MAMATA BANERJEE

পুলিশ ঘাড়ে যাবতীয় দোষ চাপালেন মুখ্যমন্ত্রী

রাজ্য

bomb blast west bengal egra illegal cracker factory bengali news খাদিকুল কান্ডে নিহতদের পরিজনরা

রামশংকর চক্রবর্তী: 

এখন পুলিশের ঘাড়ে যাবতীয় দোষ চাপাচ্ছেন মমতা ব্যানার্জি। বামপন্থীরা বারবার অভিযোগ করেছেন, পুলিশকে দলদাস বানিয়েছে তৃণমূল। সাম্প্রতিক একাধিক ঘটনায় সমস্ত দোষ পুলিশের ঘাড়ে চাপিয়েছেন মমতা ব্যানার্জি। ঘটনাচক্রে তিনিই এরাজ্যের পুলিশমন্ত্রী। 

"আমি জানি ঝাড়খন্ড রাজ্য থেকে অনেক অস্ত্র আসে। এটা ওডিশার বর্ডার।  এখান থেকে পটকা বানিয়ে ওডিশায় যায়। আমার নলেজে সবকিছুই আছে।" 

মন্তব্য রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তথা পুলিশমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির। যেমন ভাবে তিনি খেজুরির ঠাকুরনগরে একটি সভায় বলেছিলেন হাওড়ায় দাঙ্গা হতে পারে এমন ‘স্মেল’ তিনি পেয়েছিলেন। মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্যেই প্রমাণ তিনি স্মেল পেলেও যেমন দাঙ্গা ঠেকাতে পারেননি তেমনি ভাবে তাঁর ‘নলেজে’ সবকিছু থাকা সত্ত্বেও এগরার খাদিকুলের বেআইনি এই বোমা কারখানার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেনি তাঁর প্রশাসন। 

পুলিশ প্রশাসন যে পুরোপুরি ব্যর্থ তা এক প্রকার স্বীকার করেই তিনি বলেন "এই ঘটনার জন্য আমি ক্ষমাপ্রার্থী। এটা আমার হাতেও ছিল না। আপনাদের হাতেও ছিল না। এখানকার ওসি কে গ্রামবাসীরা বারবার বলা সত্ত্বেও তিনি কোন ব্যবস্থা নেননি। আমি শুনেছি। আরো যারা আছে উপর মহলে, ইন্টেলিজেন্স সঠিকভাবে যদি কাজ করতো তাহলে এ জিনিস হতো না।"

শনিবার এগরার খাদিকুলে বোমা বিস্ফোরণে নিহত পরিবারদের আর্থিক ক্ষতিপূরণ ও হোমগার্ডের চাকরির চিঠি বিলি করেন মুখ্যমন্ত্রী। ঘটনার ১১ দিন পরে বিস্ফোরণ স্থল থেকে এক কিলোমিটার দূরে উপস্থিত হয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন "এতদিন আমি আসতে পারিনি খারাপ আবহাওয়ার জন্য। আজকেও যখন এখানে আসছিলাম তখন বৃষ্টি হচ্ছিল। আমার উদ্দেশ্য মানবিক। অনেকে রাজনীতির জল ঘোলা করছে এই ঘটনা নিয়ে। আমি এখানে রাজনীতি করতে আসিনি।"

আর্থিক ক্ষতিপূরণের ২ লক্ষ ৫০হাজার টাকার চেক নিহতদের পরিবারের সদস্যদের হাতে দিয়ে তিনি বলেন "আপাতত সংসারটা তো চালান। চাকরিও দিচ্ছি। আপনাদের পাশে আমি আছি।"

এরপরই পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারের দিকে তাকিয়ে মুখ্যমন্ত্রী কে বলতে শোনা যায় "বাংলার বর্ডার গুলো আপনারা লক্ষ্য করুন। বর্ডার গুলো সিল করুন। যারা আজকে হোম গার্ডের চাকরি পেল তাদের এই বর্ডারেই নিযুক্ত করুন। তাহলে এরা এলাকাগুলো জানতে পারবে। এদেরই দায়িত্ব দিন এলাকাগুলোতে। কোন কিছু ঘটনা ঘটলে সরাসরি পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারবে এরা।"

