WEST BENGAL PANCHAYAT ELECTION

বাধা হটিয়ে মনোনয়নের প্রস্তুতি তুঙ্গে বামফ্রন্টের

রাজ্য

CPIM BJP RSS TMC WEST BENGAL POLITICS BENGALI NEWS হাওড়ায় তৃণমূল ছেড়ে সিপিআই(এম)-এ যোগদান। নিজস্ব চিত্র।

একের পর এক জেলায় প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করছে বামফ্রন্ট। বিরোধীদের প্রস্তুতিতে না দেওয়ার মতো সূচি করেছে নির্বাচন কমিশন। বামফ্রন্ট সেই অভিযোগ তুলছে। পাশাপাশি নিজেদের প্রার্থীও ঘোষণা করছে। ইতিমধ্যেই মুর্শিদাবাদ, হুগলী, পূর্ব মেদিনীপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর, পূর্ব বর্ধমান, পশ্চিম বর্ধমান, উত্তর ২৪ পরগনার মতো সিংহভাগ জেলা। রবিবার ঘোষণা করা হয় পুরুলিয়া এবং বাঁকুড়ার প্রার্থী তালিকা।  

রবিবার বন্ধ ছিল মনোনয়ন প্রক্রিয়া। চলবে বৃহস্পতিবার, ১৫ জুন পর্যন্ত। তবে কলকাতা হাইকোর্টে এই সংক্রান্ত মামলায় প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ প্রাথমিক পর্যবেক্ষণে জানিয়েছে মনোনয়নের পর্যাপ্ত সময় দেওয়া হয়নি। রাজ্য নির্বাচন কমিশনকে বক্তব্য জানাতে বলেছে হাইকোর্ট।

তবে বামপন্থীরা অপেক্ষায় থাকছেন না। রবিবার প্রকাশিত হয়েছে বাঁকুড়া এবং পুরুলিয়ায় জেলা পরিষদের প্রার্থী তালিকা। ৯ জুন মনোনয়নের প্রথম দিন থেকেই বিভিন্ন স্তরের প্রার্থীরা চলে যান বিডিও দপ্তরে। কিন্তু বিডিও দপ্তর প্রস্তুত ছিল না। বেশিরভাগ জায়গায় ফর্ম পৌঁছায়নি। দেরি করে শুরু হয়েছে মনোনয়ন প্রক্রিয়া। কিন্তু বামফ্রন্টের প্রার্থীরা পিছিয়ে যাচ্ছেন না। 

আবার মুর্শিদাবাদের রানিনগর, ডোমকল বা পশ্চিম বর্ধমানের বারাবনিতে তৃণমূলের বাধাকে পালটা চ্যালেঞ্জ জানিয়ে মনোনয়ন দাখিল করেছেন বামফ্রন্টের প্রার্থীরা। মুর্শিদাবাদে কংগ্রেসকে নিয়ে সরাসরি প্রতিরোধ গড়েছেন তৃণমূলের সশস্ত্র দুষ্কৃতীবাহিনীর বিরুদ্ধে। 

এদিন বিকেলে বাঁকুড়া জেলা সিপিআই(এম) দপ্তরে সাংবাদিক সম্মেলন করে প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করেন জেলা বামফ্রন্টের আহ্বায়ক অজিত পতি। তিনি জানিয়েছেন, জেলার ৫৬টি জেলা পরিষদ আসনের মধ্যে ৪৯টি আসনের বামফ্রন্ট প্রার্থীদের নাম এদিন ঘোষণা করা হয়েছে। বাকি ৭টি আসনের প্রার্থীদের নাম খুব তাড়াতাড়ি প্রকাশিত হবে। 

এদিন বিকেল ৪টের কিছু পরে  পুরুলিয়া জেলা বামফ্রন্টের তরফে প্রার্থী তালিকা প্রকাশিত হয়। পুরুলিয়া জেলায় মোট ৪৫টি জেলা পরিষদ আসন রয়েছে। এদিন ৪৫টি আসনেরই প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন পুরুলিয়া জেলা বামফ্রন্টের আহ্বায়ক প্রদীপ রায়। 

