Israel Attack

গুঁড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে গাজা

আন্তর্জাতিক

 


ইজরায়েলের ভেতরে হামাসের আক্রমণের পরে গাজায় বিধ্বংসী হামলা চালাচ্ছে ইজরায়েল। ২৩ লক্ষ অধিবাসী অবরুদ্ধ, বিচ্ছিন্ন গাজায় চলছে নিরন্তর ক্ষেপণাস্ত্র ও বোমা বর্ষণ। গুঁড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে আবাসন, শরণার্থী শিবির, স্কুল, পরিকাঠামো। সোমবার ভারতীয় সময় সন্ধ্যা পর্যন্ত গাজায় নিহত হয়েছেন অন্তত ৫৬০জন, আহত তিন হাজার। এঁদের মধ্যে অসংখ্য নারী-শিশু রয়েছে। 
দু’দিন আগেই ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু বলেছিলেন, গাজাকে মরুভূমিতে পরিণত করে দেব। এদিন ইজরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট জায়নবাদের সত্ত্বাকে প্রকট করে দিয়ে বলেছেন, ‘আমরা মানুষ পশুদের বিরুদ্ধে লড়াই করছি’। প্যালেস্তাইনের জনগণকে ঠিক এই দৃষ্টিভঙ্গিতেই ৭৫ বছর ধরে দেখে এসেছে ইজরায়েলের শাসকরা। গ্যালান্ট বলেছেন, গাজা স্ট্রিপকে পূর্ণ মাত্রায় অবরুদ্ধ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কোনও খাদ্য নয়, কোনও বিদ্যুৎ নয়, কোনও জ্বালানি নয়, সব বন্ধ। 
বস্তুত ২০০৭ থেকে গাজা অবরুদ্ধই। গাজার চারপাশে ইজরায়েলী সেনা মোতায়েন রয়েছে। গাজায় একটি মাত্র বিদ্যুৎকেন্দ্র। বাকি বিদ্যুৎ ইজরায়েলের দখল করা মাটি থেকে আসে। গাজার জলভান্ডার ইজরায়েলের দখলে। রাষ্ট্রসঙ্ঘের হিসাবে, গাজার মানুষ দিনে বড়জোর ১৩ ঘণ্টা বিদ্যুৎ পান। ৯৬ শতাংশ পানীয় জল পানের উপযোগীই নয়। ৬৪ শতাংশ বাড়িতে খাদ্যের অভাব রয়েছে। গাজার একটি মাত্র বিমানবন্দর ২০০১ সালেই গুঁড়িয়ে দিয়েছে ইজরায়েল। প্রায় প্রত্যেক দিনের আক্রমণ ছাড়াও ২০০৮ থেকে চারবার গাজায় পূর্ণাঙ্গ সামরিক অভিযান চালিয়েছে ইজরায়েল। ২০০৮-০৯-এ ২৩ দিন, ২০১২-তে ৮ দিন, ২০১৪-তে ৫০ দিন, ২০২১-এ ১১ দিন সেই যুদ্ধ স্থায়ী হয়েছিল। এইবারের আক্রমণ পঞ্চম বার। 
পারমাণবিক অস্ত্র সহ ইজরায়েলের বাহিনী বিশ্বের পঞ্চম শক্তিশালী বলে পরিচিত। ৩৬৫ বর্গ কিলোমিটারের গাজা গুঁড়িয়ে দিতে ক্ষেপণাস্ত্র, যুদ্ধবিমান ছাড়াও গাজার সীমান্তে ১ লক্ষ সেনা মজুত করা হয়েছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, একপ্রস্থ বিমান আক্রমণের পরে সেই বাহিনী গাজার ভূখণ্ডে অভিযান চালাবে। তিন লক্ষ সেনাকে ইজরায়েল প্রস্তুত রেখেছে। এতেই শেষ নয়, ইজরায়েলকে সাহায্য করতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধজাহাজের বহর পাঠাচ্ছে। ভূমধ্যসাগরে ইজরায়েলের কাছে তা মোতায়েন থাকবে। বিশ্বের বৃহত্তম বিমানবাহী যুদ্ধজাহাজ ইউএসএস জেরাল্ড ফোর্ড এই নৌবহরের নেতৃত্বে থাকবে। 