নিহতদের পরিবার এবং এলাকাবাসীর উদ্দেশ্যে মুখ্যমন্ত্রী বলেন "কোনও কিছু বেআইনি এইরকম কিছু দেখলে সাথে সাথে থানার ওসি কে খবর দেবেন। যদি কিছু ব্যবস্থা না হয় আমাকে জানাবেন। আমি দুদিনের মধ্যে ওসি কে চেঞ্জ করে দেব।" 

প্রশাসনিক ব্যর্থতা নিয়ে দায় স্বীকার করলেও এগরার খাদিকুলের বিস্ফোরণে এলাকাবাসীর কথায় অন্যতম অভিযুক্ত এগরা থানার আইসি এবং তৃণমূল পরিচালিত গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান সহ তৃণমূল নেতাদের বিষয়ে কোনও  কথা বলতে শোনা যায়নি মুখ্যমন্ত্রীকে।

বাজি কারখানায় কাজ আসলে চাকরি। এমনই আজব কথা শোনালেন মমতা ব্যানার্জি। তিনি বলেন "যাদের পরিবারের লোক এখানে চাকরি করতেন এবং মারা গেছেন তাদের প্রতি সমবেদনা জানাই। বেআইনি বাজি কারখানার পরিবর্তে সরকারি ভাবে উদ্যোগ নিয়ে বাজি কারখানা করা হবে। জনবহুল এলাকার বাইরে সেই কারখানাগুলো হবে। যারা আইনি ভাবে সরকারি নিয়ম-কানুন মেনে তেমন কারখানা করতে চান তারা যোগাযোগ করবেন। বেআইনি কারখানায় পটকা তৈরি হয়। সরকারি অনুমোদনে কারখানাগুলিতে গ্রীন ক্র্যাকার তৈরি হবে। অনেকেই চাকরি করেন এমন বাজি কারখানায়। তাদের জীবনের ঝুঁকি আছে। সংসার চালানোর জন্য এই ঝুঁকির কাজ তারা বেছে নিয়েছেন। এখানেও এমন বেআইনি কারখানায় যে করেছিল সে নিজেও মারা গেল এতগুলো লোককেও মারলো।"

গণশক্তি ডিজিটালে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এই বিষয়গুলিই সবার আগে তুলে ধরা হয়। বাজি প্রস্তুতকারকদের সংগঠন উৎসব সমন্বয় কমিটির আহ্বায়ক গোবিন্দ চক্রবর্তী জানান, বাজি হাব তৈরির দাবিতে মুখ্যমন্ত্রীকে একাধিকবার চিঠি দেওয়া হয়। কিন্তু সেই চিঠিগুলির প্রাপ্তি স্বীকারটুকু করা হয়নি সরকারের তরফে। এখন পরিস্থিতির চাপে সেই কথাই বলতে হচ্ছে মমতা ব্যানার্জিকে। কিন্তু প্রশাসনিক দীর্ঘসূত্রিতার ফলে প্রাণ হারিয়েছেন সাধারণ মানুষ।  

প্রসঙ্গত, শনিবারই খাদিকুল থেকে পশ্চিম মেদিনীপুরের শালবনিতে যান মমতা ব্যানার্জি। শালবনিতে বামফ্রন্ট সরকার এশিয়ার বৃহত্তম ইস্পাত কারখানা তৈরির চেষ্টা করেছিল। কয়েক লক্ষ মানুষের কর্ম সংস্থান হওয়ার কথা ছিল সেখানে মাওবাদীদের সঙ্গী করে সেই প্রকল্প ভেস্তে দিয়েছিলেন মমতা ব্যানার্জি। আর এখন বাজি কারখানাকেও কর্মসংস্থানের আকড় বলতে হচ্ছে মুখ্যমন্ত্রীকে। 

