NSG Commandos in Sandeshkhali

সন্দেশখালিতে এনএসজির কম্যান্ডো বাহিনী, অস্ত্র খুঁজতে রোবট ব্যবহার

রাজ্য জেলা

সন্দেশখালিতে এনএসজি কম্যান্ডো বাহিনী।

প্রবীর দাস- সন্দেশখালি

অষ্টাদশ লোকসভা নির্বাচনের দ্বিতীয় দফার ভোট পর্বের মধ্যে সন্দেশখালিকাণ্ডে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্যে ফের সরগরম হলো সন্দেশখালি। শুক্রবার ফের সন্দেশখালিতে আচমকা হানা দিল সিবিআইয়ের একদল অধিকারীক ও সিআরপিএফের জওয়ানরা। ১৪দিনের জেল হেফাজতে থাকা তৃণমূল নেতা শেখ শাহজাহানের খাসতালুক সরবেড়িয়ার মল্লিকপুরে স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্যের আত্মীয় বাড়ির নীচ থেকে উদ্ধার হল ১২টি আগ্নেয়াস্ত্র বিপুল কার্তুজ ও বোমা এবং বোমা তৈরির সরঞ্জাম। উদ্ধার হওয়া আগ্নেয়াস্ত্রগুলির বেশিরভাগ বিদেশী আগ্নেয়াস্ত্র। এদিন সিবিআই সূত্রে এমনটাই জানা যায়।
ঘড়িতে সময় আনুমানিক দুপুর ১২টা। নির্দিষ্ট খবরের ভিত্তিতে সিআরপি এফের জওয়ানদের সাথে নিয়ে সরবেড়িয়ার মল্লিকপুরে শেখ শাহজাহানের বাংলো বাড়ির ৩০০ মিটারের মধ্যে মেছোঘেরি বেষ্টিত নির্জন দ্বীপে আসে সিবিআইয়ের আধিকারিকরা। ৫টি দলে বিভক্ত হয়ে শুরু করে তল্লাশি। শেখ শাহজাহানের অতি ঘনিষ্ঠ তৃণমূল নেতা হাফিজুল খানের আত্মীয় তৃণমূল কর্মী আবুতালেব মোল্লার বাড়িতে সিবিআইয়ের একটি দল যায়। বাড়িটি ছিল তালাবন্ধ এবং বিদ্যুতহীন অবস্থায়। সিবিআইয়ের আধিকারিকরা সাথে সাথে বিদ্যুৎ বিভাগে খবর পাঠায়। দ্রুততার সাথে বিদ্যুৎ সংযোগ করার পর তালা ভেঙে ঘরে ঢোকে সিবিআই আধিকারিকরা। শুরু হয় ঘরের মেজে খোড়ার কাজ। মেঝে খুঁড়তেই চক্ষু চড়কগাছ। উদ্ধার হয় দেশী বিদেশী আগ্নেয়াস্ত্র সহ বিপুল কার্তুজ, বোমার ভান্ডার। বাড়িটি সিআরপিএফের অফিসার ও জওয়ানরা ঘিরে ফেলে। এরপর শুরু হয় মেটাল ডিটেকটর দিয়ে মেছো ঘেরির আসে পাশে খোঁজ শুরু হয়। আনা হয় স্থানীয় নির্মাণ শ্রমিকদের। তাদের হাতে ছিল বেলচা কোদাল হাতুড়ি। আবু তালেবের বাড়ির আসে পাশে খোড়ার কাজ শুরু হয়। ইতিমধ্যে বিকাল ৪ টে ১১ মিনিট নাগাদ এনএসজির কম্যান্ডোদের বিশাল বাহিনী ঘটনাস্থলে আসে রণসাজে সজ্জিত হয়ে। তারা একে একে আবু তালেবের ঘরে প্রবেশ করতে থাকে। একটি বাক্স উদ্ধার হয়। কেন এনএসজিকে খবর দিয়ে আনতে হলো সিবিআইকে?  তবে কী বাক্সের ভিতরে এক্সক্লুসিভ অর্থাৎ মারাত্মক বিস্ফোরক কিছু রাখা আছে?  এনএসজি কম্যান্ড বাহিনী সাধারণের প্রবেশ নিষেধ করে দেয়। সিবিআই আধিকারীক ও জওয়ানদের এবং তাদের ব্যবহৃত গাড়ি সরিয়ে দিয়ে গোটা এলাকার দখল নেয়। রোবট আকারে প্রযুক্তি ব্যবহার শুরু হয়। বাড়ির ভিতরে এবং আসেপাশে বিস্ফোরক লুকানো আছে কিনা বা কিভাবে সেগুলিকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় তার তৎপরতা শুরু হয়। আবু তালেবের বাড়ির উঠানে মাটির বাড়ি আছে। সেখানে বিস্ফোরক থাকতে পারে আশঙ্কা করে মাটির বাড়িতে প্রবেশ করানো হয়। আধঘন্টা পর রোবটটি একটি ব্যাগ নিয়ে বেড়িয়ে আসে।  
