Editorial

ক্ষুধার রাজ্যে ভারত মোদীময়

জাতীয় সম্পাদকীয় বিভাগ

জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনের চোখ ধাঁধানো আয়োজন করে নিজের পিঠ নিজেই চাপড়িয়েছেন। শত শত কোটি টাকা খরচ করে বিদেশি রাষ্ট্রনায়কদের দেখিয়েছেন তাঁর জমানায় ভারতের প্রাচুর্যের সমাহার। পাশাপাশি রাজধানীর রাস্তার ধারে ঝুপড়ি, বস্তি আর অসচ্ছল জীবনের বাস্তব ছবি আড়াল করতে ঘিরে দেওয়া হয় রঙিন সজ্জার মোড়কে। তাতে উন্নয়নের ধ্বজাধারী নরেন্দ্র মোদীর বিশাল বিশাল ছবি। জি-২০ সম্মেলন দুনিয়াকে দেখিয়েছে মোদীময় ভারতকে। আর সচেতনভাবে আড়াল করে ঢেকে দেওয়া হয়েছে দারিদ্র ও ক্ষুধার নির্মম বাস্তবতাকে। উজ্জ্বলা যোজনা চালু করে নিজের ছবি সহ বিজ্ঞাপনে গোটা দেশ ভরি‍‌য়ে দিয়েছেন। দেশের প্রায় সব দরিদ্র পরিবারে বিনামূল্যে নাকি রান্নার গ্যাসের সংযোগ দিয়েছেন। এই প্রচার ছড়িয়েছে সারা বিশ্বে। কিন্তু দুনিয়া জানতে পারেনি বিনামূল্যের প্রথম সিলিন্ডার শেষ হবার পর অধিকাংশ পরিবারই দ্বিতীয় সিলিন্ডার কিনতে পারেননি হাজার টাকা জোগাড় করতে পারেননি বলে। কোনও পরিবার কোনোক্রমে একটি, বড়জোর দু’টি সিলিন্ডার কিনলেও বছরে একটি সিলিন্ডারও কিনতে পারেনি মেন পরিবারের সংখ্যা কম নয়। স্বচ্ছ ভারত অভিযান করে ঘরে ঘরে শৌচা,লগ বানানোর কথা ঘোষণা করেছেন। শৌচালয় ব্যবহারকারীদের পেট ভরাবার ব্যবস্থা করেননি। কৃষক ফসলের দাম পায় না। আদিবাসীদের বনাঞ্চল থেকে উচ্ছেদের আয়োজন করেছেন। সংগঠিত ক্ষেত্রে কর্মসংস্থান সৃষ্টির সুযোগ বন্ধ করে অসংগঠিত ক্ষেত্রে অনিশ্চিত কাজ ও আয় হ্রাসের ব্যবস্থা করেছেন। বিপরীতে উচ্চ হারে মূল্যবৃদ্ধিকে দীর্ঘস্থায়ী করেছেন। এমন এক দেশে মেন এক শাসনে দারিদ্র ও ক্ষুধা বাড়বে তাতে অবাক হবার কিছু নেই।


প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে দ্বিগুণ খরচ বাড়িয়ে পেশিশক্তির আস্ফালন দেখানো যায়, গাঁয়ে মানে না আপনি মোড়লের মতো নিজেকে বিশ্বগুরু বলে জাহির করা যায় তাতে দরিদ্র ভারতবাসীর পুষ্টি বাড়ে না। বুলেট ট্রেনের বিলাসিতায় বানের জলের মতো টাকা ঢালা যায়, নতুন সংসদ ভবন বানিয়ে মানুষের করের টাকায় বুকের ছাতি ফোলানো যায় কিন্তু তাতে শিশু মৃত্যুহার কমে না। কর্পোরেট মালিকদের কর হার কমিয়ে তাদের সম্পদ অঢেল বৃদ্ধি করা যায় কিন্তু উচ্চতার তুলনায় ভারতীয় শিশুদের ওজন বাড়ানো যায় না। ধর্মের নামে বিভাজন করে এবং উগ্র দেশপ্রেমের জিগির তুলে অন্ধ আবেগে ভাসানো যায় কিন্তু তাতে ভারতীয় মহিলাদের রক্তাল্পতার ব্যাপ্তি হ্রাস করা যায় না।


মোদী জমানায় বিশ্বে নাকি ভারতের মর্যাদা বেড়েছে, দুনিয়া নাকি ভারতকে সমীহ করে। তাতে মোদীর কৃতিত্ব জাহির হয় বটে তবে দেশের বেকারদের কাজ জোটে না, কারও জুটলে আয় বাড়ে না। ভারত এখন দীর্ঘস্থায়ী নিম্ন আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে। ক্রমবর্ধমান মূল্যবৃদ্ধির মধ্যে স্থির আয় বা হ্রাসমান আয় দারিদ্রের প্রকটতা বাড়ায়। সাধারণ মানুষের একটা অংশ ধারাবাহিকভাবে দারিদ্রের শিকার হচ্ছেন। বিশ্ব ক্ষুধা সূচকে ধরা পড়েছে সেই ভয়ঙ্কর সত্য। ১২৫টি দেশের মধ্যে মোদীর ভারত নামতে নামতে ১১১তম স্থানে নেমেছে। প্রতিবেশী শ্রীলঙ্কা, নেপাল, বাংলাদেশ এমনকি পাকিস্তানও মোদীর ভারত থেকে অনেক এগিয়ে। মোদী ক্ষমতায় আসার সময় থেকে প্রতি বছর ভারতের অবস্থান কমেছে। গত বারেও ছিল ১০৭তম। আত্মপ্রচার ছেড়ে মোদী এবার দেশের সাধারণ মানুষের দিকে নজর দিন।

Comments :0

Login to leave a comment