প্রার্থী তালিকা প্রকাশের পাশাপাশি রাজ্য জুড়েই সংগঠন মজবুত করার কাজও সমানতালে চালিয়ে যাচ্ছেন সিপিআই(এম) সংগঠকরা। শনিবার রাতে উত্তর দিনাজপুর জেলার কালিয়াগঞ্জ ব্লকের অনন্তপুর গ্রাম পঞ্চায়েতে তৃণমূল ছেড়ে সিপিআই(এম)’কে সমর্থন করার কথা ঘোষণা করেছে শতাধিক পরিবার। রবিবার টুইট করে এই তথ্য জানিয়েছেন সিপিআই(এম)’র রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। 

এর পাশাপাশি রবিবার হাওড়ার শ্যামপুর-১ ব্লকের বানেশ্বরপুর-১ গ্রাম পঞ্চায়েতের শুখাকুটি গ্রামে প্রায় দুই শতাধিক তৃণমূল কর্মী ও সমর্থক তৃণমূল ছেড়ে সিপিআই(এম)’কে সমর্থন করার কথা ঘোষণা করেন। 

শনিবার ডোমকল মহকুমা হাসপাতাল থেকে পুলিশ আগ্নেয়াস্ত্র এবং ৪ রাউন্ড গুলি সহ গ্রেপ্তার করে তৃণমূলের সারাংপুর অঞ্চলের সভাপতি বসির মোল্লাকে। শনিবার ডোমকল ব্লক অফিসের সামনে দুষ্কৃতি জড়ো করে বাম এবং কংগ্রেস প্রার্থীদের মনোনয়ন পত্র তুলতে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে তৃণমূল। পাল্টা প্রতিরোধ গড়ে তোলেন বাম এবং কংগ্রেস কর্মী সমর্থকরা। জোট কর্মীদের তাড়া খেয়ে ডোমকল মহকুমা হাসপাতালে আশ্রয় নেয় তৃণমূল নেতা বসির মোল্লা । তাঁকে সেখান থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

 

যদিও বিরোধীদের অভিযোগ, আগ্নেয়াস্ত্র সহ গ্রেপ্তার করা হলেও, বসির মোল্লার বিরুদ্ধে লঘু ধারা দিয়েছে পুলিশ। এদিন ধৃতকে বহরমপুর জেলা আদালতে তোলা হলে তাঁর বিরুদ্ধে কোনও সরকারি আইনজীবী হাজির ছিলেন না। এই ঘটনায় উষ্মা প্রকাশ করেন বিচারকও। 

রবিবার বহরমপুরের সাংবাদিক সম্মেলন থেকে এই ঘটনায় ক্ষোভ উগড়ে দেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর রঞ্জন চৌধুরী। তিনি বলেছেন, আগ্নেয়াস্ত্র সহ ধরা পড়েছে যে, তার সঙ্গে থানার আধিকারিকরা একসঙ্গে বসে নৈশাহার করেছে। অপরদিকে ডোমকলে প্রতিরোধ করার জন্য ৫২ জনের নামে জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা করেছে সেই একই পুলিশ। এর মধ্যে ১২জন কংগ্রেসের প্রার্থী। আর যে অস্ত্র নিয়ে ধরা পড়ল, তাঁর বিরুদ্ধে খুনের চেষ্টার কোনও অভিযোগই দায়ের হল না। 

অধীর চৌধুরী আরও অভিযোগ করেন, ডোমকলে তৃণমূলের সঙ্গে পুলিশের কথা হয়েছে। সোমবার থেকে ফের একবার সন্ত্রাসের প্রস্তুতি নিচ্ছে তৃণমূল। জোট বেঁধে বাম এবং কংগ্রেস কর্মীরা মনোনয়ন তোলার সাহস দেখিয়েছেন। প্রশাসনের সাহায্যে  সেই সাহসকে ভাঙতে চাইছে শাসক দল। তবে মানুষ এই সন্ত্রাস বরদাস্ত করবেন না।

প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির কটাক্ষ, মুখ্যমন্ত্রী এখনও বলতে পারলেন না, রাজ্যে অবাধ এবং শান্তিপূর্ণ পঞ্চায়েত নির্বাচন হবে। মমতা ব্যানার্জি বহুক্ষেত্রে বলেন উন্নয়নের বন্যা বয়ে গিয়েছে। এত উন্নয়ন হলে বিরোধীদের মনোনয়ন তোলা এবং জমা দেওয়া আটকাতে হচ্ছে কেন তৃণমূলকে? মানুষ বাঁচার জন্য একজোট হচ্ছেন। এটা ছাড়া দ্বিতীয় কোনও বিকল্প নেই। 

 

Comments :0

Login to leave a comment