১৫০ মিটার দূরে ব্যাগটি নিয়ে যায় রোবট। সেখানে বালির বস্তা নিয়ে যায় কম্যান্ডোরা। রোবটটি ফিরে এসে ফের এগিয়ে চলতে শুরু করে। শেষ মূহুর্তের প্রস্তুতি সেরে কম্যান্ডো বাহিনীর ছয়জন কম্যান্ডো ৩০০ মিটার দূরে সরে যায়। ধীরে ধীরে রোবটটি এক্সক্লুসিভ নিয়ে এগিয়ে যায়। সামনে ঝুলছে ব্যাগ। তাতে বিস্ফোরক থাকতে পারে। বালির বস্তা যেখানে রাখা হয়েছে সেখান থেকে ৬০ মিটার কাছে গিয়ে থেমে যায়। কিছুক্ষণ পর গতি বাড়িয়ে চলতে শুরু করে।এনএসজির গাড়িগুলি সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। কারণ বিস্ফোরণের তীব্রতা কত হতে পারে সেই কারণে। রোবট ব্যাগটি মাটির উপর রেখে দেয়। সমস্ত বিষয়টি ক্যামেরা বন্দি করে এনএসজির কম্যান্ডোরা। সাংবাদিক সহ সবাইকে নিরাপদ দূরত্বে সরে যেতে বলা হয়। আনা হয় দুটি স্নিপার ডগ। ১৫০মিটার দূরে ব্যাগটি নিয়ে যায় রোবট। সেখানে বালির বস্তা নিয়ে যায় কম্যান্ডোরা। রোবটটি ফিরে এসে ফের এগিয়ে চলতে শুরু করে। শেষ মূহুর্তের প্রস্তুতি সেরে কম্যান্ডো বাহিনীর ছয়জন কম্যান্ডো ৩০০ মিটার দূরে সরে যায়। ধীরে ধীরে রোবটটি এক্সক্লুসিভ নিয়ে এগিয়ে যায়। সামনে ঝুলছে ব্যাগ। তাতে বিস্ফোরক থাকতে পারে। বালির বস্তা যেখানে রাখা হয়েছে সেখান থেকে ৬০ মিটার কাছে গিয়ে থেমে যায়। কিছুক্ষণ পর গতি বাড়িয়ে চলতে শুরু করে। এনএসজি’র গাড়িগুলি সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। কারণ বিস্ফোরণের তীব্রতা কত হতে পারে সেই কারণে। রোবট ব্যাগটি মাটির উপর রেখে দেয়। বিস্ফোরক নিষ্ক্রিয় করার জন্য দূরে একটি বাড়িতে এনএসজি’র কম্যান্ডোরা আশ্রয় নেয়। আসেপাসের বাড়ির লোকজনদের নিরাপদ দূরত্বে সরিয়ে দিয়ে যায়। রিমোট চালিত রোবট ব্যাগটি  ৪০০-৪৫০ মিটার দূরে রেখে ফিরে যায়। কেবল ওয়ারিং দিয়ে বিস্ফোরক নিস্ক্রিয় করার চূড়ান্ত পর্ব শেষ হয়। একজন এনএসজি কমান্ডো প্রটেকশন জ্যাকেট পড়ে যেখানে ব্যাগটি রেখে এসেছিল রোবট। নিষ্ক্রিয় করার কাজ শুরু হয়। কী ধরণের বিস্ফোরক ছিল তা তখন অজানা। এক্সক্লুসিভ অর্ডিন্যান্স স্যুট পড়ে এনএসজির কম্যান্ডো ১০০ মিটার ফিরে এসে ফিরে এসে ফের পৌঁছে যান যেখানে বিস্ফোরক রেখে এসেছিল রোবট। কম্যান্ডোর হাতে একটি ইলেকট্রনিক ডিভাইসের নীল বাতি দেখতে পাওয়া যায়। সেটি নিভে যায়। ফিরে আসেন ফের। বোম ডিসপোজাল এক্সপার্ট এনএসজি কমান্ডো নিষ্ক্রিয় করার প্রস্তুতি নিতে থাকেন। আড়াই ঘণ্টা ধরে চলে এই কর্মযোগ্যটি। ফের নীলবাতি জ্বলে ওঠে সিগন্যাল দিতে থাকে দূরে থাকা অন্যান্য এনএসজি কমান্ডোদের। দিনের আলো ধীরে ধীরে নিভে আসতে থাকে। টানটান উত্তেজনাময় পরিবেশে সবাই অপেক্ষায়। তারা মনিটরে চোখ রেখে নিস্ক্রিয় করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার অপেক্ষায়। কিছুক্ষণ জটিলতা তৈরি হওয়ার পর ফের তৎপরতা শুরু হয়। জানা যায় রোবটটি ইজরায়েলের তৈরি। প্রায় ৩৫০ কার্তুজ উদ্ধার। তিনটি বিদেশী পিস্তল, দেশী পিস্তল, পুলিশ ব্যবহার করে এমন একটি পিস্তল সহ মোট বারটি পিস্তল বোমার ভান্ডার ও শেখ শাহজাহান সম্পর্কিত সন্দেহজনক তথ্য উদ্ধার হয়েছে। যা থেকে শেখ শাহজাহানের সরাসরি যোগাযোগ রয়েছে বলে জানিয়েছে সিবিআই।

Comments :0

Login to leave a comment