doctor dengue death kolkata

ডেঙ্গুতে মৃত্য এবার চিকিৎসক আধিকারিক

কলকাতা

ভয়ঙ্কর প্রাণঘাতী হয়ে উঠছে ডেঙ্গু। শুরু হয়েছে মৃত্যু মিছিল। এবার মৃত্যু হলো রাজ্যের এক চিকিৎসক আধিকারিকের। কলকাতার বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালের অ্যাসিস্ট্যান্ট সুপার শুক্রবার সকালে মারা গেলেন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে। ডেঙ্গুর আতঙ্ক ক্রমশ ছড়িয়ে পড়ছে এক হাসপাতাল থেকে আর এক হাসপাতালে। ডেঙ্গুর ত্রাস এলাকায় এলাকায়। বিভিন্ন বেসরকারি সূত্র বলছে, চলতি বছরে এপর্যন্ত প্রায় ৬০ হাজার মানুষ ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন। অন্যদিকে এবছর এপর্যন্ত অন্ততপক্ষে ৬০ জনের মৃত্যুর খবর মিলেছে বিভিন্ন বেসরকারি তথ্যে। যদিও রাজ্য সরকার এখনও ডেঙ্গুতে মৃত্যুর কোনও তথ্য প্রকাশ করেনি। এছাড়াও বিভিন্ন ছোট বড় বেসরকারি হাসপাতাল ও নার্সিংহোমে কত মানুষ চিকিৎসাধীন রয়েছেন তারও কোনও উল্লেখ করেনি সরকার। ফলে ডেঙ্গু পরিস্থিতি যে কতটা ভয়াবহ আকার নিয়েছে তার বাস্তব চেহারা অনেকটাই সাধারণ মানুষের চোখের আড়ালে রয়েছে বলে চিকিৎসক ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য।                
  কলকাতার বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালের অ্যাসিস্ট্যান্ট সুপার ডাঃ অনির্বাণ হাজরা ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন শুক্রবার সকালে। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, কিছুদিন আগে জ্বর ও অন্যান্য কিছু উপসর্গ দেখা দিয়েছিল তাঁর শরীরে। ১ নভেম্বর হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাঁকে। তাঁর ডেঙ্গু ধরা পড়েছিল। চিকিৎসা চলাকালীন তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। প্লেটেলেট নেমে দাঁড়ায় ১৬ হাজারের আশেপাশে। এরপর প্রায় ৬ ইউনিট রক্ত দিতে হয় তাঁকে। শুক্রবার ভোর থেকেই রক্তচাপ ওঠানামা করতে থাকে তাঁর। এরপর সিসিইউ-তে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি, এদিন সকালে মৃত্যু হয় তাঁর। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, অন্যান্য কিছু কোমর্বিডিটি ছিল ডাঃ অনির্বাণ হাজরার। যেমন, ফ্যাটি লিভার, কোলেস্টেরল, ওবেসিটি ইত্যাদি। কিন্তু ডেঙ্গু হয়েছিল তাঁর। ফলে শারীরিক সমস্যাগুলি বেড়ে গিয়েছিল। প্রসঙ্গত ডাঃ অনির্বাণ হাজরা ছিলেন এসএফআই মুখপত্র ছাত্র সংগ্রাম পত্রিকার প্রাক্তন সম্পাদক। 
রাজ্যের চিকিৎসক আধিকারিকের মৃত্যুতে এবার ডেঙ্গুর আতঙ্ক আরও বেশি ছড়িয়ে পড়ছে রাজ্য জুড়ে। কলকাতা, হাওড়া, উত্তর ২৪ পরগনা, মুর্শিদাবাদ, জলপাইগুড়ি, শিলিগুড়িতে অতি ভয়ঙ্করভাবে ছড়িয়েছে ডেঙ্গু। শুধু ছড়িয়েছে তা নয়, তা ক্রমশ বাড়ছে। এবছর এখনও পর্যন্ত উত্তর ২৪ পরগনা জেলায় প্রায় ১০ হাজার মানুষ আক্রান্ত, কলকাতায় এপর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা সাড়ে ৫ হাজার, হাওড়ায় আক্রান্ত হয়েছেন ৫২১২। বৃহস্পতিবার এই তথ্য দিয়েছে রাজ্য