ইতিমধ্যেই গাজায় এক হাজারের বেশি বাড়িঘরে ইজরায়েলের বোমা আঘাত করেছে। রাষ্ট্রসঙ্ঘের হিসাব, ১৫৯টি আবাসন পুরো গুঁড়িয়ে গেছে। ১২১০টি বাড়িঘর আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রাষ্ট্রসঙ্ঘের চালানো একটি স্কুলে ২২৫ জন আশ্রয় নিয়েছিলেন। সেই স্কুলেও বোমাবর্ষণ হয়েছে। দক্ষিণ গাজার রাফায় সোমবার ভোরে ইজরায়েলী বোমাবর্ষণে নারী-শিশু সহ ১৯ জন নিহত হয়েছেন। রাফায় আরেকটি বোমাবর্ষণে আবু কুতা পরিবারের ১৯জন একসঙ্গে নিহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে শিশুরাও রয়েছে। গাজায় এ পর্যন্ত ৮০ জন শিশুর মৃত্যুর নিশ্চিত খবর পাওয়া গেছে। সোমবার নির্মম আক্রমণ হয়েছে জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরে। অন্যতম বৃহৎ এই শরণার্থী শিবিরে থাকেন প্যালেস্তাইনের অন্য দখলীকৃত এলাকা ছেড়ে চলে আসতে বাধ্য হওয়া মানুষ। একটি বাজারে বোমা পড়ায় প্রচুর মানুষ নিহত হয়েছেন। এই শিবির কার্যত গুঁড়িয়ে দিয়েছে ইজরায়েল। শাতি শরণার্থী শিবিরেও বোমাবর্ষণ করেছে ইজরায়েল। শুধু গাজায় নয়, ওয়েস্ট ব্যাঙ্কেও ইজরায়েল আক্রমণ চালিয়েছে। সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা জানিয়েছে, ১৬ জন নিহত ও ৮০ জন আহত হয়েছেন। এই ওয়েস্ট ব্যাঙ্কেই শুধু এ বছরেই প্রায় ৩০০ প্যালেস্তিনীয়কে হত্যা করেছে ইজরায়েলী সেনাবাহিনী। সোমবার রাত পর্যন্ত গাজায় ১ লক্ষ ২০ হাজারের বেশি মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছেন। কিন্তু যাবেন কোথায়? একদিকে সমুদ্র, অন্যদিকে ইজরায়েল। 
এই প্রথম ইজরায়েলের স্থলভূমিতে প্যালেস্তিনীয় প্রত্যাঘাতে ৮০০-র বেশি ইজরায়েলী নিহত হয়েছেন বলে দেশের মেডিক্যাল পরিষেবা সূত্র উদ্ধৃত করে সংবাদসংস্থা জানিয়েছে। এই সংখ্যা ইজরায়েলের ক্ষেত্রে প্রায় অভাবনীয়। তথাকথিত ‘লৌহবর্ম’ ভেদ করে হামাস ও অন্য কয়েকটি সংগঠনের তরফে প্রায় ১ হাজার যোদ্ধা ইজরায়েলের ভেতরে ঢুকে আক্রমণ চালিয়েছে। মাটিতে লড়াই চলছে। হামাসের মুখপাত্র আবদেল লতিফ জানিয়েছেন, গাজার বাইরে যোদ্ধারা লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। সোমবার সকালেও ইজরায়েলী সেনাদের অনেককে তাঁরা বন্দি করেছেন। ইজরায়েলের হিসাব, হামাস ৪৫০০ ক্ষেপণাস্ত্র ছুঁড়েছে। সোমবার সকালেও তেল আভিভ ও জেরুজালেমে সতর্কতার সাইরেন শোনা গেছে।
 

Comments :0

Login to leave a comment