Flood Situation

ভারী বৃষ্টিতে জেলায় জেলায় বন্যা পরিস্থিতি দায়সারা প্রশাসন, নাজেহাল খেটে খাওয়া মানুষ

রাজ্য

মঙ্গলবার ঘাটালের বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। জলবন্দি রয়েছে হাজারের বেশি মৌজা। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে সেগুলি একেকটি দ্বীপ হয়ে উঠেছে। এরই মধ্যে চন্দ্রকোনা থানার ভগবন্তপুর পঞ্চায়েত এলাকার যদুপুর মৌজায় নতুন করে শিলাবতী নদীর পাড় ভেঙেছে। এর ফলে পাশাপাশি তিনটি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার ৩৯টি মৌজা জলের তলায়। অতিরিক্ত বৃষ্টি ও ডিভিসি’র ছাড়া জলে খানাকুল ২ নং ব্লকের জগৎপুর, মাড়োখানা, ধান্যঘোরী ও রাজহাটি ১ পঞ্চায়েতের বিভিন্ন রাস্তাঘাট জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। বিভিন্ন পিচ রাস্তা দু’-আড়াই ফুটের বেশি জলের তলায়। সংলগ্ন কৃষি জমির মাঠ ডুবে গেছে। পাণ্ডুয়ার বিভিন্ন এলাকাও ডুবে গেছে। 
এদিকে, গত ২৮দিন ধরে লাগাতার দফায় দফায় তুমুল বৃষ্টিতে নাজেহাল পূর্ব বর্ধমান জেলার আউশগ্রাম, মঙ্গলকোট থানার কৃষিজীবী ও সাধারণ মানুষ। ধানের বীজতলা পর্যন্ত ডুবে যাওয়ায় চাষের কাজ থমকে গেছে। বীরভুম জেলার নলহাটি ১নং ব্লকের বড়লা গ্রাম পঞ্চায়েতের রামপুর ও রাণিনগরের মাঝে অবস্থিত ফুলোড়ায় ব্রাহ্মণী নদীর উপর মাটির বাঁধ জলের তোড়ে ধসে গিয়েছে। তার ফলে এই গোটা এলাকায় জল ঢুকে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। মকরমপুর, রানিনগর, রামপুর, রদিপুর, কেলাই, বালসা প্রভৃতি গ্রামে জল ঢুকতে শুরু করেছে।
একটানা বৃষ্টিতে উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বনগাঁ ব্লকের ধান, সবজি জলের নিচে, পৌরাঞ্চলের ৮টি ওয়ার্ডের মানুষ জলবন্দি হয়ে পড়েছেন। বনগাঁ ব্লকের ছয়ঘরিয়া, ঘাটবাওড়, ধরমপাকুড়িয়া, কালোপুর, গোপালনগর ১ ও ২, আকাইপুর ও পাল্লা গ্রামাঞ্চলের ফসল জলের নিচে। পৌরাঞ্চলের ২,৬,৭,৮, ১৪, ২০, ২১,২২ অঞ্চলের মানুষ জলবন্দি।
পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটাল, চন্দ্রকোনায় অবস্থার সবচেয়ে অবনতি হয়েছে। ঘাটাল মহকুমার শিলাবতী, কেঠিয়া, ঝুমি এমন নদীগুলিতে জলের স্তর এখনও বাড়ছে। শিলাবতী ও তার শাখা কেঠিয়ায় বিপজ্জনকভাবে জলের স্রোত বইছে। যার ফলে কাঠের পুল ডুবে গেছে। সেই অবস্থায় মানুষ ঘরে ফেরার জন্য বিপজ্জনকভাবে পারাপার করছেন। ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানের নামে ৫টি অর্ধনির্মিত স্লুইসগেটকে ঘিরে বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। নিচের দিক থেকে রূপনারায়ণ নদীর জলের চাপ বাড়ায় দাসপুরের চাঁইপাট এলাকার স্লুইস গেটকে ঘিরে তৈরি বাঁধ রক্ষা করতে এলাকার মানুষ ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। এই বাঁধ ভাঙলে ঘাটাল ও দাসপুর দুই থানার বর্ডার এলাকার ৯০০-র বেশি মৌজা জলের তলায় চলে যাবে। তা যদি হয় তবে আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত সেই জল জমে থাকবে।
