচ্চশিক্ষা দূরের কথা, রাজ্যে শিক্ষাই নেই। তাঁর অভিযোগ, ‘‘রাজ্যের শিক্ষাব্যবস্থা দুর্নীতি ভরা। লকডাউনের সময়ে অনলাইন শিক্ষাব্যবস্থার নামে কেবল ঢালাও পাশ করানো হয়েছে পড়ুয়াদের। পড়াশোনার মান তলানিতে। রাজ্য সরকারী শিক্ষা ব্যবস্থার উপর থেকে ক্রমেই মানুষের ভরসা উঠে যাচ্ছে।
আবার কারোর গলায় একটি রেশন কার্ডও না পাওয়ার হাহাকার। রয়েছে ১০০ দিনের কাজে দুর্নীতিরও অভিযোগ।
অর্থাৎ ২০১১ পরবর্তী গ্রাম বাংলার যাবতীয় দুর্দশার বর্ণনা উঠে এসেছে গণশক্তির এই উপস্থাপনায়।
গঙ্গা ভাঙনে বিপর্যস্ত মালদা-মুর্শিদাবাদের বিস্তীর্ণ এলাকা। কিন্তু ভাঙন রোধে কেন্দ্র বা রাজ্যে কোনও সরকারের হুঁশ নেই। বাজার-হাট, স্কুল তলিয়ে যাচ্ছে নদীর গর্ভে। একইসঙ্গে পাল্লা দিয়ে ভাঙছে মানুষের ঐক্য, তাঁদের মনোবল। স্রোতের মুখে ভেসে যাচ্ছে তাঁদের বেঁচে থাকার যাবতীয় রসদ। ছেলেমেয়েরা ভাবছে পড়াশোনা করে কী হবে? ন্যায্য চাকরির দাবিতে পুলিশের গাড়ির সামনে মাথা দিচ্ছে শিক্ষিতরা। গণতান্ত্রিক আন্দোলন ভাঙতে কামড় বসাচ্ছে পুলিশ। একইসঙ্গে ওঁত পেতে বসে রয়েছে বিভেদের শক্তি। নতুন উদ্যমে শুরু হয়েছে বাংলা ভাগের চক্রান্ত।
কিন্তু ভাঙন কখনোই শেষ কথা বলে না। ভাঙনের শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই চলে নিরন্তর। ইতিহাস সাক্ষী, সেই লড়াইয়ের সামনের সারিতে থাকেন বামপন্থীরা। গ্রামের সঙ্গে শহরের, সমাজের নানান অংশের এবং স্তরের মানুষের মধ্যে সাঁকো গড়ার কাজ করে বামপন্থীরা। আজ মানুষের মধ্যে ঐক্য, সম্প্রীতির বন্ধন গভীর করে রাজ্য বাঁচানোর লড়াই করছে বামপন্থীরা। গ্রামে গ্রামে চলছে তার প্রচার। সিপিআই(এম)’র তরফে গ্রামীণ এলাকার পার্টি কর্মী, সমর্থক এবং দরদীদের কাছে আবেদন জানানো হয়েছে, নভেম্বর মাসে প্রতিটি বাড়িতে পতাকা তোলার। পিছিয়ে নেই শহরও। গ্রামীণ জনতার লড়াইকে সংহতি জানিয়ে তামাম পশ্চিমবঙ্গের শহরাঞ্চলেও শুরু হয়েছে লাল পতাকার তৎপরতা। পাড়ায় মহল্লায় হচ্ছে স্কোয়াড এবং মিছিল।
সেই সার্বিক লড়াইয়ের চিত্র ভিডিও’র আকারে এদিন সাংবাদিক সম্মেলনে পেশ করেন সেলিম।
এর পাশাপাশি ‘‘মানুষের লড়াইয়ে, মানুষের রসদ’’ স্লোগানকে সামনে রেখে প্রযুক্তির সাহায্যে তহবিল সংগ্রহের ডাক দিল সিপিআই(এম)। এবার থেকে কিউআর কোড স্ক্যান করেই আর্থিক অনুদান দেওয়া যাবে সিপিআই(এম)’র তহবিলে। সাহায্য পাঠানো যাবে রাজ্যের বাইরে থাকলেও। মঙ্গলবারের সাংবাদিক সম্মেলন থেকে এই ডিজিটাল গণসংগ্রহের উদ্বোধন করেন মহম্মদ সেলিম। উদ্বোধনের সঙ্গে সঙ্গে তহবিলে জমা পড়ে ১০১ টাকার অনুদান।
Comments :0