Mamata Banerjees

ছিলেন ব্রিগেডেও, সেই অর্জুন বিজেপি’র সাংসদ, মনে পড়ল মমতার!

রাজ্য

অনিন্দিতা দত্ত- শিলিগুড়ি

গত রবিবার, ১০ মার্চ, ব্রিগেডে তৃণমূলের সভায় মঞ্চে ছিলেন অর্জুন সিং। আর বুধবার, ১৩ মার্চ, দলের নেত্রী মমতা ব্যানার্জি তাঁকেই বললেন ‘বিজেপি’র সাংসদ’। এদিন শিলিগুড়িতে প্রশাসনিক ভবন উত্তরকন্যায় অর্জুনকে নিয়েই প্রশ্নের মুখে পড়েন মমতা। ব্রিগেডে তৃণমূলের প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেছিলেন মমতা ব্যানার্জি। বাদ পড়ে তৃণমূলের বিরুদ্ধে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা করছেন অর্জুন।
মমতা এদিন বলেন, ‘‘ও কিন্তু এখনও বিজেপি’র সাংসদ। বিজেপি’র সাংসদ পদ ছাড়েনি। বিজেপি’র টিকিটেই জয়ী হয়েছিল।’’ 
অর্জুন প্রসঙ্গেই মুখ্যমন্ত্রীর সংযোজন, ‘‘ওর স্বাধীনতা আছে। ও ঠিক করবে কোন দলে দাঁড়াবে। যারা দলের প্রতি দায়বদ্ধ ও অঙ্গীকারবদ্ধ থেকেছে, তাদের বিষয়ে সকলে মিলে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। যোগ্যতার নিরিখেই প্রার্থী বাছাই করা হয়েছে। ওই কেন্দ্রে আমাদের প্রার্থী পার্থ ভৌমিক। ও ভালো ক্যান্ডিডেট।’’
তথ্যের বিচারে মুখ্যমন্ত্রী ভুল বলেননি। অর্জুন সিং বারাকপুর কেন্দ্রে বিজেপি’র সাংসদ হিসেবেই নির্বাচিত হয়েছিলেন ২০১৯’র ভোটে। কিন্তু তার পরের প্রসঙ্গ এড়িয়েছেন মমতা। আনুষ্ঠানিকভাবে তৃণমূলে যোগ দেন অর্জুন সিং। দলের শীর্ষ নেতানেত্রীদের সঙ্গে মঞ্চে বসে সভার পর সভা করেছেন। ব্রিগেডের মঞ্চেও থেকেছেন। 
প্রশ্ন হলো, বিজেপি’র সাংসদ পদ না ছেড়েও তৃণমূলের নেতা হিসেবে থাকলেন কিভাবে। দলে এমন আর কতজনই বা আছে। কারণ, বিধানসভার পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটি (পিএসি)’র চেয়ারম্যান মুকুল রায়কে অনুষ্ঠান করে দলে টেনে নিয়েছে তৃণমূল। বিধানসভার খাতায় তিনিই বিজেপি’র সদস্য। বিরোধী দলের সদস্য হিসেবেই পিএসি’র প্রধানও!
মুখ্যমন্ত্রীর কথাতেই স্পষ্ট কে বিজেপি, কে তৃণমূল আলাদা করা যথেষ্ট কঠিন। বস্তুত মুকুল রায় সংবাদমাধ্যমে বলেও ফেলেছিলেন যা তৃণমূল তা-ই বিজেপি। কেন্দ্রে এবং রাজ্যের সরকারে আসীন দু’দলে অবাধ যাতায়াতের সেই ছবি ফের স্পষ্ট হয়েছে এদিন।  
২০১৯ সালে লোকসভা নির্বাচনে বারাকপুর থেকে টিকিট না পেয়ে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপি’তে যোগ দেন অর্জুন। বিজেপির টিকিটে জিতেই বারাকপুর থেকে সাংসদ হন। তৃণমূল ছেড়ে বারাকপুর কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থী হওয়ার পরেই অর্জুনকে অপরাধী হিসাবে নতুন করে আবিষ্কার করে রাজ্য প্রশাসন! তাঁর বিরুদ্ধে একুশটি মামলা দায়ের করা হয়। ২০২২ সালে আবার তৃণমূলেই ফিরে আসেন অর্জুন সিং। 
এবার বারাকপুরে তৃণমূলের প্রার্থী করা হয়েছে বিধায়ক পার্থ ভৌমিককে। তারপর থেকেই ভিন্ন সুর অর্জুনের। তিনি বলেছেন যে তৃণমূলে আসা তাঁর ভুল হয়েছে। তাঁর অফিস থেকে মমতা ব্যানার্জি ও অভিষেকর ছবি সরিয়ে রাখা হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর ছবি। 
এমন ভোলবদলের আরেক নজির মুকুল রায়। তৃণমূলে মমতার পরই ‘নম্বর টু’ বলে পরিচিত ছিলেন। সেই মুকুল যোগ দেন বিজেপি’তে। তার আগে তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতি যুক্ত থাকার অভিযোগ ওঠে। 
২০১৭ সালের ৩ নভেম্বর দিল্লিতে কৈলাস বিজয়বর্গীয়, রবিশংকর প্রসাদের সঙ্গে সাংবাদিক বৈঠক করে আনুষ্ঠানিকভাবে বিজেপি-তে যোগ দিয়েছিলেন মুকুল রায়। সে সময়ে বিজেপি’র রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেছিলেন, ‘‘যেদিন থেকে তৃণমূলের জন্ম হয়েছে সেদিন থেকেই মুকুল রায় বিজেপি-র সঙ্গে তৃণমূলের হয়ে সম্পর্ক রেখে চলেছেন।’’ 
২০২১ সালে কৃষ্ণনগর বিধানসভা থেকে বিজেপি’র টিকিটে মুকুল রায় জয়ী হন। এরপরই তিনি তৃণমূলে যোগ দেন। 
এদিন ভাই স্বপন (বাবুন) ব্যানার্জি সংক্রান্ত প্রশ্নে সরোষে জবাব দেন মমতা। বাবুন হাওড়ায় তৃণমূলের প্রার্থী প্রসূন ব্যানার্জির সমালোচনা করেন সংবাদাধ্যমে। মমতা প্রতিক্রিয়ায় বাবুন প্রসঙ্গে বলেন, প্রত্যেকটি ইলেকশনেই অশান্তি করে। কিছু কিছু মানুষ আছে যারা কাউন্সিলার, এমএলএ, এমপি সব ভোটে দাঁড়াতে চায়। কিন্তু আমি পরিবারতন্ত্র করি না। আমি মানুষতন্ত্র করি।’’ তিনি বলেন, ‘‘বাবুনকে আমাদের পরিবারের কোন সদস্য হিসেবে মনে করি না। আজ থেকে বাবুনের সাথে সমস্ত সম্পর্ক শেষ।’’

Comments :0

Login to leave a comment