RG Kar Student Death

চাদর বিতর্ক, পুলিশের বক্তব্যেই জোরালো হচ্ছে প্রমাণ লোপাটের তত্ত্ব

রাজ্য কলকাতা

RG KAR STUDENT DEATH BENGALI NEWS

নীল, সবুজের বিতর্ক ধামাচাপা দিতে সাংবাদিক সম্মেলনে এসেছিলেন কলকাতা পুলিশের ডিসি সেন্ট্রাল ইন্দিরা মুখোপাধ্যায়। কিন্তু নীল, সবুজের মাঝখানে উঠে এল লাল। সাংবাদিকদের যুতসই উত্তর দিতে না পেরে কার্যত মাঝপথে পালিয়ে গেলেন ইন্দিরা মুখোপাধ্যায়। 

আরজি কর হাসপাতাল এবং মেডিক্যাল কলেজের পড়ুয়া চিকিৎসকের দেহ উদ্ধারের পর থেকেই দফায় দফায় অভিযোগ উঠেছে, কলকাতা পুলিশ দায়িত্ব নিয়ে প্রমাণ লোপাট করেছে। দেহ উদ্ধারের পরের মুহূর্ত থেকে শুরু হয়েছে তথ্য প্রমাণ লোপাট ও তদন্ত ভুল পথে চালিত করার অভিযোগ। সেই অভিযোগের নবতম কুশিলব হল চাদর। 

চাদর তোমার রঙ কি? 

নিহত চিকিৎসকের পরিবারের দাবি, সেমিনার রুমের দরজার বাইরে তিন ঘন্টার বেশি সময়ের অপেক্ষার পরে তাঁদের ভিতরে ঢুকতে দেওয়া হয়। সেই সময় ঘরে কেবলমাত্র কলকাতা পুলিশের কমিশনার ছিলেন। তিনি তাঁদের মেয়ের দেহ দেখান। দেহ সবুজ রঙের চাদরে ঢাকা ছিল। 

এর উল্টোদিকে ঘটনাস্থলের একটি ভিডিও এবং ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল। সেখানে দেখা গিয়েছে, অবিন্যস্ত অবস্থায় একটি নীল চাদর চাপা অবস্থায় একটি ম্যাট্রেসের উপর একটি দেহ রয়েছে। বৃহস্পতিবার ইন্দিরা মুখোপাধ্যায়ের বক্তব্য থেকে স্পষ্ট, ভাইরাল ভিডিও নিহত চিকিৎসকেরই। এবং তার দাবি অনুযায়ী, সেটি সবুজ নয়, নীল রঙের চাদরে ঢাকা ছিল। 

নিহতের পরিবারের দাবির সঙ্গে হাসপাতালের অন্যান্য চিকিৎসক পড়ুয়া, যাদের একাংশের দিকেই অভিযোগের আঙুল উঠছে, রয়েছে বিস্তর ফারাক। এই অংশের বক্তব্য, কোনও সবুজ চাদর ছিল না, নীল চাদরেই দেহ ঢাকা ছিল। এবং তাদের সঙ্গেই মিলে যাচ্ছে পুলিশের বক্তব্য।

এদিন ইন্দিরা মুখোপাধ্যায়ের দাবি, ইনকোয়েস্ট বা সুরৎহাল, ফরেনসিক বিশেষজ্ঞদের তদন্ত, এবং সিজার ফটোগ্রাফি-ভিডিওগ্রাফি- তিনটি ক্ষেত্রেই চাদরের রং নীল ছিল। ইনকোয়েস্টের সময় চিকিৎসকরা উপস্থিত ছিলেন, সাক্ষী হিসেবে, তার রেকর্ডিং রয়েছে। সেখানেও একই রঙের চাদর রয়েছ। সিবিআই’কে দেওয়া কলকাতা পুলিশের কেস ডায়রিতে ঘটনাস্থলের ফটোগ্রাফি, ভিডিওগ্রাফি রয়েছে । সেখানেও একই জিনিস রয়েছে। 