সরকার। রাজ্যের ব্লকে ব্লকে, প্রতিটি ওয়ার্ডে বাড়ছে সমানতালে। কয়েকটি জেলায় প্রতি ১০০ জনের রক্ত পরীক্ষায় অন্তত ২৫ জনের শরীরে ডেঙ্গু মিলছে। রাজ্যের সমস্ত সরকারি হাসপাতাল ও সরকারি চিকিৎসাকেন্দ্র মিলিয়ে গত ৭ দিনে প্রায় ৩ হাজার মানুষ চিকিৎসাধীন বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য ভবন। এর মধ্যে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ১৩৬ জন ভর্তি রয়েছেন। শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতালে ভর্তি ১২৫। অন্যদিকে কলকাতার এমআর বাঙ্গুর হাসপাতালে ১০৬ জনের চিকিৎসা চলছে।
কিন্তু এই পরিসংখ্যানে যে বিপুল সংখ্যক মানুষ বেসরকারি হাসপাতাল ও চিকিৎসাকেন্দ্রে ভর্তি রয়েছেন তার কোনও উল্লেখ নেই। রাজ্য সরকারের তরফে ডেঙ্গুর যে সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান রয়েছে, তাতে চলতি বছরের ৪২তম সপ্তাহে দেখা যাচ্ছে মুর্শিদাবাদের লালগোলা ব্লকে রাজ্যের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে ডেঙ্গু। ৪১তম সপ্তাহ থেকে ৪২তম সপ্তাহ অর্থাৎ ১ সপ্তাহে বেড়েছে ১৮০টি কেস। পরিসংখ্যান বলছে চলতি বছরে ৪২তম সপ্তাহের মাথায় লালগোলা ব্লকে ১২২২ জন আক্রান্ত। রাজ্যের ব্লকগুলিতে পজিটিভ কেস বৃদ্ধির সংখ্যা ধরলে এর পরে রয়েছে উত্তর ২৪ পরগনার রাজারহাট। সেখানে গত ১ সপ্তাহে কেস বেড়েছে ৬৬টি। মুর্শিদাবাদের জিয়াগঞ্জে বেড়েছে ৫১টি, দক্ষিণ দিনাজপুরের কুমারগঞ্জে এক সপ্তাহে বেড়েছে ৫০টি কেস। চলতি বছরের ৪২তম সপ্তাহের মাথায় জলপাইগুড়ির মালবাজারে ৪২তম সপ্তাহে ১১০৯টি কেস ধরা পড়েছে। বিশেষজ্ঞদের অভিমত, সাধারণত নভেম্বর মাস পড়লে ডেঙ্গু সংক্রমণ একটু করে কমে আসার কথা। কিন্তু এবার তা হচ্ছে না বরং উলটে হু হু করে ছড়িয়ে পড়ছে।
এদিকে ডেঙ্গুর বাড়বাড়ন্তে সেই সাধারণ মানুষের গাফিলতিকেই দায়ী করেছেন কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম। তিনি বলেছেন, ‘‘ডেঙ্গু মহামারীর আকার নেয়নি। গাফিলতি না থাকলে ডেঙ্গুতে খুব একটা মৃত্যু হয় না। তিনি বলেছেন, ডেঙ্গুতে প্লেটলেট কমে। প্রথমে খুব জল খাওয়াতে হয়। পরে ডাক্তার দেখিয়ে প্লেটলেট দিলে ফ্যাটাল কম হয়। গাফিলতি করে নিজে ডাক্তারি করলে মারা যায় মানুষ। তবে গত বছরের তুলনায় এবছর ডেঙ্গুর প্রভাব একটু বেশি। বিষুবরেখার আশেপাশের শহরতলিতে ডেঙ্গু বেশি হয়। ডেঙ্গু এখন বিশ্বময় ব্যাপার।’’ মেয়রের একথার তীব্র আপত্তি জানিয়েছেন সিপিআই(এম) সহ বিরোধী দলগুলি। বিরোধীদের বক্তব্য, ডেঙ্গু এছর বেশি হওয়ার কথা আগেই বলেছিলেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা সতর্ক করেছিলেন। কিন্তু কান দেয়নি রাজ্য সরকার, কর্ণপাত করেনি পৌরসভা ও মিউনিসিপ্যালিটিগুলি। ডেঙ্গু মশা প্রতিরোধে আগে থেকে কোনো ব্যবস্থাই নেয়নি প্রশাসন। মানুষের ক্ষোভের মুখে পড়ে বিভিন্ন এলাকায় তৃণমূল কাউন্সিলররাই রাজ্য স্বাস্থ্য প্রশাসনের উদাসীনতার বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এর আগে।

Comments :0

Login to leave a comment