এক সপ্তাহ হলো ঘাটাল মহকুমার বিস্তীর্ণ এলাকা জলের তলায়। প্রান্তিক মানুষের এমনিতেই সঙ্কট। এই সময় আশ্রয় স্থলগুলিতে খাদ্য উপাদান ও জ্বালানি জরুরি। তা না করে পঞ্চায়েত সমিতির ব্যবস্থাপনায় ঘাটালের ১২টি স্থানে রান্না করা খাবার দিনে একবার বিতরণ করা হচ্ছে। কিন্তু সাংঘাতিক বিপর্যস্ত হয়েছে এরকম ৮০০টির বেশি মৌজায় কোনও খাবার বা খাদ্য রসদ এখনও পর্যন্ত পৌঁছায়নি। পানীয় জলের সঙ্কট তীব্র। ঘাটাল বাসস্ট্যান্ড সহ এমন বেশ কিছু উঁচু জায়গায় পানীয় জলের একাধিক ট্যাঙ্ক রেখে দায়িত্ব সেরেছে প্রশাসন। বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ৪-৭ কিমি জলপথে ডিঙিতে এসে পানীয় জল নিয়ে যাচ্ছেন মানুষ।  নৌকায় করে কেন বিপর্যস্ত এলাকাগুলিতে পানীয় জল ও খাবার পৌঁছানো হচ্ছে না তার উত্তর নেই। সাত দিন ধরেই এলাকা বন্যা প্লাবিত। ফলে আশ্রয় স্থলগুলিতে খাবার ও পানীয় জলের তীব্র সঙ্কট। বহু মৌজায় মানুষ দোতলা ঘরের ছাঁদে ত্রিপল টাঙ্গিয়ে থাকছেন। যাতায়াতে ডিঙিই একমাত্র ভরসা।
এদিকে একটানা বর্ষণে বনগাঁ ব্লকের পৌরাঞ্চলের মানুষ যেমন জলবন্দি, তেমনি কৃষি অঞ্চলের ফসল জলের নিচে ডুবে আছে। কৃষকের ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। খেতমজুরদের কাজ নেই। ফসল বিমার যোজনায় সব ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের শস্য বিমার আওতায় নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গিতে নিয়ে আসার দাবিতে মঙ্গলবার বনগাঁ ব্লক কৃষকসভার পক্ষ থেকে বিডিও ও ব্লক কৃষি আধিকারিকের কাছে ডেপুটেশন দেওয়া হয়েছে। কৃষকের বোনা আমন ধান, অনেকাংশে পাট, সবজির মধ্যে পটল, কাকরোল, ওল, বেগুন, কলা, পেপে, কচুরমুখি, লাল শাক, পুঁইশাক, ভেন্ডি সব জলের তলায়। 
অন্যদিকে খানাকুলে যোগাযোগের প্রধান সড়কগুলি জলমগ্ন থাকায় স্থানীয় বাসিন্দা ও স্কুল ছাত্রীরা চলাচলে দুর্ভোগে পড়েছেন। কয়েক দিনের অতিরিক্ত বৃষ্টি ও ডিভিসি’র ছাড়া জলে মুণ্ডেশ্বরী ও দ্বারকেশ্বর নদীর জল বাড়ছে।  সেই সঙ্গে রূপনারায়ণ নদীর জোয়ারে জলের চাপে সমস্যা আরও বেড়েছে। গতবারের বন্যার সময় যে সকল নদী বাঁধ  হানা পড়েছিল সেগুলি যথাযথ সংস্কার হয়নি। বিশেষ করে বলাই চক ও বন্দর এলাকার হানা দিয়ে জল ঢুকে বন্যা পরিস্থিতি ঘোরালো হতে পারে বলে মানুষের আশঙ্কা। বন্যা কবলিত এই  এলাকার মানুষজন আশঙ্কা করছেন, আরও ভারী বৃষ্টি ও ডিভিসি'র ছাড়া জলের পরিমাণ বাড়লে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে। 
এদিকে, বেহাল নিকাশি ব্যবস্থা। ডিভিসি ক্যানেলের জল ঢুকছে এলাকায়। দুর্ভোগে বাসিন্দারা। নিম্নচাপের জেরে গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে জলমগ্ন পাণ্ডুয়ার সিমলাগড় ভিটাসিন পঞ্চায়েতের গোয়ারা পশ্চিম পাড়া এলাকার। প্রতিবাদে মঙ্গলবার পাণ্ডুয়ার বৈঁচিগ্রাম জিটি রোড অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখায় স্থানীয় বাসিন্দারা। প্রায় আধঘণ্টা ধরে চলে অবরোধ। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসে পাণ্ডুয়া থানার পুলিশ। এলাকার বাসিন্দাদের বুঝিয়ে অবরোধ তুলে দেয় পুলিশ। এরপরেই সিমলাগর ভিটাসিন পঞ্চায়েতে ওই এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা পঞ্চায়েতের প্রতিনিধি ও বিডিও’র প্রতিনিধিদের নিয়ে আলোচনা করা হয়। 

Comments :0

Login to leave a comment