ইন্দিরা মুখোপাধ্যায় যখন জোরের সঙ্গে নীল, সবুজের বিতর্ক মেটানোর চেষ্টা করছেন, তখন তার দিকে ধেয়ে আসে লাল চাদরের প্রসঙ্গ। এক সাংবাদিক নিজের প্রশ্নে সেদিন রাত্রের ঘটনা তুলে ধরেন। 

দেহ উদ্ধারের ঠিক পরেই, মানে ৯ আগস্ট রাতের বেলা পুলিশ বলেছিল নিহত চিকিৎসকের দেহের উপর একটি লাল রঙের চাদর পাওয়া গিয়েছে। প্রমাণ হিসেবে সেটিকে সংগ্রহ করা হয়েছে। তারপর দেহ যাতে নগ্ন অবস্থায় না থাকে, তাই শালীনতা রক্ষার জন্য একটি নীল চাদর দেহের উপর চাপা দেওয়া হয়েছে। 

সাংবাদিকরা পুলিশের এই বক্তব্য তুলে ধরতে খেই হারান ইন্দিরা মুখোপাধ্যায়। তিনি দায় ঠেলে দেন নিজের উর্ধতন পুলিশ আধিকারিকদের ঘাড়ে। দায় ঠেলে বলেন, এই সাংবাদিক সম্মেলন চাদরের রঙ বিতর্ক নিয়ে ডাকা হয়েছিল। এখানে সিজার বা পুলিশ কি কি জিনিস ঘটনাস্থল থেকে বাজেয়াপ্ত করেছে, সেটা নিয়ে আমার কথা বলার এক্তিয়ার নেই। আমার সিনিয়র অফিসার এই বিষয়ে ইতিমধ্যেই যা বলার বলে দিয়েছেন। 

প্রসঙ্গত, শুধুমাত্র চাদর নয়, নিহতের দেহের ভঙ্গি এবং অবস্থান নিয়েও পরস্পর বিরোধী বক্তব্য রয়েছে নিহতের পরিবার এবং পুলিশ ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের। 

এই প্রসঙ্গে প্রাক্তন পুলিশ কর্মীরা বলছেন,  লাল চাদর কি সিজ করা হয়েছে? তাই দেহ ঢেকে দেওয়া হয় নীল চাদরে? তাহলে পুলিশ কেন নীল চাদরে জোর দিচ্ছে? কেন বলছে না লাল চাদর ছিল প্রথমে। এটা তো গুরুতর বিষয়। প্রমাণ লোপাটের অভিযোগকে আরও জল হাওয়া দিচ্ছে খোদ কলকাতা পুলিশ। 

এই অংশের বক্তব্য, ক্রাইম সিনের সামান্য থেকে সামান্য জিনিস এদিক থেকে ওদিক হয়ে গেলে তদন্তের মারাত্মক ক্ষতি হয়ে যায়। অপরাধীরা নিস্তার পাওয়ার রাস্তা পেয়ে যায়। সেখানে এই পরিমাণ অভিযোগ, পালটা অভিযোগ নজিরবিহীন। 

যদিও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পিডাব্লিউডি’র ওয়ার্ক অর্ডার ছাড়াই ক্রাইম সিন, অর্থাৎ সেমিনার রুমের পাশের বাথরুম ভেঙেছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, খুনের পর খুনী কিংবা খুনীরা সেখানে এসে শরীরে লেগে থাকা রক্ত ধুয়ে ফেলতে পারে। 

সিবিআই’র তরফেও শীর্ষ আদালতে জানানো হয়েছে, বিপুল পরিমাণ তথ্য প্রমাণ লোপাটের ফলে আমাদের তদন্ত করতে অসুবিধা হচ্ছে। 

Comments :0

Login to leave a comment