নিহতদের পরিবারের লোককে মুখ্যমন্ত্রী পরামর্শ দেন। কি বললেন তিনি ? "পরিবারের যারা মারা গেছে তাদের জন্য দুঃখ তো হবেই। দুর্বল না হয়ে লড়াই করে এগিয়ে যেতে হয়।"

মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন ‘‘এই ঘটনা থেকে আমাদের চোখ খুলে গিয়েছে। আগামী দু’মাসের মধ্যে রিপোর্ট আসবে। অবৈধ বাজি কারখানায় কাজ করে জীবন নষ্ট যেন না হয়। শুধুমাত্র গ্রিন ফায়ার ক্র্যাকারের ক্লাস্টার তৈরি হবে ফাঁকা জায়গায়। তাতে চাকরিটা বাঁচবে। এমন দুর্ঘটনাও হবে না। মুখ্য সচিবের নেতৃত্বে একটি টিম গঠন করছি, তারা আমাকে দু মাসের মধ্যে রিপোর্ট দেবে।"

শনিবার খাদিকুলে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘আমি এখানে জনসভা করতে আসিনি। তবে একটু আগেই আসা উচিত ছিল। কিন্তু কয়েক দিন আকাশ মেঘলা ছিল। তাই পরিস্থিতি আমায় অ্যালাউ করেনি। তবে আজ সকালেও যখন বৃষ্টি হচ্ছে আমরা রিস্ক নিয়ে বেরিয়ে আসছি। কারণ, আমাকে আসতেই হবে এক বার। আমি আপনাদের সকলের কাছে মাথা নত করে এই ঘটনার জন্য ক্ষমা চাইছি।’’

এর পর প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানিয়ে মমতা বলেন, ‘‘নিহত এবং আহতদের পরিবারের দুঃখ কখনও শেষ হয় না। তবু লড়াই করতে হবে। এটা আমার হাতে ছিল না, আপনার হাতেও ছিল না। কিন্তু অবৈধ বাজি তৈরি করা ঠিক নয়। যিনি এ সব তৈরি করতেন তিনিও মারা গিয়েছেন। তাঁর পরিবারের দু’জনকে ইতিমধ্যে গ্রেফতার করা হয়েছে।’’ এর পর ভানু বাগের প্রসঙ্গে মমতা বলেন, ‘‘কটকে একটি নার্সিংহোমে নাম বদল করে ভর্তি ছিলেন। কিন্তু আমাদের পুলিশ সেখানে পৌঁছে গিয়েছিল। তাঁকে পুলিশ গ্রেফতারও করেছিল। দুর্ভাগ্যের ব্যাপার তিনি কিছু বলার আগে মৃত্যু হয় তাঁর।’’

খাদিকুলকাণ্ডের পর এগরা থানার ওসি মৌসম চক্রবর্তীর বদলির ঘটনা উল্লেখ করে প্রশাসনিক গলদের কথাও স্বীকার করে নিয়েছেন পুলিশমন্ত্রী মমতা। তিনি বলেন, ‘‘এখানেও নতুন ওসি এসেছেন। আগে যিনি ছিলেন, তাঁকে বলা সত্ত্বেও তিনি অ্যাকশন নেননি বলে শুনেছি। সঠিক সময়ে ইন্টেলিজেন্স যদি কাজ করত, তা হলে এমন জিনিস ঘটত না।’’

মুখ্যমন্ত্রী এলেন ক্ষতিপূরণ দিলেন। দিলেন হোম গার্ডের একটি চাকরির নিয়োগপত্র। যারা পেলেন তারা কি বলছেন ? তাদের কথায় "পরিবারের লোক তো চলে গিয়েছে। তাকে আর ফিরে পাবোনা মুখ্যমন্ত্রী সাহায্য করেছেন আমরা নিয়েছি। পুলিশ প্রশাসন যদি আগেই ব্যবস্থা নিতো তাহলে এই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটত না। আমাদের পরিবারের লোকেদেরও মরতে হতো না। এই ঘটনার যেন সঠিক তদন্ত হয়। দোষী ব্যক্তিদের উপযুক্ত শাস্তি যেন হয়।"

 

Comments :0

Login to leave a comment